সাবেক পররাষ্ট্রসচিব মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, জার্মানির সঙ্গে বাংলাদেশের কৌশলগত সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ, সমরাস্ত্রের জন্য চীনের ওপর অতি নির্ভরশীলতা বাংলাদেশের জন্য ভালো নয়। কৌশলগত প্রেক্ষাপটকে গুরুত্ব দিয়ে জার্মানি থেকে সমরাস্ত্র সংগ্রহের বিষয়টিতে বাংলাদেশ মনোযোগ দিতে পারে। এ বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে নতুন সহযোগিতা প্রতিষ্ঠার সুযোগ রয়েছে।
রাজধানীর একটি হোটেলে সোমবার বাংলাদেশ ও জার্মানির সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে আয়োজিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে তিনি একথা বলেন।
জার্মান গবেষণা সংস্থা ফ্রেডরিখ ইবার্ট স্টিফটুং (এফইএস) ও সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
জার্মানির রাষ্ট্রদূত আখিম টোস্টার বলেন, রাজনীতিবিদদের কারণেই এই দেশ অনেক উন্নতি করেছে। তাঁরা সঠিক নীতি বাস্তবায়ন করেছেন বলেই বাংলাদেশ গত ৫০ বছরে এই উন্নতি করতে পেরেছে। বাংলাদেশ যাতে শিখরে পৌঁছাতে পারে সে জন্য রাজনীতিবিদদের সামনের দিকে তাকাতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে জার্মানি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়তে চায় বলেই জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় যে ১০টি দেশের সঙ্গে সহযোগিতা প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হয়েছে, বাংলাদেশ তার মধে৵ অন্যতম।
বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াটলি বলেন, ‘আমাদের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন পর্যায়ে উন্নীত হচ্ছে। এ বছর প্রথমবারের মতো দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে রাজনৈতিক বৈঠক শুরু হচ্ছে।’
জার্মানি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশি পণ্যের সবচেয়ে বড় গন্তব্যস্থল উল্লেখ করে তৌহিদ হোসেন তাঁর প্রবন্ধে বলেন, ভবিষ্যতে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উন্নীত হলে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা (জিএসপি) পাওয়া যাবে না। পরবর্তীকালে বাণিজ্য সুবিধা পাওয়ার স্বার্থে সুশাসন, মত প্রকাশের স্বাধীনতার মতো বিষয়গুলোতে উন্নতি করাটা জরুরি।
রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে চীনের ভূমিকার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তৌহিদ হোসেন বলেন, মিয়ানমার তার ভূখণ্ডের ভেতর দিয়ে চীনকে বঙ্গোপসাগরে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে। ফলে সেখান দিয়ে চীন পর্যন্ত জ্বালানি পরিবহনের দুটি পাইপলাইনের নির্মাণকাজ এগিয়ে চলেছে। মিয়ানমারও চীনের কাছ থেকে সামরিক সরঞ্জাম সংগ্রহ করে। তাই সমরাস্ত্রের বিষয়ে বাংলাদেশের বিকল্প খোঁজা উচিত। বিকল্প হতে পারে জার্মানি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (পশ্চিম ইউরোপ অণু বিভাগ) ফাইয়াজ মুর্শিদ কাজী প্যানেল আলোচনায় বলেন, ‘ব্রেক্সিটের আগে ইইউর সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যকে প্রাধান্য দেওয়া হতো। কিন্তু ব্রেক্সিটের পর তা জার্মানির দিকে চলে গেছে। জার্মানি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সামনের দিনগুলোতে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও গভীর হবে।’
সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, বাংলাদেশ ও জার্মানির মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক আমাদের কাছে সব সময়ই বিশেষ গুরুত্ব বহন করে আসছে।
অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচনায় আরও অংশ নেন সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের উপদেষ্টা নাসিম ফেরদৌস, বাংলাদেশ-জার্মান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুল মুক্তাদির এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা, লেখক ও গবেষক রুবাইয়াত হোসেন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান।