ব্লু ইকোনমি নিয়ে আলোচনা

সমুদ্র থেকে বছরে আড়াই লাখ কোটি টাকা আয় সম্ভব

‘সাগরে ভাসাও রে ডিঙ্গা’—প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের এই গানের মধ্য দিয়ে যখন সমুদ্র অর্থনীতির (ব্লু ইকোনমি) সম্ভাবনাবিষয়ক ভিডিও চিত্রটি শেষ হয়, তখন মিলনায়তন ভরা দর্শক-শ্রোতা বঙ্গোপসাগরে অর্থনৈতিক কার্যক্রম দ্রুত শুরু করার বিষয়ে মনে মনে একাত্ম। গানটির গূঢ় অর্থ—সমুদ্র থেকে কিছু পেতে হলে সমুদ্রে যেতে হবে।
গানটির এই গূঢ়ার্থের সূত্র ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক বদরূল ইমাম বললেন, বাংলাদেশের সমুদ্র বিজয়ের পর চার বছর পেরিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত কোনো অর্থনৈতিক কার্যক্রমই শুরু করা যায়নি। এমনকি তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বিদেশিদের অকৃষ্ট করার জন্য যে ‘মাল্টিক্লায়েন্ট সার্ভে’ চালানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, তাও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর্যায়ে বারবার আটকে যাচ্ছে। অথচ এই সময়ে ভারত ও মিয়ানমার বঙ্গোপসাগরে বিপুল জ্বালানি সম্পদের সন্ধান পেয়েছে। এভাবে ব্লু ইকোনমি এগিয়ে নেওয়া যাবে না।
ব্লু ইকোনমি নিয়ে এই আলোচনা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান সঙ্গে সঙ্গে বদরূল ইমামের বক্তব্য সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। মন্ত্রী বলেন, সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করতে কত বছর লেগেছে বলেন? পুরো পাকিস্তান আমল গেছে। স্বাধীন বাংলাদেশেরও ৪০ বছর কোনো সরকার এ বিষয়ে কথা বলেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্যোগ নেওয়ায় মাত্র চার বছর আগে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ হয়েছে। এই সময়টা খুব বেশি নয়।
মন্ত্রী বলেন, দ্রুত সমুদ্র সম্পদ আহরণে নামার যে মনোভাব (স্পিরিট), সেটা অবশ্যই ইতিবাচক। কিন্তু ইচ্ছা করলেই সবকিছু দ্রুত করে ফেলা যায় না। বাস্তবতা অতটা সহজ নয়। কিছু সমস্যা থাকে। সেগুলোর নিরসন করে এগোতে হয়। সরকার যথাযথভাবেই সেটা করছে। অনেক কাজই কেবল শুরু করতে হচ্ছে। অথচ যেতে হবে অনেক দূর। তাই একটু ধৈর্য ধরতে হবে।
গতকাল বুধবার সকালে রমনার পরমাণু শক্তি কেন্দ্রের মিলনায়তনে এ আলোচনার আয়োজন করে ‘ন্যাশনাল ওশেনোগ্রাফিক অ্যান্ড মেরিটাইম ইনস্টিটিউট’ বা নোয়ামি। এই প্রতিষ্ঠানের আজীবন সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সিরাজুর রহমান খান অনুষ্ঠানে একটি সমীক্ষাভিত্তিক বক্তব্য ও ভিডিও চিত্র উপস্থাপন করেন। এতে বলা হয়, সমুদ্র বিজয়ের ফলে বাংলাদেশ যে অঞ্চলের মালিকানা পেয়েছে, সেখানে অন্তত চারটি ক্ষেত্রে কার্যক্রম চালানো হলে ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিবছর প্রায় আড়াই লাখ কোটি মার্কিন ডলার উপার্জন করা সম্ভব। এই ক্ষেত্র চারটি হলো তেল-গ্যাস উত্তোলন, মৎস্য সম্পদ আহরণ, বন্দরের সুবিধা সম্প্রসারণ ও পর্যটন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম বলেন, সমুদ্রে যেতে হবে। যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। সমুদ্রে লাখ লাখ বর্গকিলোমিটার জায়গা পেয়েও কোনো লাভ নেই, যদি যাওয়া না হয়। তার চেয়ে গুলিস্তানে দুই কাঠা জায়গা পাওয়া ভালো। সেখানে অন্তত ব্যবসা করা যায়।
নোয়ামির চেয়ারম্যান নঈম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা অনুষ্ঠানে ব্লু ইকোনমি সেলের প্রধান গোলাম ফখরুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, জিএসবির সাবেক মহাপরিচালক খোরশেদ আলম, মহাকাশ বিজ্ঞান ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানের (স্পারসোর) সাবেক পরিচালক ওবায়দুল কাদের প্রমুখ বক্তব্য দেন। একজন বক্তা সমুদ্রসম্পদ আহরণে সময়সূচিভিত্তিক পরিকল্পনা করা দরকার বলে অভিমত দেন।