জাতীয় সংসদে তরুণদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে সংরক্ষিত আসন রাখার দাবি জানিয়েছে ইনডিজেনিয়াস পিপলস ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেস (আইপিডিএস) নামের একটি সংগঠন। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর তরুণদের এই সংগঠনটি উগান্ডা, শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়ার উদাহরণ তুলে ধরে বাংলাদেশেও তরুণ সমাজকে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করতে এ দাবি জানায়।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সিবিসিবি সেন্টারে আয়োজিত দিনব্যাপী এক সভায় এসব আলোচনা হয়। বেসরকারি সংগঠন অ্যাকশনএইড এই আয়োজনের সহযোগী ছিল।
অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে সংগঠনটির পক্ষ থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে উল্লেখ করার জন্য ১০টি দাবি করা হয়। এগুলো হলো—ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর তরুণদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, এ বিষয়ক দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ দেওয়া, যুব সংগঠনগুলোকে আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতার মাধ্যমে ক্ষমতায়ন করা, রাজনৈতিক দলগুলোতে তরুণ কোটা সংরক্ষণ করা, প্রতিনিধিত্বমূলক কর্মকাণ্ডে প্রতিনিধি রাখা, সরকারি চাকরিতে ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিসত্তার কোটা সংরক্ষণ, সংবিধানে আত্মনিয়ন্ত্রণ, ভূমি, সংস্কৃতি ও আত্মপরিচয়ের স্বীকৃতি দেওয়া, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নের রোডম্যাপ, সমতলের আদিবাসীদের জন্য স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় গঠন এবং ক্ষুদ্র জাতিসত্তা অধিকার আইন প্রণয়ন।
‘নির্বাচনী ইশতেহার: আদিবাসী তরুণ সমাজের প্রত্যাশা’ শীর্ষক এক প্রবন্ধে এসব দাবি উপস্থাপন করেন মুন্নী মেরিনা চিরান। সোহেল হাজং ও রিপন বানাইয়ের সঙ্গে তিনি প্রবন্ধটি লিখেছেন। তিনি বলেন, নির্বাচনী ইশতেহারে রাজনৈতিক দলের দৃষ্টিভঙ্গি ও পরিচয় পাওয়া যায়। যদিও তার বাস্তবায়ন খুব বেশি আশাব্যঞ্জক নয়। তবুও ইশতেহারের প্রতিশ্রুতি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এই প্রতিশ্রুতি অনুসরণ করে অ্যাডভোকেসি করা সহজ হয় এবং অব্যাহত চাপ দেওয়া যায়। তবে শুধু ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত নয়, এর যথাযথ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দলগুলোকে আরও আন্তরিক হতে হবে।
অতিথিদের মধ্যে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে সব ধরনের কোটা তুলে দেওয়ার সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘ছাত্রছাত্রীরা জনগণের ন্যায্য অধিকার চেয়েছিল। তারা কখনোই বলেনি কোটা বিলুপ্ত করে দাও। তারা একটি গ্রহণযোগ্য সংস্কার চেয়েছে। কোটা বাতিল করে সংবিধান লংঘন করা হয়েছে।’
নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার বিষয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, এর পেছনে বড় কারণ হচ্ছে এ বিষয়ে সরকারের আগ্রহ কম। তিনি আদিবাসী শব্দের ব্যবহার না করে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী শব্দ ব্যবহারের সমালোচনা করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল বলেন, অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের তরুণেরা অনেক পিছিয়ে আছে, তার চেয়েও পিছিয়ে আছে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার তরুণেরা। রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধিত্ব কাঠামোতে তাদের কোনো অবস্থান নেই। তিনি সংসদে তরুণদের জন্য ৫ শতাংশ আসন সংরক্ষিত রাখার কথা বলেন, যার মধ্যে ক্ষুদ্র জাতিসত্তা তরুণ ২ শতাংশ ও সংখ্যালঘু তরুণ ১ শতাংশ হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস অনুষ্ঠানে সঞ্চালনা করেন। সূচনা বক্তব্য দেন ইনডিজেনিয়াস পিপলস ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেস (আইপিডিএস)–এর সভাপতি সঞ্জীব দ্রং। এ সময় সারা দেশের বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার শিক্ষার্থী ও তরুণেরা এতে অংশ নেন।