চার বছর ধরে কমছে বিদেশে কর্মী পাঠানো। কমতে শুরু করেছে প্রবাসী আয়।
সংকুচিত হয়ে পড়ছে বিদেশের শ্রমবাজার। একাধিক বড় শ্রমবাজার বন্ধ। এর মধ্যে বাড়ছে সৌদি আরবনির্ভরতা। এ বছরের প্রথম আট মাসে বিদেশে যাওয়া কর্মীদের মধ্যে ৭৮ শতাংশের বেশি গেছেন ওই দেশে।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৫ সাল থেকে গত আগস্ট পর্যন্ত কাজ নিয়ে বিভিন্ন দেশে গেছেন প্রায় ১ কোটি ৩৩ লাখ মানুষ। এর মধ্যে ৩৩ শতাংশই গেছেন সৌদি আরব।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, পুরোনো শ্রমবাজারে মন্দা ও নতুন শ্রমবাজার তৈরি করতে না পারায় চার বছর ধরে বিদেশে কর্মী পাঠানো কমছে। এর মধ্যে অতিমারি করোনার প্রভাবে সবচেয়ে বেশি কমেছে গত দুই বছরে। ইতিমধ্যেই কমতে শুরু করেছে প্রবাসী আয়, সামনে এটি আরও কমতে পারে।
বেসরকারি খাতে বিদেশে কর্মী পাঠানো রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের সংগঠন বায়রা ও রিক্রুটিং এজেন্সি ঐক্য পরিষদ (রোয়াব) বলছে, একক শ্রমবাজার হিসেবে সৌদি আরবই এখন ভরসা। কিন্তু গত দুই বছরে সেখানেও আসছে নানা প্রতিবন্ধকতা। দেশটি থেকে নিয়মিত চাহিদা আসছে। কিন্তু দূতাবাসের বিধিনিষেধের কারণে ভিসা করা যাচ্ছে না। আরও বেশি কর্মী পাঠানোর সুযোগ ছিল দেশটিতে। এখন দুই ডোজ টিকা ছাড়া নারী কর্মীদের নিতে রাজি হচ্ছে না দেশটির এজেন্সিগুলো।
বিএমইটির তথ্য বলছে, বছরে রেকর্ড ১০ লাখের বেশি কর্মী বিদেশে যান ২০১৭ সালে। এরপর ২০১৮ সালে এটি কমে দাঁড়ায় ৭ লাখ ৩৪ হাজারে। ২০১৯ সালেও বিদেশে যান ৭ লাখ কর্মী। এরপর করোনার প্রভাবে ব্যাপক ধস নামে ২০২০ সালে। বিভিন্ন দেশে যান মাত্র ২ লাখ ১৭ হাজার ৬৬৯ জন। আর এ বছরের প্রথম আট মাসে গেছেন ২ লাখ ৭৫ হাজার ৭৯১ জন। এর মধ্যে গত বছর ৭৪ শতাংশ এবং এ বছর ৭৮ শতাংশ কর্মী গেছেন সৌদি আরবে।
বিএমইটি ও বায়রার দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, বড় শ্রমবাজারগুলোর মধ্যে মালয়েশিয়া বন্ধ আছে তিন বছর ধরে। দুর্নীতির অভিযোগে এটি বন্ধ হয়ে যায় ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে। এরপর দুই দেশের প্রতিনিধিরা দফায় দফায় বৈঠক করেও শ্রমবাজার চালুর বিষয়ে সুরাহা করতে পারেনি।
২০১২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ হয়ে আছে দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাত। গত বছর এটি চালুর ঘোষণা হলেও করোনার প্রভাবে তেমন গতি পায়নি। গত বছর দেশটিতে গেছেন মাত্র ১ হাজার ৮২ কর্মী। আর এ বছর গেছেন ৪ হাজার ৬৯০ জন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, করোনার প্রভাবে কুয়েত, জর্ডান, বাহরাইন, লেবাননে কর্মী যাচ্ছেন হাতে গোনা। জর্ডানেও কর্মী পাঠানো অনেক কমে গেছে। নতুন শ্রমবাজারে কর্মী যাচ্ছেন নামমাত্র সংখ্যায়।
বায়রার সাবেক মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, অভিবাসন বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বড় খাত। অথচ এটিকে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। শুধু প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের চেষ্টায় তো হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় মিলে একটি সমন্বয় সেল করা দরকার ছিল। মহামারির সময়ে কর্মী পাঠানো বাড়াতে আরও আগে থেকেই উদ্যোগ নেওয়া উচিত ছিল।
জানতে চাইলে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন প্রথম আলোকে বলেন, বন্ধ শ্রমবাজার চালু করায় জোর দেওয়া হচ্ছে। মালয়েশিয়া চালু করতে আলোচনা চলছে। অপ্রচলিত বাজার পূর্ব ইউরোপে কর্মী যাচ্ছেন। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে শ্রমবাজার আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, করোনার শুরু থকেই প্রবাসী আয় বাড়তে শুরু করে। তবে টানা তিন মাস ধরে এটি কমতে শুরু করেছে। গত বছরের আগস্টে এসেছিল ১৯৬ কোটি ডলারের প্রবাসী আয়। এবার আগস্টে ১৮১ কোটি মার্কিন ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এর আগে জুলাইয়ে ১৮৭ কোটি ডলার ও জুনে ১৯৪ কোটি ডলার পাঠান প্রবাসীরা। ওই দুই মাসেও আগের বছরের চেয়ে কম এসেছে। সামনে এটি আরও কমবে বলে শঙ্কা আছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, করোনার মধ্যে সবার আয় কমলেও দেশে বৈধ পথে প্রবাসী আয় বেড়েছিল। অনিশ্চয়তা থেকে জমানো টাকা অনেকে দেশে পাঠিয়ে দেন। ওই সময় হুন্ডি প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। আকাশপথে যোগাযোগ চালুর পর এটি আবার শুরু হয়েছে। গত দুই বছরে প্রায় পাঁচ লাখ কর্মী ফিরে এসেছেন। এর মধ্যে কেউ কেউ ফিরে গেলেও বড় অংশ দেশে রয়ে গেছেন।