সমবায়ী কর্মকাণ্ডে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সমবায় দিবস উদ্‌যাপন ও জাতীয় সমবায় পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র, ঢাকা, ২ নভেম্বর। ছবি: পিআইডি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সমবায় দিবস উদ্‌যাপন ও জাতীয় সমবায় পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র, ঢাকা, ২ নভেম্বর। ছবি: পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমবায়ের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে যুগোপযোগী সমবায় ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার জন্য আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ৪৮তম জাতীয় সমবায় দিবস-২০১৯ উদ্‌যাপন এবং জাতীয় সমবায় পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বর্তমান যুগে ডিজিটাল বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা আধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলে সমবায়ের মাধ্যমেই আমাদের দেশের উন্নয়ন করতে পারব।’ আর এ জন্য দক্ষ সমবায়ীদের প্রশিক্ষণের ওপরও তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সমবায়ের কাজে যারা দক্ষ, তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে এবং সৎভাবে তারা যেন কাজ করে, সে বিষয়ে আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে।’ তাঁর সরকার ‘উন্নত জাতের গাভি পালনের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত মহিলাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এর মাধ্যমে মহিলাদের সুদবিহীন, জামানতবিহীন, দীর্ঘমেয়াদি ১ লাখ ২০ হাজার টাকা করে ঋণ দেওয়া হচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সমবায় দিবস উদ্‌যাপন ও জাতীয় সমবায় পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে সমবায়ীদের স্থাপিত বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র, ঢাকা, ২ নভেম্বর। ছবি: পিআইডি

সমবায় ভবন নির্মাণ এবং সমবায় অধিদপ্তরের সদর কার্যালয় থেকে উপজেলা পর্যন্ত সব কার্যালয়কে আইসিটি নেটওয়ার্কের আওতায় এনে অনলাইনে কেনাবেচার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন এবং এই অনুষ্ঠানের শুরুতেই অনলাইনে পণ্য কেনাবেচা ও বাজারজাতকরণের বিষয়টির উদ্বোধন করেন বলেও জানান। অনুষ্ঠানের শুরুতে সমবায় অধিদপ্তরের কর্মকাণ্ড নিয়ে একটি ভিডিওচিত্র পরিবেশিত হয়। চলতি বছর দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধুর দর্শন, সমবায়ে উন্নয়ন’। অনুষ্ঠানে ২০১৮ সালের জাতীয় সমবায় পুরস্কার বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। আলোচনা পর্বের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী সমবায়ীদের জন্য অনলাইনে পণ্য কেনাবেচা ও বাজারজাতকরণের উদ্বোধন করেন এবং অনুষ্ঠানস্থলে সমবায়ীদের স্থাপিত বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন।

সমবায় অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশের কৃষি, মৎস্য চাষ, পশু পালন, দুগ্ধ উৎপাদন, পরিবহন, ক্ষুদ্র ব্যবসা, আবাসন, পুঁজি গঠন ও নারীর ক্ষমতায়নে সমবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বর্তমানে দেশে প্রায় ১ লাখ ৭৪ হাজার সমবায় সমিতি রয়েছে; যার সদস্যসংখ্যা ১ কোটি ৯ লাখ। এসব সমবায় সমিতির মোট কার্যকরী মূলধনের পরিমাণ ১৩ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। সমবায়ের মাধ্যমে সৃষ্ট কর্মসংস্থানের সংখ্যা প্রায় ৯ লাখ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সমবায় দিবস উদ্‌যাপন ও জাতীয় সমবায় পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে সমবায়ীদের স্থাপিত বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র, ঢাকা, ২ নভেম্বর। ছবি: পিআইডি

দেশের বিদ্যমান সমবায় আইনকে যুগোপযোগীকরণ এবং সমবায় ব্যাংককে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার ওপরও ভাষণে গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, পল্লি উন্নয়ন ও সমবায়ভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) কর্তৃক পাঁচটি উন্নয়ন প্রকল্পে গ্রামের দরিদ্র ও বিত্তহীন জনগোষ্ঠীকে সংগঠিত করে প্রশিক্ষণ, উপকরণ সরবরাহ ও ঋণ সহায়তা প্রদান করে স্বাবলম্বী করে তোলা হচ্ছে। ক্ষুদ্র কৃষকদের উন্নয়নে ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে তিনটি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বর্তমানে ১৭৪টি উপজেলায় বিস্তৃত হয়েছে। সেই সঙ্গে পল্লি অবকাঠামো সুবিধা ও দরিদ্র মানুষের জীবনমান উন্নয়নে পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনের (পিডিবিএফ) মাধ্যমে সরকার ১০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। ফলে গ্রামে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে এবং গ্রামের রাস্তায় সৌরবিদ্যুৎ-সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। তিনি বলেন, যেখানে বিদ্যুতের গ্রিডলাইন নেই, সেখানে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং দেশের শতকরা ৯৩ জন মানুষ এখন বিদ্যুৎ-সুবিধার আওতায় এসেছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া নৌপথ, সড়কপথ, রেলপথ চালু করা ও উন্নত করা এবং বিদ্যুতের ব্যবস্থা করার ফলে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ছে এবং মানুষের জীবনমান উন্নত হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার কৌশল ছিল সমবায়।’ জাতির পিতার আদর্শকে ধারণ করে তৃণমূল পর্যন্ত উন্নয়নের ছোঁয়া পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে দেশের সব নাগরিকের জন্য সমান নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করাই তাঁর সরকারের লক্ষ্য বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বর্তমান সরকার সমাজের অনগ্রসর ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নকে প্রাধান্য দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সমবায়ের মাধ্যমে গারো সম্প্রদায় এবং সমতলে বসবাসকারী ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীভুক্ত জনগণের জীবনমান উন্নয়নে পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।