একাকিত্বের অবসান ঘটেছে দিনাজপুরের রামসাগর জাতীয় উদ্যানে থাকা নারী নীলগাইটির। গত ২২ জানুয়ারি নওগাঁর মান্দা উপজেলার জোতবাজার এলাকায় ধরা পড়ে পুরুষ নীলগাইটি। পরে সেটিকে রাজশাহীর বন্য প্রাণী উদ্ধার ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে নেওয়া হয়। গতকাল শুক্রবার সেটিকে অবমুক্ত করা হয়েছে রামসাগর জাতীয় উদ্যানের মিনি চিড়িয়াখানায়।
দিনাজপুর জেলা সামাজিক বন বিভাগের কর্মকর্তা ও রামসাগর জাতীয় উদ্যানের তত্ত্বাবধায়ক আবদুস সালাম তুহিন জানান, বাংলাদেশে বিলুপ্ত প্রজাতির ‘নীলগাই’ অনেক আগেই আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) লাল খাতায় নাম লিখিয়েছে। কয়েক মাসের ব্যবধানে দুই জায়গা থেকে নারী ও পুরুষ নীলগাই দুটি উদ্ধার হয়েছে। প্রজননের উদ্দেশ্যে তাদের একত্রে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার যদুয়ার গ্রামের পাশে বাংলাদেশ–ভারত সীমান্তে বয়ে যাওয়া কুলিক নদীর ধারে বিলুপ্তপ্রায় একটি নীলগাই দেখতে পান স্থানীয় জেলেরা। পরে গ্রামবাসী সেটিকে আটক করে। খবর পেয়ে স্থানীয় প্রশাসন বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় নীলগাইটিকে উদ্ধার করে দিনাজপুরের রামসাগর জাতীয় উদ্যানে আনা হয়। এরপর গত ২২ জানুয়ারি নওগাঁর জোতবাজার এলাকা থেকে উদ্ধার হয় পুরুষ নীলগাইটিকে। বন বিভাগের কর্মকর্তাদের ধারণা, পুরুষ নীলগাইটি দলছুট হয়ে ভারতের বিহারের গঙ্গাতীরবর্তী এলাকা থেকে এদিকে আসতে পারে।
বন বিভাগের কর্মকর্তা আবদুস সালাম তুহিন আরও জানান, নীলগাই বিরল প্রজাতির বিলুপ্ত একটি বন্য প্রাণী। গাই হিসেবে পরিচিত হলেও নীলগাইটি কখনোই গরু শ্রেণির নয়। বরং এটি এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ হরিণবিশেষ প্রাণী। যার বৈজ্ঞানিক নাম boselaphus tragocamelus। প্রায় শত বছর আগে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় নীলগাই দেখা যেত। তারপর ১৯৪০ সালের দিকে পঞ্চগড়ে একবার নীলগাই দেখা গিয়েছিল। কয়েক মাসের ব্যবধানে ঠাকুরগাঁও ও নওগাঁ থেকে প্রাণী দুটি উদ্ধার করার পর বাংলাদেশে এর সংখ্যা দাঁড়াল দুটি। নারী-পুরুষ নীলগাই দুটিকে একত্রে রাখা হয়েছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বংশবৃদ্ধির সুখবর আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে বিলুপ্তপ্রায় নীলগাই দুটিকে দেখতে দূরদূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীদের ভিড় বেড়েছে রামসাগর জাতীয় উদ্যানে। রংপুর থেকে রামসাগর উদ্যানে বনভোজনে আসা জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আগে একবার এসে ঠাকুরগাঁও থেকে উদ্ধার হওয়া নীল গাইটি দেখেছিলাম। আজ (গতকাল) দেখলাম আরেকটি নীল গাই। খুবই ভালো লাগছে। একজন সাথি খুঁজে পেল গাইটি।’
উদ্যানে বেড়াতে আসা আরেক দর্শনার্থী দিনাজপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী মারিয়া তাবাসসুম বলেন, উদ্যানে নতুন প্রাণী যুক্ত হয়েছে। এই প্রথম বিরল প্রজাতির দুটি নীল গাই দেখলাম।