কক্সবাজার শহরের কলাতলী-মেরিন ড্রাইভ সংযোগ সড়কের সংস্কারকাজ শুরু হয় গত ৩ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু সংস্কারকাজ চলছে ধীরগতিতে। ফলে দুর্ভোগে পড়ছেন কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকসহ স্থানীয় লোকজন। বর্তমানে জরুরি প্রয়োজনে সরকারি-বেসরকারি লোকজন সমুদ্রসৈকত দিয়ে মেরিন ড্রাইভ সড়কে চলাচল করতে গিয়ে বালুচরের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। বিপদে পড়েছে গভীর সমুদ্র থেকে ডিম পাড়তে আসা মা কচ্ছপ ও কাঁকড়া।
কক্সবাজার পৌরসভার নিজস্ব তহবিলের প্রায় সাড়ে ১১ কোটি টাকা বরাদ্দে ১ হাজার ৩০০ মিটারের সড়কটির সংস্কারকাজ শুরু হয়েছে। পৌরসভার পক্ষ থেকে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ঘোষণা দেওয়া হয়, সংস্কারকাজের জন্য এই সড়কে গাড়ি চলাচল তিন মাস বন্ধ থাকবে। ভ্রমণে আসা পর্যটক, রোহিঙ্গা শিবিরে কর্মরত এনজিও সংস্থার যানবাহন শহরের লিংক রোড থেকে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের কোর্টবাজার হয়ে মেরিন ড্রাইভ সড়ক ব্যবহারের অনুরোধ জানানো হয়।
গত বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, ১৫ জন শ্রমিক সড়কের কাজ করছেন। কলাতলী হাঙর ভাস্কর্য মোড় থেকে বেইলি হ্যাচারি পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার (১৩০০ মিটার) সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ। স্থানীয় লোকজন, চাকরিজীবী, স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা হেঁটে আসা-যাওয়া করছে।
স্থানীয় আইনজীবী খালেদুল কবির বলেন, অল্প শ্রমিক নিয়ে কাজ চলতে থাকলে আগামী ৬ মাসেও সড়কের কাজ সম্পন্ন হবে না। বিকল্প সড়ক তৈরি না করে কলাতলী সড়কের সংস্কার শুরু করা ঠিক হয়নি।
ট্রাফিক পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার বাবুল বণিক বলেন, মেরিন ড্রাইভ সড়কে ওঠার বিকল্প সড়ক তৈরি না করে কলাতলী সড়ক বন্ধ করায় মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। ৫০ জন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যকে যানজট নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আসাদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আসাদুজ্জামান বলেন, দুইটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কলাতলী সড়কের সংস্কার কাজ করছে। তাঁর আওতাভুক্ত ২০০ মিটার কাজ আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সম্পন্ন হবে। কাজ দ্রুত শেষ করতে অতিরিক্ত ৪০ জন শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, অধিক যান চলাচল ও দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় পর্যটন নগরের অতি গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের বেহালদশা হয়েছে। ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে প্রতিদিন। তাই সড়কটি জরুরিভিত্তিতে সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কাজ দ্রুত শেষ করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিকল্প সড়কে ক্ষতিগ্রস্ত সৈকতের জীববৈচিত্র্য
কলাতলী সংযোগ সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় দুর্ভোগ লাঘবে কলাতলী সৈকতে একটি বিকল্প সড়ক তৈরি করা হয়। এ জন্য কলাতলী সৈকতের সাবমেরিন কেবল পয়েন্ট এবং দক্ষিণ দিকের বেইলি হ্যাচারি পয়েন্টে গাড়ি ওঠা–নামার কিছু অংশে ইট বিছিয়ে রাস্তা তৈরি করে দেওয়া হয়। মাঝখানে এক কিলোমিটার বালুচর অতিক্রম করে চলছে যানবাহনের পারাপার।
ট্রাফিক পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার বাবুল বণিক বলেন, সৈকতের বিকল্প সড়ক দিয়ে কয়েক দিন ধরে চলাচল করছে ছোট গাড়িগুলো। কিন্তু সকাল ও বিকেলে জোয়ার হলে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকে। কারণ জোয়ারের পানিতে গাড়ি চলাচলের বালুচর পানিতে ডুবে থাকে। আবার রাতে সৈকতের বালুচর দিয়ে যানবাহন চলাচল করায় জীববৈচিত্র্যেরও ক্ষতি হচ্ছে।
পরিবেশবাদী সংগঠন কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা বলেন, গাড়ি চলাচলের কারণে সৈকতের কাঁকড়া ও ডিম পাড়তে আসা মা কচ্ছপ মারা পড়ছে।