তিন দিনের সহিংসতা

সরকারি হিসাবে নিহত ১৭ জন, বেশির ভাগই সাধারণ মানুষ

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের বিরোধিতাকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ, সংঘাত ও সহিংসতায় সরকারি হিসাবে মোট ১৭ জন মারা গেছেন। যাঁদের বড় অংশই সাধারণ মানুষ। এঁদের মধ্যে ১৩ জন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এবং ৪ জন চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে নিহত হন। সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী, এঁরা ২৬ থেকে ২৮ মার্চ ‘হেফাজতের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের’ সময় সংঘর্ষে মারা গেছেন।

অপরদিকে হেফাজত দাবি করছে, এই সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৫ জন মারা গেছেন। তাঁরা সবাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে মারা গেছেন। হেফাজত ১৫ জনের নামের তালিকা দিয়ে বলেছে, এঁদের বেশির ভাগ সাধারণ মানুষ।

ঢাকার বায়তুল মোকাররম এলাকায় ২৬ মার্চ জুমার নামাজের পর মোদির সফরবিরোধী বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের জেরে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে মাদ্রাসার ছাত্ররা মিছিল বের করে। তারা থানায় হামলা চালালে সংঘর্ষ বাধে। সেখানে গুলিতে চারজনের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে তার জেরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিক্ষোভ করে মাদ্রাসার ছাত্ররা। তারা রেলস্টেশনসহ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এরপর টানা তিন দিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সহিংসতা হয়।

সরকারি হিসাবে, এসব সহিংসতায় প্রায় ৭৭ কোটি টাকার সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যার মধ্যে ৭২ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে থানায় মামলা হয়েছে। তবে প্রাণহানির ঘটনা নিয়ে স্থানীয় পুলিশ স্পষ্ট করে কিছু বলছে না। বিশেষ করে কাদের গুলিতে কারা নিহত হলো, এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো তথ্য গণমাধ্যমকে দেয়নি। এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আনিসুর রহমান গত রোববার প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘মৃত্যুর সংখ্যাটি এখন বলতে চাইছি না। আপনারা খোঁজ নিন।’

তবে রোববার জাতীয় সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, এই তিন দিনে সহিংসতায় মোট ১৭ জন মারা গেছেন।

জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রথম আলোকে বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চট্টগ্রামের জেলা পুলিশ ও জেলা বিশেষ শাখা (ডিএসবি) থেকে যে তথ্য এসেছে, তা ধরেই এই তালিকা করা হয়েছে। এঁদের সবারই মৃত্যু হয়েছে সংঘর্ষে।

এর আগে গত ৩০ মার্চ সংবাদ সম্মেলন করে এবং ২ এপ্রিল বিক্ষোভ সমাবেশে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দারুল আরকান ইসলামিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সাজিদুর রহমান বলেছেন, তিন দিনে সেখানে পুলিশ ও বিজিবির গুলিতে ১৫ জন মারা গেছেন। তাঁদের নাম-ঠিকানাসহ তালিকা প্রকাশ করে তিনি বলেন, যাঁরা মারা গেছেন, বেশির ভাগই সাধারণ মানুষ। সাধারণ মানুষও তাঁদের কর্মসূচির সঙ্গে একাত্ম আছেন, এটা তার প্রমাণ বলে তিনি দাবি করেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ‘ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপে লিপ্ত হেফাজতের মৃত্যুবরণকারীদের নামের তালিকা’ অনুযায়ী হাটহাজারীতে ৪ জন ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৩ জন মারা গেছেন।

এর মধ্যে ২৬ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর পুলিশ ফাঁড়ির সামনে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে নিহত হন মো. আশিক (২০), যিনি পেশায় রাজমিস্ত্রি। ২৭ মার্চ নিহত হন ৭ জন। তাঁরা হলেন প্লাস্টিক কারখানার শ্রমিক বাদল (২৮), কাঁচামালের ব্যবসায়ী কাউছার (৩০), শ্রমিক নুরুল আমিন (২২), সিএনজিচালক মো. আলম (৪০) ও সুজন (২০) এবং হাফেজ মো. জোবায়ের (১৪) ও জামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসার ছাত্র মোহাম্মদ হোসাইন (২২)। এঁদের মধ্যে মোহাম্মদ হোসাইন কালীবাড়ি মোড়ে, বাকি ৬ জন কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের নন্দনপুরে নিহত হন।

২৮ মার্চ নিহত হন পাঁচজন। তাঁদের মধ্যে চারজন বিশ্বরোড মোড়ে এবং একজন কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে নন্দনপুরে মারা যান। নিহত ব্যক্তিরা হলেন সরাইল পাঠানপাড়া হাফিজিয়া মাদ্রাসার প্রাক্তন ছাত্র মো. আলামিন (১৯), রিকশাচালক লিটন (৩০), শ্রমিক কামালউদ্দীন (৩২), তাবলিগ জামাতের কালন মিয়া (৪০) ও কাপড়ের দোকানের কর্মচারী রাতিম (২২)।

অন্যদিকে হাটহাজারীতে চারজন নিহত হয়েছেন ২৬ মার্চ। তাঁরা হলেন হাটহাজারী মাদ্রাসার নাসির উল্লাহ (২২), রবিউল ইসলাম (২২) ও কাজী মিরাজুল ইসলাম (২২) এবং দরজি দোকানি ওয়াহিদুল ইসলাম (১৮)।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘২৬ থেকে ২৮ মার্চ দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ও হামলার ঘটনায় প্রায় ১০০ কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। সব প্রতিবেদন আমাদের হাতে এসেছে। আমরা কাউকে ছাড়ব না। প্রত্যেক অন্যায়ের বিচার হবে।’