‘মুজিব চিরন্তন’ অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা ভান্ডারি। তিনি দুই দিনের সফরে ২২ মার্চ আসছেন।
আকাশ ও সড়কপথে যাতায়াত সহজ করা এবং রেলপথে যোগাযোগের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে সংযুক্তি ও ব্যবসা বাড়াতে জোর দিচ্ছে নেপাল। এ ছাড়া হিমালয়ের পাদদেশের দেশটি দুই দেশের মধ্যে পর্যটন, জ্বালানি ও নানা ধরনের পণ্যের ব্যবসাও বাড়াতে আগ্রহী। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে আলোচনায় নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা ভান্ডারি এ বিষয়গুলোতে অগ্রাধিকার দেবেন বলে দুই দেশের কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ‘মুজিব চিরন্তন’ প্রতিপাদ্যে ১৭ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ১০ দিনের ওই অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা ভান্ডারি, শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ ও ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং যোগ দিচ্ছেন। অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দুই দিনের সফরে বিদ্যা ভান্ডারি ২২ মার্চ ঢাকায় আসছেন। পরদিন তিনি ‘বাংলার মাটি আমার মাটি’ থিম অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
নেপালের প্রেসিডেন্ট দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, সংযুক্তি বাড়ানোসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করবেন। এই সফর দুই দেশের সম্পর্ককে শক্তিশালী করবে, নতুন উচ্চতায় নেবে।বংশীধর থাপা, ঢাকায় নেপালের রাষ্ট্রদূত
ঢাকায় নেপালের রাষ্ট্রদূত বংশীধর থাপা সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা ভান্ডারি ঢাকা সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, সংযুক্তি বাড়ানোসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন। এই সফর দুই দেশের সম্পর্ককে শক্তিশালী করবে, নতুন উচ্চতায় নেবে।
সংযুক্তির সম্প্রসারণ
নেপাল ও বাংলাদেশের মধ্যে যোগাযোগ এখন পর্যন্ত মূলত আকাশপথের ওপর নির্ভরশীল। আকাশপথে চলাচল ঢাকা-কাঠমান্ডুর মধ্যে সীমাবদ্ধ। নেপাল এই চলাচলের পরিধি চট্টগ্রাম ও সিলেটে বাড়াতে চায়। তা ছাড়া দেশটি ২০১৬ সাল থেকে সৈয়দপুর থেকে বিরাটনগর পর্যন্ত আকাশপথে যোগাযোগ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা করছে। সর্বশেষ দুই দেশের বাণিজ্যসচিব পর্যায়ের আলোচনায় নেপাল বিষয়টি সামনে এনেছে। দুই দেশের কর্মকর্তারা মনে করছেন, সৈয়দপুর থেকে বিরাটনগরের ১৫ থেকে ২০ মিনিটের আকাশপথে চলাচল দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ অনেকটা বাড়াবে।
নেপালের কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, বাংলাদেশের বাংলাবান্ধা হয়ে নেপালের কাকরভিটা এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত হলেও সড়কপথে দুই দেশের চলাচল সীমিত। কারণ, ভারত হয়ে তৃতীয় দেশের ভিসা নেওয়ার বিষয়টি এ ক্ষেত্রে বাধা হয়ে কাজ করছে। ভিসার বিষয়টি দ্রুত সুরাহা করা গেলে সড়কপথে দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ আরও বাড়ার সুযোগ রয়েছে।
ঢাকার কূটনীতিকেরা এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, সম্প্রতি ভারতের সঙ্গে রোহানপুর-সিংহাবাদ রেল সংযোগ চালুর ফলে নেপালের সঙ্গে পণ্য ও যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, ওই রেলপথে বাংলাদেশ থেকে ভারত হয়ে নেপালের বিরাটনগরে সরাসরি পৌঁছানো যাবে। তা ছাড়া কলকাতার হলদিয়া বন্দরের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর অংশ হিসেবে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করার ওপর নেপাল এখন বিশেষভাবে মনোযোগ দিচ্ছে।
ব্যবসা বাড়ানো ও বিদ্যুৎ কেনাবেচা
নেপালে বাংলাদেশের ফার্নিচার, মোটরবাইক, নানা ধরনের স্ন্যাকস, নির্মাণশিল্পের পণ্যের চাহিদা রয়েছে। আবার বাংলাদেশে নেপালের ভেষজ সামগ্রী ও মৌসুমি সবজির চাহিদা রয়েছে।
দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানোর ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) করার বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত চুক্তির খসড়া বিনিময় না হলেও যেসব পণ্য নিয়ে বাণিজ্য হবে, তার তালিকা বিনিময় হয়েছে।
ভারতের পর বাংলাদেশ সম্প্রতি নেপাল থেকে বিদ্যুৎ কিনতে রাজি হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে এ মুহূর্তে সঞ্চালন লাইন না থাকায় ভারত তাদের বিদ্যমান সঞ্চালন লাইন ব্যবহার করতে দিতে সম্মত হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিদ্যুৎকে বড় সম্ভাবনা হিসেবে দেখছে নেপাল।
এ নিয়ে জানতে চাইলে নেপালে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও পররাষ্ট্রসচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে শামস প্রথম আলোকে বলেন, ‘নেপালে পরিবেশবান্ধব জলবিদ্যুৎ, নবায়নযোগ্য জ্বালানির চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি। তবে বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতার বিষয়ে এগোনোর ব্যাপারে ভাবতে হবে। কারণ, দেশের পরিকল্পনার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের অবস্থান ঠিক করতে হবে।’
বাংলাদেশে আস্থা নেপালি রোগীদের
দুই দেশের সহযোগিতার একটি বড় অংশ হচ্ছে দেশটির হাসপাতালগুলোর চিকিৎসকদের বড় অংশ পড়াশোনা করে যান বাংলাদেশে।
ঢাকায় নেপালের রাষ্ট্রদূত বংশীধর থাপা এই প্রতিবেদককে বলেন, এ মুহূর্তে চার হাজারের বেশি নেপালি শিক্ষার্থী পড়ছেন বাংলাদেশে। তাঁদের বেশির ভাগই মেডিকেলের ছাত্র। নেপালের উঁচু মাপের চিকিৎসকদের প্রায় সবাই বাংলাদেশ থেকে পড়ে গেছেন। আর নেপালের লোকজন চিকিৎসকের কাছে এসে বাংলাদেশের কথা শুনলেই ভরসা করেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতিবছর গড়ে পাঁচ থেকে ছয় শ নেপালি শিক্ষার্থী পড়ছেন বাংলাদেশে। এর ৮০ ভাগ সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে। এ ছাড়া নেপালি শিক্ষার্থীদের বাকি অংশ ইঞ্জিনিয়ারিং, লেদার টেকনোলজি আর টেক্সটাইলে পড়েন।