দেশে মুঠোফোনের সক্রিয় গ্রাহকের সংখ্যা প্রথমবারের মতো ১৭ কোটি ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) হিসাবে, গত মাস অর্থাৎ ডিসেম্বর শেষে গ্রাহকসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ কোটি ১ লাখ ৩৭ হাজার।
একই সঙ্গে বাড়ছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী। বিটিআরসির হিসাবে, ডিসেম্বর শেষে ইন্টারনেট গ্রাহক দাঁড়িয়েছে ১১ কোটি ১৯ লাখে।
বিটিআরসির তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, গত বছরের শুরুতে এবং করোনাকালের প্রথম কয়েক মাস দেশে মুঠোফোনের গ্রাহক কমছিল। তবে বছরের শেষ দিকে তা বাড়তে থাকে। মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো বলছে, করোনাকালে অনলাইনে পড়াশোনা, ব্যবসা, অফিস করাসহ নানা কারণে মুঠোফোন ও ইন্টারনেটের প্রয়োজন বেড়েছে। এ কারণেই গ্রাহক বাড়ছে।
এ বিষয়ে মোবাইল ফোন অপারেটর রবি আজিয়াটার চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, দেশে সক্রিয় মোবাইল সংযোগসংখ্যা এখন মোট জনসংখ্যার চেয়ে বেশি। ডিজিটাল সেবা গ্রহণে মোবাইলের ওপর সাধারণ মানুষের নির্ভরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা ডিজিটাল সমাজ তৈরিতে সরকারের উদ্যোগকে আরও বেগবান করবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের ফোরজি স্মার্টফোনের ব্যবহার এখনো ২০ শতাংশ, যা এখনো সন্তোষজনক পর্যায়ে নয়। ফোরজি স্মার্টফোনের ব্যবহার বাড়াতে সংশ্লিষ্টরা আরও নজর দেবেন বলে আমরা আশা করি।’
বিটিআরসির হিসাবে দেখা যায়, নভেম্বর শেষে দেশে মুঠোফোন গ্রাহক ছিল ১৬ কোটি ৮৪ লাখের মতো। এক মাসে সংখ্যাটি ১৭ লাখের মতো বেড়েছে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে গ্রাহকসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৫৬ লাখের মতো।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫৬ লাখ। মুঠোফোন গ্রাহকের যে সংখ্যাটি তুলে ধরা হয় সেটা হলো সিম (গ্রাহক শনাক্তকরণ নম্বর) সংখ্যা। একজন ব্যক্তির হাতে একাধিক সিম থাকে। আর কোনো গ্রাহক সর্বশেষ ৯০ দিনের মধ্যে একবার ব্যবহার করলেই তাকে সক্রিয় গ্রাহক হিসেবে গণ্য করা হয়।
দেশে ইউনিক ইউজার বা একক ব্যবহারকারী কত, তা জানা যায় মুঠোফোন অপারেটরদের বৈশ্বিক সংগঠন জিএসএমএর ‘মোবাইল ইকোনমি ২০২০: এশিয়া-প্যাসিফিক’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, মোট জনসংখ্যার ৫৪ শতাংশের হাতে মুঠোফোন রয়েছে। এটা বিবেচনায় নিলে মুঠোফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৮ কোটি ৯৪ লাখে দাঁড়ায়। এ হিসাবে এক ব্যক্তির একাধিক সিম থাকলেও তাঁকে একজন গ্রাহক হিসেবেই ধরা হয়েছে।
বিটিআরসির হিসাবে, ডিসেম্বর শেষে মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোনের গ্রাহক দাঁড়িয়েছে ৭ কোটি ৯০ লাখে। রবি আজিয়াটার গ্রাহক দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৯ লাখ। বাংলালিংকের গ্রাহকসংখ্যা ৩ কোটি ৫৩ লাখের মতো। টেলিটকের গ্রাহক দাঁড়িয়েছে ৪৯ লাখের কিছু বেশি।
সর্বশেষ হিসাব বলছে, দেশে মুঠোফোনে ১০ কোটি ২৩ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। এক বছর আগে তা ৯ কোটি ৩৫ লাখ ছিল। ডিসেম্বর শেষে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে দাঁড়িয়েছে ৯৫ লাখ, যা এক বছর আগে ৫৭ লাখের কিছু বেশি ছিল।
জিএসএমের হিসাবে, মুঠোফোনের মোট ‘ইউনিক ইউজারের’ ২৫ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। সংখ্যার হিসাবে যা প্রায় ২ কোটি ২৪ লাখে দাঁড়ায়।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশে ‘ইউনিক ইউজার’ কত, সত্যিকার কত গ্রাহক (ইউনিক) ইন্টারনেট ব্যবহার করে—এসব তথ্য বিটিআরসির প্রকাশ করা উচিত। সহজেই তা পাওয়া যায়। নইলে সিমসংখ্যা কোনো অর্থ তৈরি করে না।
টেলিযোগাযোগ গবেষণা প্রতিষ্ঠান লার্নএশিয়ার জ্যেষ্ঠ পলিসি ফেলো আবু সাঈদ খান প্রথম আলোকে বলেন, ২০২১ সালে এসে শুধু সিমসংখ্যার পরিসংখ্যান দেওয়া খুবই অগ্রহণযোগ্য। কত গ্রাহক দ্বিতীয় প্রজন্মের (টু–জি), কত গ্রাহক তৃতীয় প্রজন্মের (থ্রি–জি) ও কত গ্রাহক চতুর্থ প্রজন্মের (ফোর–জি) ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, সে তথ্যও প্রকাশ করতে হবে।
সেবার মানে উন্নতি জরুরি
২০০৮ সালে দেশে মুঠোফোনের সক্রিয় সিম ছিল ৪ কোটির কিছু বেশি। ইন্টারনেট গ্রাহক ছিল ৬০ লাখের মতো। সে তুলনায় গ্রাহক ও ব্যবহার অনেক বেড়েছে। কিন্তু মুঠোফোন ও ইন্টারনেট (মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড) সেবার মানে সাম্প্রতিককালে অবনতি হয়েছে বলে অভিযোগ গ্রাহকদের। ৭ জানুয়ারি বিটিআরসির এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির কর্মকর্তারাই মাঠপর্যায়ের পরীক্ষায় মানের অবনতির দিকটি উঠে এসেছে বলে জানান। তবে বিটিআরসির পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগের কথা জানিয়ে বলা হয়, চলতি জানুয়ারির মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতির আশা রয়েছে।
এ বিষয়ে লার্নএশিয়ার জ্যেষ্ঠ পলিসি ফেলো আবু সাঈদ খান প্রথম আলোকে বলেন, সার্বিকভাবে সেবার মান ভালো নয়। কোনো কোনো অপারেটরের কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরিস্থিতি গ্রহণযোগ্য। তিনি বলেন, দেশের মোটামুটি সব জায়গায় মুঠোফোন সেবা পৌঁছে গেছে। কিন্তু বিটিআরসির কার্যক্রম শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক। বিটিআরসির বিকেন্দ্রীকরণ খুবই জরুরি।