উপজেলা পরিষদ নির্বাচন

সভাপতি-সম্পাদক মুখোমুখি, বিভক্ত নেতা-কর্মীরা

>

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে উপজেলা কমিটির এই দুই নেতা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এতে নেতা–কর্মীরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছেন।

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে এবার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির বিরুদ্ধে লড়ছেন সাধারণ সম্পাদক। এর মধ্যে সভাপতি আওয়ামী মনোনীত এবং সাধারণ সম্পাদক বিদ্রোহী প্রার্থী। দুই নেতা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় নেতা-কর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এতে নির্বাচনী মাঠে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে।   

ফুলবাড়ী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির আতাউর রহমান শেখকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তাঁর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী সরকার। তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের ভোটে মনোনয়নের দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন গোলাম রব্বানী। কিন্তু কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয় আতাউর রহমানকে। এই ক্ষোভ থেকেই সাধারণ সম্পাদক চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন বলে নেতা-কর্মীদের সূত্রে জানা গেছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ফুলবাড়ী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য গত ২৮ জানুয়ারি উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য তিনজন আবেদন করেছিলেন। তাঁরা হলেন আতাউর রহমান শেখ, গোলাম রব্বানী সরকার ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পদক রতন পোদ্দার। সভায় উপস্থিত ছিলেন ৬টি ইউনিয়নের ১৭৯ জন নেতা। তাঁরা ভোট দেন। আবেদনকারী প্রার্থীদের মধ্যে গোলাম রব্বানী ১০৯, আতাউর রহমান শেখ ৬৩ এবং রতন পোদ্দার ৭ ভোট পান। পরে কেন্দ্রে মনোনয়নের জন্য তিনজনের নাম পাঠানো হয়। তালিকায় এক নম্বরে ছিল গোলাম রব্বানী সরকার। কিন্তু কেন্দ্র জনপ্রিয়তা ও গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আতাউর রহমান শেখকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করে। তিনি নৌকা মার্কা নিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন।

বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী সরকারও তাঁর কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে গণসংযোগ করছেন। তাঁর মার্কা মোটরসাইকেল। তিনি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১০ মার্চ প্রথম ধাপে এই উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এখানে চেয়ারম্যান পদে তিনজন মনোনয়নপত্র রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দিয়েছিলেন। পরে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ময়নুল হক মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। ফলে চেয়ারম্যান পদে এখন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুজনই রয়ে গেলেন।

দুই নেতার প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাছেন আলী বলেন, ‘আমরা মহাবিপদে পড়েছি। কার পক্ষে কথা বলি। দুজনেই দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এতে নেতা-কর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।’

ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রতন পোদ্দার বলেন, ‘দল যাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে, আমরা তাঁর পক্ষে কাজ করছি। প্রতিপক্ষ আমাদের নেতা-কর্মীদের হুমকি দিচ্ছে। যত সমস্যা হোক, আমরা নৌকা মার্কার পক্ষে আছি।’

গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় ফুলবাড়ী উপজেলার গঙ্গারহাটে গিয়ে দেখা যায়, নৌকা মার্কার পক্ষে অটোরিকশায় শিক্ষার্থীরা মিছিল করছে। মানুষের মধ্যে ভোট নিয়ে তেমন আগ্রহ নেই। দুই প্রার্থীর পোস্টার রশি দিয়ে ঝুলিয়ে রেখেছে।

গঙ্গারহাটের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন বলেন, দুই প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকেরা মানুষের কাছে ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন। তবে মানুষের মধ্যে আগ্রহ কম। আবার একেই দলের দুজন দাঁড়ানোয় বিরোধীরা বলাবলি করছে, এবার খেলা জমছে। দুই দলের সমর্থকের মধ্যে রেষারেষিও হচ্ছে।

এই বিষয়ে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আতাউর রহমান শেখ বলেন, ‘দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে, আমি কাজ করে যাচ্ছি। সাধারণ সম্পাদকের ব্যাপারে কেন্দ্র জানে। তারাই সিদ্ধান্ত নেবে।’

দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে প্রার্থী হওয়ার কারণ জানতে চাইলে গোলাম রব্বানী সরকার বলেন, ‘দীর্ঘদিন দলের জন্য অনেক কিছু করেছি। এলাকার উন্নয়নে কাজ করেছি। ভোটাররা আমাকে ভালোবাসেন বলে দাঁড়িয়েছি।’

এই বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের আমিনুল ইসলাম মঞ্জু মণ্ডল বলেন, ‘নেতা–কর্মীরা আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর পক্ষেই আছেন। আর সাধারণ সম্পাদকের প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে পরে দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’