প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে গোপালগঞ্জের তিনটি আসনেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা প্রচারণা শুরু করেছেন। সভা-সমাবেশের মাধ্যমে দলটির নির্বাচনী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। তবে তিনটি আসনের কোনোটিতেই বিএনপির প্রার্থীদের প্রচারণা লক্ষ করা যাচ্ছে না।
বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলের মনোনীত নেতারা এলাকায় নেই। এ কারণে কর্মীরা নিষ্ক্রিয় রয়েছেন। তা ছাড়া দলের মধ্যে ভালো বোঝাপড়া নেই বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
গোপালগঞ্জ-১ (মুকসুদপুর-কাশিয়ানীর একাংশ) আসনের বিএনপির প্রার্থী হলেন দলটির সাবেক সাংসদ এফ ই শরফুজ্জামান জাহাঙ্গীর। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে তিনি এই আসনে সাংসদ নির্বাচিত হন। স্থানীয় নেতা-কর্মীদের কাছে তিনি ‘নিরীহ ভদ্রলোক’ ও দলের ‘দুঃসময়ের কান্ডারি’ হিসেবে পরিচিত। এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হলেন তিনবারের নির্বাচিত সাংসদ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও দলের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান। ’৯৬ সালের নির্বাচনে প্রথম তিনি এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হন এবং লক্ষাধিক ভোটের বিশাল ব্যবধানে জয়ী হন। ওই নির্বাচন থেকে প্রতিবারই তিনি জয়ের ধারা ধরে রেখেছেন। এই দুজনের বাইরে প্রার্থী রয়েছেন তিনজন।
এই আসনে ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হয়েছে। কিন্তু বিএনপির পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণামূলক কোনো কার্যক্রম গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত চোখে পড়েনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম মনসুর আলী বলেন, তাঁদের প্রার্থী শরফুজ্জামান অসুস্থ থাকার কারণে এই আসনে বিএনপির কোনো প্রচারণা নেই। কয়েক দিন আগে ঢাকায় বিএনপির কার্যালয়ের সামনে তাঁর ওপর হামলা হয়েছে। সারা দেশেই বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর এ ধরনের হামলা হচ্ছে।
গোপালগঞ্জ-২ (গোপালগঞ্জ সদর-কাশিয়ানীর একাংশ) আসনে বিএনপির প্রার্থী হলেন জেলা বিএনপির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সিরাজ। গত দুটি নির্বাচনে তিনি এই আসন থেকে চারদলীয় জোট মনোনীত প্রার্থী ছিলেন। এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হলেন টানা সাতবারের নির্বাচিত সাংসদ সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই একের পর এক সভা-সমাবেশ, বৈঠকের মাধ্যমে তিনি নির্বাচনী প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন। বিএনপির প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম মনোনয়ন যাচাই-বাছাইয়ের দিন ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জে আসেন। যাচাই-বাছাইয়ের পরের দিন তিনি পুনরায় ঢাকায় চলে যান। চার-পাঁচ দিন আগে তিনি এলাকায় ফেরেন। তাঁর পক্ষে কোনো প্রচারণামূলক কার্যক্রম করতে দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমি চার-পাঁচ দিন হলো এসেছি। ইউনিয়নে ইউনিয়নে ঘুরছি, উঠান বৈঠক করছি। আমরা আগে গ্রামের দিকটাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। পরে শহরে ঢুকব। আপাতত প্রশাসন নিরপেক্ষ ভূমিকায় আছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এই আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও জাতীয় পার্টির আরও দুজন প্রার্থী রয়েছেন। তবে তাঁদের পক্ষেও কোনো প্রচারণা চোখে পড়ছে না।
গোপালগঞ্জ-৩ (কোটালীপাড়া ও টুঙ্গিপাড়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রধানমন্ত্রী ও দলটির সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এখান থেকে তিনি ছয়বার সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। প্রতিবারই তিনি বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন। এখানে দলটির প্রচারণামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
যাচাই-বাছাইয়ে এই আসনের বিএনপির প্রার্থী জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলা কমিটির সভাপতি এস এম জিলানীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। পরে নির্বাচন কমিশনে আপিল করে তিনি প্রার্থিতা ফিরে পান। তবে প্রার্থিতা পেলেও কারাগার থেকে তাঁর মুক্তি মেলেনি। তাঁর পক্ষেও কোনো প্রচারণা চোখে পড়ছে না।
এই আসনে স্বতন্ত্র দুই প্রার্থী এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের একজন প্রার্থী রয়েছেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী শেখ মো. মারুফ কোটালীপাড়ার কয়েকটি ইউনিয়নে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন এবং সেখানে দলীয় কার্যালয়ও করেছেন।