সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেছেন, সরকার আদিবাসীদের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বলতে চাইছে। কিন্তু কে কার থেকে ক্ষুদ্র? পার্বত্য চট্টগ্রামে একসময় ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষেরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল, এখন তাদের ক্ষুদ্র করে ফেলা হচ্ছে। এভাবে আসলে এই জনগোষ্ঠীকে সত্তার সংকটে ফেলা রাখা হয়েছে।
সুলতানা কামাল বলেন, ‘রাষ্ট্র দেখছে না। আদিবাসীদের অবস্থান আছে, তাই স্বীকার করতে চাচ্ছে না। সংবিধানে তো উল্লেখই নেই। ভুল নাম দেওয়া হচ্ছে। সংবিধানে ভুল থাকতে পারে না। প্রতিবাদ করেই যাব।’
আজ শনিবার সকালে রাজধানীর সিবিসিবি সেন্টারে বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক আয়োজিত চতুর্থ জাতীয় আদিবাসী নারী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সুলতানা কামাল এ কথা বলেন। ‘আদিবাসী নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসুন’ শীর্ষক সম্মেলনে সুলতানা কামাল বলেন, ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নারীরা বহুমাত্রিক বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার।
সম্মেলনে উত্থাপিত ১২টি দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে সুলতানা কামাল নিজেদের মধ্যে বঞ্চনার অবসান ঘটানোর পাশাপাশি সামগ্রিক নারী আন্দোলনে অংশগ্রহণ এবং ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য নারীদের প্রতি আহ্বান জানান।
সম্মেলনের শুরুতে সবাই দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন। সম্মেলনের ঘোষক বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম, প্রধান অতিথি সুলতানা কামালসহ অন্য অতিথিরা প্রদীপ জ্বালিয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।
সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করে আয়শা খানম বলেন, আদিবাসীদের একবার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, কখনো ক্ষুদ্র জাতিসত্তা—বিভিন্ন নামে ডাকা হচ্ছে। একেক ভাষায় চিহ্নিত করা হচ্ছে। অর্থাৎ পরিচয়টাই ঠিক করা হচ্ছে না। তিনি নারীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং ব্যক্তিগত জীবনেও সমানাধিকার পাওয়ার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। একইভাবে নিজেদের ভেতর কোনো বিভেদ যাতে না থাকে, সে আহ্বান জানান। আন্দোলনকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে প্রধানমন্ত্রী, আইনমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে বিভিন্ন সুপারিশ, তা যদি হাজারবার পাঠাতে হয়, তো হাজারবার সুপারিশ আকারে পাঠানোর পরামর্শ দেন।
দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বের আলোচনায় ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নারীদের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি প্রাধান্য পায়। প্রায় সব আলোচকই জানান, ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নারীরা খুন–ধর্ষণসহ বিভিন্ন নির্যাতনের শিকার হলেও আজ পর্যন্ত একটি ঘটনারও বিচার হয়নি।
বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক মিনু মারিয়া ম্রংয়ের সভাপতিত্বে সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের জ্যেষ্ঠ প্রোগ্রাম ম্যানেজার এভিলিনা চাকমা, কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সদস্যসচিব চঞ্চনা চাকমা প্রমুখ।