ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান হত্যা মামলায় সব আসামির দৃষ্টান্তমূলক সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। আইনের ধারা উল্লেখ করে নুসরাতের পরিবারকে প্রত্যেক আসামি যেন সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ দেন, এমন দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা। যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের চতুর্থ দিন গতকাল সোমবার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা এই দাবি জানান।
গতকাল রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হলে আসামিপক্ষের আইনজীবী ফরিদ উদ্দিন খান মামলার প্রধান আসামি ও মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদদৌলার পক্ষে আদালতে যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন। আজ মঙ্গলবারও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তি উপস্থাপনের কথা রয়েছে।
ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে গতকাল নুসরাত হত্যা মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের চতুর্থ দিনে রাষ্ট্রপক্ষকে আইনি সহায়তা দেন ফেনী আইনজীবী সমিতির পক্ষে নিয়োগ করা জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আকরামুজ্জামান ও বাদীপক্ষের আইনজীবী এম শাহজাহান সাজু। এ সময় আদালতে তাঁদের সহায়তা করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) হাফেজ আহম্মদ। তাঁরা আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সমর্থ হয়েছেন বলেও আদালতে দাবি করেন।
আদালতে আইনজীবী আকরামুজ্জামান গতকাল আইনের বিভিন্ন বিধিবিধান তুলে ধরেন। তিনি আদালতে বলেন, এটি একটি পরিকল্পিত ও মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড। আসামিরা এটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ও ধামাচাপা দিতে পরিকল্পিতভাবে আত্মহত্যা বলে প্রচারণা চালান। আসামিদের সেই অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। গণমাধ্যমের কল্যাণে আসল সত্যটা সারা দেশের মানুষ জেনে গেছে। তিনি দাবি করেন, আদালত ও রাষ্ট্রপক্ষ এ সত্য প্রমাণ করতে সমর্থ হয়েছে।
আকরামুজ্জামান বলেন, ‘এ মামলার রায়ের দিকে সারা দেশের মানুষ তাকিয়ে আছে। সুষ্ঠু ও ন্যায়বিচার দেশবাসীর প্রত্যাশা। আমরা আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।’
বাদীপক্ষের আইনজীবী এম শাহজাহান সাজু বলেন, আসামিরা যদি স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দেন, তাহলে তাঁদের জবানবন্দির ভিত্তিতেই সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া যায়। তিনি বলেন, এটি আত্মহত্যা নয়, একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড।
এম শাহজাহান বলেন, চারজন আসামি রিমান্ড ছাড়াই স্বেচ্ছায় আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত ১৬ আসামির মধ্যে ১২ জন বিজ্ঞ বিচারিক হাকিম আদালতে স্বেচ্ছায়, সত্য ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।
এম শাহজাহান আদালতে বলেন, আসামি শাহাদাত হোসেন শামীম ও নুর উদ্দিন তাঁদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতেই বলেছেন, নুসরাত মামলা প্রত্যাহার করতে রাজি না হলে প্রয়োজনে তাঁকে আগুনে পুড়িয়ে ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে প্রচার করতে বলেছিলেন কারাবন্দি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা। মাদ্রাসার সহসভাপতি রুহুল আমিন ও কাউন্সিলর মাকসুদ আলম তাঁদের সব ধরনের সহযোগিতা করবেন বলে অধ্যক্ষ তাঁদের বলেছিলেন।