সন্দেহের বাইরে কিছু খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ

শারমিন হত্যা মামলায় তাঁর বন্ধু আবদুর রহমানকে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। গতকাল ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে। প্রথম আলো
শারমিন হত্যা মামলায় তাঁর বন্ধু আবদুর রহমানকে  রিমান্ডে নেয় পুলিশ। গতকাল ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে।  প্রথম আলো
রুবাইয়াত শারমিন। ফাইল ছবি

যে তিনটি ভবনের ফাঁকে রুবাইয়াত শারমিনের লাশ পড়ে ছিল, এর কোনোটির ছাদ থেকে কেউ তাঁকে ফেলে দিয়েছিল কি না, সেই প্রশ্নের উত্তর এখনো পুলিশের কাছে অজানা। এদিকে শনিবার রাতে আটক করা শারমিনের বন্ধুকে গতকাল রোববার এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। পরে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে চার দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ বলছে, আবদুর রহমান ওরফে সৈকত নামের ওই বন্ধুর সঙ্গে সম্প্রতি শারমিনের সম্পর্কের অবনতি হয়। এর জের ধরে সৈকত ও তাঁর সহযোগী অজ্ঞাতপরিচয় আসামিরা শারমিনকে হত্যা করে কোনো ভবনের ছাদ থেকে ফেলে দিতে পারেন বলে সন্দেহ করছে পুলিশ।

গত বুধবার রাতে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী এলাকা থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক তরুণীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরদিন রাতে স্বজনেরা রমনা থানায় লাশের ছবি দেখে শারমিনের (রুম্পা) পরিচয় শনাক্ত করেন। শারমিন রাজারবাগ পুলিশ লাইনস উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির সিদ্ধেশ্বরী ক্যাম্পাসে ইংরেজিতে স্নাতক করছিলেন। তাঁর বাবা রোকন উদ্দিন হবিগঞ্জের একটি পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক। সিদ্ধেশ্বরীর যে স্থান থেকে শারমিনের লাশ উদ্ধার করা হয়, সেখানে পাশাপাশি তিনটি ভবনের একটি ১২ তলা (আয়েশা শপিং কমপ্লেক্স)। এর চারতলা পর্যন্ত বাণিজ্যিক কার্যক্রম চলে। পঞ্চম তলা থেকে আবাসিক ফ্ল্যাট। পুলিশের ধারণা, আয়েশা শপিং কমপ্লেক্সের ছাদ থেকে শারমিনকে ফেলে দেওয়া হতে পারে।

লাশ উদ্ধারের পর প্রথম তিন দিন মামলাটির তদন্ত রমনা থানার পুলিশ এবং পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ একত্রে করেছে। গতকাল মামলাটির তদন্ত গোয়েন্দা বিভাগের রমনা অঞ্চলে হস্তান্তর করা হয়েছে। থানা-পুলিশের তদন্তের তত্ত্বাবধান করছিলেন পুলিশের রমনা অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার এস এম শামীম। গতকাল তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বাসায় মুঠোফোন ও জিনিসপত্র রেখে যাওয়ার পর লাশ উদ্ধারের আগের সাড়ে তিন ঘণ্টা শারমিন কোথায় ছিলেন, তখন কী ঘটেছিল, তা জানা যায়নি। তিনি ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন কি না, তা জানতেও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

গ্রেপ্তার করার আগে গত শুক্রবার রাতে আবদুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয়েছিল প্রথম আলোর। সেদিন তিনি বলেছিলেন, এ বছরের শুরুতে তিনি স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন। এরপর শারমিনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক হয়। এর স্থায়িত্ব ছিল আড়াই থেকে তিন মাস। তাঁর বাবা ও চাচার মৃত্যুর পর শারমিনকে বুঝিয়ে তিনি সম্পর্ক থেকে সরে আসতে শুরু করেন। এর মধ্যে স্টামফোর্ডে পড়াশোনা বন্ধ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে বিবিএতে পড়াশোনা শুরু করেন তিনি। ৪ ডিসেম্বর স্টামফোর্ডে এক বন্ধুর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যান তিনি। সেদিন শারমিনের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। শারমিন তাঁকে সম্পর্ক চালিয়ে যেতে বললেও তিনি রাজি হননি। বেলা সাড়ে তিনটা থেকে চারটার দিকে স্টামফোর্ড থেকে আসেন তিনি। এরপর কী হয়েছে, তা তাঁর জানা নেই।

ঘটনা তদন্তের সঙ্গে যুক্ত একটি সূত্র বলছে, সন্ধ্যার দিকে আবদুর রহমান সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় ছিলেন না, বিষয়টি প্রযুক্তির সহায়তায় নিশ্চিত হওয়া গেছে। যে গলির শেষ মাথায় শারমিনের লাশ পাওয়া গেছে, সেখানকার একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজে সন্ধ্যা ৬টা ৪১ মিনিটে এক নারীর অবয়ব দেখা গেছে। তবে সেটি শারমিনের কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

গোয়েন্দা বিভাগের রমনা অঞ্চলের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার শামসুল আরেফিন বলেন, শারমিনের বাসা থেকে ঘটনাস্থলের দিকে যাওয়ার পথের এবং ঘটনাস্থলের আশপাশের আরও কিছু সিসি ক্যামেরার ফুটেজ তাঁরা সংগ্রহ করেছেন।