সম্পত্তিতে হিন্দু বিধবা নারীর অধিকার রয়েছে

হাইকোর্ট ১৯৩৭ সালের আইনের ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

  • ১৯৩৭ সালের আইনটি ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ গ্রহণ করে।

  • হিন্দু বিধবা নারীর কৃষি-অকৃষি উভয় প্রকার সম্পত্তিতে অধিকার থাকবে বলে হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ।

হাইকোর্ট ভবন

হিন্দু উইমেন্স রাইটস টু প্রোপার্টি অ্যাক্ট (১৯৩৭ সালের) বাংলাদেশে প্রযোজ্য বলে এক রায়ে উল্লেখ করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, আইনে কোনো সুনির্দিষ্ট সম্পত্তির কথা নেই। ‘সম্পত্তি’ শব্দের অর্থ সব সম্পত্তি যেখানে স্থাবর বা অস্থাবর, বসতভিটা, কৃষিভূমি, নগদ টাকা বা অন্য কোনো ধরনের সম্পত্তি। কৃষিজমি ও বসতভিটার মধ্যে পার্থক্য করার সুযোগ নেই এবং এ ধরনের সম্পত্তি বিধবার বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয়।

খুলনার হিন্দু পরিবারের সম্পত্তি নিয়ে করা এক আবেদনের (রিভিশন) শুনানি শেষে গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর বিচারপতি মো. মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরীর একক হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রায় দেন। ওই আবেদন খারিজ (রুল ডিসচার্জ) করে হাইকোর্টের দেওয়া ২২ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় গত সেপ্টেম্বর মাসে প্রকাশিত হয়।

সংশ্লিষ্ট আইনজীবীর তথ্যমতে, খুলনার রাজবিহারী মণ্ডলের দুই ছেলে। তাঁরা হলেন জ্যোতিন্দ্রনাথ মণ্ডল ও অভিমন্যু মণ্ডল। অভিমন্যু মণ্ডল ১৯৫৮ সালে মারা যান। এ অবস্থায় মৃত ভাইয়ের স্ত্রী (গৌরী দাসী) কৃষিজমি পাবেন না, শুধু বসতভিটা থেকে অর্ধেক পাবেন—এমন দাবি নিয়ে ১৯৮৩ সালে নিম্ন আদালতে মামলা করেন জ্যোতিন্দ্রনাথ। তবে মামলায় পক্ষ যথাযথভাবে না করায় ১৯৯৬ সালে তা খারিজ করে রায় দেন আদালত। তবে গৌরীর কৃষিজমির সম্পত্তি পাবেন না বলে পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে খুলনার যুগ্ম জেলা জজ আদালতে আপিল করেন জ্যোতিন্দ্রনাথ। আদালত ২০০৪ সালে ৭ মার্চ রায় দেন। রায়ে বসতভিটা ও কৃষিজমিতে গৌরী দাসীর অধিকার থাকবে বলা হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৪ সালে হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করেন জ্যোতিন্দ্রনাথসহ অন্যরা। রিভিশন আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রায় দেন।

হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়, রাজবিহারী মণ্ডলের আগে তাঁর পুত্র অভিমন্যু মারা যান। গৌরী দাসী অভিমন্যুর বিধবা স্ত্রী। বিবাদী গৌরী শুধু বসতভিটার উত্তরাধিকারী এবং তাঁকে কৃষিজমি থেকে বঞ্চিত করার কারণ দেখা যাচ্ছে না। শ্বশুর মারা যাওয়ার পর তাঁর রেখে যাওয়া বসতভিটায় বাস করেছিলেন গৌরী এবং আপাতদৃষ্টিতে জীবনধারণের জন্য শ্বশুরের কৃষিজমির ওপর নির্ভরশীল তিনি। এই মামলার বিবাদী গৌরী দাসীর ক্ষেত্রে হিন্দু আইনের দায়ভাগা পদ্ধতি প্রযোজ্য। ১৯৩৭ সালের আইনের ৩(১) ধারা অনুসারে, বাবার আগে মারা যাওয়া ছেলের মতোই তিনি (গৌরী) তাঁর শ্বশুরের রেখে যাওয়া সব সম্পত্তির উত্তরাধিকার হবেন।

আদালতে অ্যামিকাস কিউরি (আদালতে আইনি সহায়তাকারী হিসেবে) হিসেবে শুনানি করেন আইনজীবী উজ্জ্বল ভৌমিক। রিভিশন আবেদনের পক্ষে আইনজীবী এম এ জব্বার এবং গৌরী দাসীর পক্ষে আইনজীবী সৈয়দ নাফিউল ইসলাম শুনানিতে ছিলেন। উজ্জ্বল ভৌমিক বলেন, ১৯৩৭ সালের হিন্দু উইমেন্স রাইটস টু প্রোপার্টি অ্যাক্ট অনুসারে স্বামীর কৃষি-অকৃষি উভয় জমিতে বিধবা নারীর অধিকারের কথা আছে। তবে এর আগে প্রচলিত রীতি অনুযায়ী, ছেলে, ছেলের ছেলে এবং ছেলের ছেলের ছেলে থাকলে বিধবারা সম্পত্তি পেতেন না। আইনটি করার কারণ হচ্ছে, ছেলে তথা তিন পুরুষের সঙ্গে বিধবাদের সম্পত্তির সমান ভাগ দেওয়া। তিনি আরও বলেন, কৃষি সম্পত্তি বিষয়ে ১৯৩৭ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের করা ওই আইনের বৈধতা নিয়ে তৎকালীন ফেডারেল কোর্টে প্রশ্ন ওঠে। আইনটি কৃষিজমির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না বলে ১৯৪১ সালে ইন্ডিয়ান ফেডারেল কোর্ট অভিমত দেন। এই রায় এত দিন ধরে অনুসরণ করা হতো।