ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে কাছাকাছি বসে আছেন হাজারো মানুষ। কেউ কেউ তসবিহ পাঠ করছেন, কেউ-বা মশগুল দোয়া-দরুদ পড়তে। পথচারী, কর্মজীবী, ভাসমান, ছিন্নমূল থেকে শুরু করে সমাজের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরাও শামিল এখানে।
সুশৃঙ্খল পরিবেশ। চিৎকার, চেঁচামেচি নেই। ইফতারের সময় যত এগিয়ে আসে, মানববৃত্তের সংখ্যাও তত বাড়তে থাকে, আর সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে স্বেচ্ছাসেবকদের তৎপরতা। সারি বেঁধে তাঁরা বড় একটা ডালায় খাবার সংগ্রহ করে তা ছোট ছোট দলের মাঝখানটাতে রাখেন। আজান শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাজারো মানুষ একসঙ্গে মুখে তুললেন খাবার। বসে গেলেন স্বেচ্ছাসেবকেরাও। এ এক অনিন্দ্যসুন্দর দৃশ্য!
প্রতিবছরের মতো এবারও রোজাদারদের জন্য ইফতারের আয়োজন করেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। এ আয়োজনে এ বছর রোজার প্রথম দিনেই বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ইফতার করেন ২ হাজার মানুষ। গতকাল শুক্রবার রমজানের চতুর্থ দিনের সন্ধ্যায় ছিল সর্বোচ্চসংখ্যক উপস্থিতি। শুক্রবারে লোকসমাগম বেশি হয়।
এক দশক ধরে প্রতি রমজানে চলে আসা এ আয়োজন সবার জন্য উন্মুক্ত। তাই সারা দিন রোজা রাখার পর মাগরিবের আজানের মুহূর্তে এখানে ধনী-গরিবের ভেদাভেদের দেয়ালটি ভেঙে যায়। ডাব বিক্রেতা ফরিদ মিয়ার পাশে এখানে নিঃসংকোচে বসে যান ফকিরাপুলের বহুতল ভবনের মালিক আবদুল কাদের। নারীদের জন্যও রয়েছে পৃথক স্থানে ইফতার করার ব্যবস্থা।
গতকাল দেখা গেল আসরের নামাজের পরই নানা শ্রেণির মানুষ এসে জড়ো হচ্ছেন ইফতারের জন্য। এসেছেন ঢাকার বাইরে থেকেও। মসজিদের খাদেম, ফাউন্ডেশনের কর্মী ও বায়তুল মোকাররম মার্কেটে সমিতির প্রতিনিধিরা ইফতারি বিলিবণ্টন করছেন। পাশের অস্থায়ী মঞ্চে চলছে ইফতার-পূর্ব কোরআন তিলাওয়াত, হাদিস বর্ণনা। এদিন বুখারি শরিফ থেকে আলোচনা করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক জুবাইর আহাম্মদ আল-আযহারী। পরে অনুষ্ঠিত হয় কোরআন তিলাওয়াত ও মোনাজাত।
প্রতিবছর ইফতারের সামগ্রী একই। শরবত, মুড়ি, ছোলা, পেঁয়াজি, খেজুর, জিলাপি, কলা আর শসা। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক মুহাম্মদ মহিউদ্দিন মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০০৯ সাল থেকে আমরা ইফতারের আয়োজন করছি। বছর বছর এখানে রোজাদারদের সংখ্যা বাড়ছে।’ তিনি আরও বলেন, এ বছর ২৬ লাখ টাকার বাজেট করা হয়েছে ইফতারের জন্য। তবে লোকসমাগম বেশি হলে বাজেট বাড়ানো হবে।
অনেকেই পারিবারিকভাবে বা বন্ধুবান্ধবসহ ইফতার করেন। ঢাকার নারিন্দা এলাকার বাসিন্দা হাসিবুর রহমান তাঁর ছোট ভাই মুয়াজকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। আলাপ করে জানা গেল, প্রতিবছরই রমজানে একটি শুক্রবারে তাঁরা এই মসজিদে জুমা, আসরের নামাজ পড়ে মাগরিব পর্যন্ত থেকে ইফতার করে বাড়ি ফেরেন। দুপুরে মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে এসেছিলেন জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘জুমা পড়ে এখানে ইফতারের আয়োজন হবে শুনে থেকে গেলাম। অনেক মানুষের সঙ্গে ইফতার করতে ভালোই লাগছে। তবে খাবারের মান ভালো হওয়া দরকার।’
ইফতারের পাশাপাশি ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ চত্বরে মাসব্যাপী ইসলামি বইমেলার আয়োজন করেছে। ডান পাশে আরেক জায়গায় দেখা গেল ইসলামি ক্যালিগ্রাফি, ধর্মীয় গ্রন্থ এবং ঐতিহাসিক নিদর্শনের ছবির পোস্টার প্রদর্শনী।