একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ১৮ জন প্রার্থী জয়লাভ করেছেন। তাঁরা সবাই আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন। এই নির্বাচনে বিভিন্ন দল থেকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মোট ৭৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
দশম জাতীয় সংসদে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে নির্বাচিত সদস্য ছিলেন ১৮ জন।
এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৮ জন ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়। দশম সংসদে তাঁদের মধ্যে ১৬ সাংসদ ছিলেন। নতুন নতুন যুক্ত হয়েছেন আওয়ামী লীগের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল (নেত্রকোনা-৩)। একটি আসনে প্রার্থী পরিবর্তন হয়েছে। সাংসদ ছবি বিশ্বাসের পরিবর্তে মনোনয়ন পান জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মানু মজুমদার। তিনি ছবি বিশ্বাসের আত্মীয়।
নির্বাচিত অন্যরা হলেন বর্তমান মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ (খুলনা-৫), যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার (মাগুরা-২), পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উ শৈ সিং (বান্দরবান), সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন (ঠাকুরগাঁও-১), মনোরঞ্জন শীল গোপাল (দিনাজপুর-১), সাধন চন্দ্র মজুমদার (নওগাঁ-১), রণজিৎ কুমার রায় (যশোর-৪), স্বপন ভট্টাচার্য (যশোর-৫), পঞ্চানন বিশ্বাস (খুলনা-১), ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু (বরগুনা-১), পঙ্কজ নাথ (বরিশাল-৪), মৃণাল কান্তি দাস (মুন্সিগঞ্জ-৩), জয়া সেনগুপ্তা (সুনামগঞ্জ-২), জুয়েল আরেং (ময়মনসিংহ-১), কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা (খাগড়াছড়ি) ও দীপঙ্কর তালুকদার (রাঙামাটি)।
এবার মনোনয়ন ছিল বেশি
দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটারের সংখ্যা ক্রমাগতভাবে কমতে থাকলেও প্রার্থীর সংখ্যায় তার প্রভাব পড়েনি। বরং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু প্রার্থীর সংখ্যা বেড়ে ৭৯ হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৫ জন নারী এবং ২ জন প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করেছেন।
এবারের নির্বাচনে এককভাবে সবচেয়ে বেশি ১৮ জন সংখ্যালঘু প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। তবে সামগ্রিকভাবে সংখ্যালঘু প্রার্থী বেশি মনোনয়ন দিয়েছে বামপন্থী দলগুলো। যেমন সিপিবি মনোনয়ন দিয়েছে ১৭ জন। বাসদ ৯ জন। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ৭ জন। এ ছাড়া গণফোরাম ৩ জন, বিএনএফ ৩ জন, ন্যাপ ২ জন, গণতন্ত্রী পার্টি ও জাসদ ১ জন করে সংখ্যালঘু প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়। এর বাইরে কয়েকটি ছোট দল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ব্যক্তিকে প্রার্থী করেছিল।
অন্যদিকে, এবারের নির্বাচনে বিএনপি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছয়জনকে মনোনয়ন দিয়েছে। জাতীয় পার্টি দিয়েছে তিনজনকে। ইসলামি দল হিসেবে পরিচিত জাকের পার্টি একজন সংখ্যালঘু প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছিল। স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন দুজন। এ ছাড়া, দুটি প্রধান জোটের শরিক হিসেবে এবং জোটভুক্ত হয়েও নিজ নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচন করেছেন অন্যরা।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন পার্বত্য রাঙামাটি থেকে ঊষাতন তালুকদার এবং পার্বত্য খাগড়াছড়ি থেকে নুতন কুমার চাকমা। এর মধ্যে ঊষাতন তালুকদার পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) প্রার্থী। জেএসএস নিবন্ধিত দল না হওয়ায় তিনি স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করেন। আর নুতন কুমার চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রামের আরেকটি অনিবন্ধিত আঞ্চলিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির (ইউপিডিএফ) প্রার্থী।
১৯৭০ সালের প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন থেকে ২০১৪ সালের নির্বাচন পর্যন্ত মোট ৫০ জন সংখ্যালঘু প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। এর মধ্যে প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সর্বোচ্চ সাতবার (একবার উপনির্বাচনসহ) নির্বাচিত হয়েছেন। বীর বাহাদুর উ শৈ সিং পাঁচবার, প্রমোদ মানকিন পাঁচবার, সতীশ চন্দ্র রায় চারবার নির্বাচিত হয়েছেন। তিনবার করে নির্বাচিত হয়েছেন সুনীল কুমার গুপ্ত, দীপংকর তালুকদার, ধীরেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ, ফণীভূষণ মজুমদার এবং বীরেন শিকদার। এ ছাড়া ২০ জন প্রার্থী দুইবার করে নির্বাচিত হয়েছেন।
ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু প্রার্থীরা পার্বত্য চট্টগ্রাম, বরিশাল, সিলেট/সুনামগঞ্জ, খুলনা, দিনাজপুর ও ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন আসন থেকে সবচেয়ে বেশিবার নির্বাচিত হয়েছেন।