এই যে এত দুশ্চিন্তা, তরুণেরা এসব নিয়ে কার সঙ্গে কথা বলবে? তরুণদের বড় অংশের সবচেয়ে বড় আপনজন এখনো মা। জরিপে অংশ নেওয়া ৬০ দশমিক ২ শতাংশ তরুণ বলেছে, জীবনের বিভিন্ন বিষয় বা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কথা তারা মাকেই বলে, মায়ের সঙ্গেই তারা সবকিছু ভাগাভাগি করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।
তুলনামূলকভাবে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরাই মায়ের সঙ্গে কথা ভাগাভাগি বেশি করে। যেমন, মেয়েদের মধ্যে এই হার ৬১ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ছেলেদের মধ্যে ৫৯ শতাংশ। বয়সের দিক থেকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে, ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের ৭৪ দশমিক ১ শতাংশ মায়ের প্রতি আস্থা রাখে সবচেয়ে বেশি, ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের মধ্যে এই হার কিছুটা কম, মাত্র ৪৮ দশমিক ৮ শতাংশ। আবার মায়ের প্রতি আস্থা শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেক বেশি। যেমন এখনো লেখাপড়া করে এমন ৭১ দশমিক ৯ শতাংশ তরুণ বলেছে তারা যেকোনো বিষয় নিয়ে মায়ের কাছেই কথা বলতে যায় বেশি, আর এখন শিক্ষার্থী নয় এমন তরুণদের মধ্যে এই হার ৫৩ দশমিক ৬ শতাংশ।
তরুণদের কাছে বন্ধুরাও জীবনের একটি বড় অংশ। ৪৭ দশমিক ৬ শতাংশ বলেছে, সমস্যায় পড়লে তারা বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে। তবে এই প্রবণতা ছেলেদেরে মধ্যেই অনেক বেশি। যেমন ৭১ দশমিক ৪ শতাংশ ছেলে বন্ধুদের কথা বললেও মেয়েরা বন্ধুদের প্রতি আস্থা রাখে মাত্র ২৩ দশমিক ৮ শতাংশ। আবার শিক্ষার্থীরা বন্ধুদের প্রতি যতটা আস্থা রাখে, অন্যরা ততটা নয়। যেমন ৬৮ শতাংশ শিক্ষার্থীর আস্থা বন্ধুদের প্রতি, কিন্তু শিক্ষার্থী নয় এমন ৩৫ দশমিক ৯ শতাংশ বলেছে বন্ধুদের কথা।
সদাব্যস্ত বাবা কিন্তু তরুণদের ভরসার জায়গা করে নিতে পারেননি। মাত্র ৩৩ দশমিক ১ শতাংশ তরুণ বলেছে বাবার কথা। ছেলেদের মধ্যে ৪৬ দশমিক ৫ শতাংশ তরুণ বাবার সঙ্গে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ভাগাভাগি করে নেওয়ার কথা বললেও মেয়েদের মধ্যে এই হার মাত্র ১৯ দশমিক ৭ শতাংশ। একটা সময় ছিল বাবা মানেই রাগী একজন, শাসন করাই যাঁর কাজ, সবাই তাঁকে ভয় পাবে, কাছে যাওয়া বারণ। বর্তমান আধুনিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত সমাজব্যবস্থায় বাবা যে সেই আগের পরিচয় থেকে এখনো বের হতে পারেননি, এই জরিপই তার প্রমাণ।
মা, বন্ধু, বাবা ছাড়াও সমস্যার কথা বলার জন্য তরুণদের আস্থার জায়গা আরও আছে। যেমন ২৯ দশমিক ৪ শতাংশ তরুণ বলেছে জীবনসঙ্গীর কথা, বোনের কাছে যাওয়ার কথা বলেছে সাড়ে ১৮ শতাংশ এবং ভাইয়ের কথা বলেছে ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ।
মজার একটা প্রবণতার কথা এখানে না বললেই নয়। আর তা হলো ছেলেরা সমস্যা নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা করে বন্ধুদের সঙ্গে (৭১.৪%), এরপরই রয়েছে মা (৫৯%) বা বাবা (৪৬.৫%)। আবার তারা সমস্যা নিয়ে ভাইয়ের সঙ্গে (২১.৬%) যতটা কথা বলে, স্ত্রীর সঙ্গে (১৩.৯%) কথা বলে তার চেয়েও কম। অন্যদিকে, মেয়েদের ক্ষেত্রে বিষয়টা খানিকটা অন্য রকম। যেমন মেয়েরা সমস্যা নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা করে মায়ের সঙ্গে (৬১.৫%), এরপরই রয়েছে স্বামী (৪৪.৯%)। তৃতীয় স্থানে বোন (২৯.৪%), এরপরে আছে বন্ধুরা (২৩.৮%)। আর বাবার অবস্থান (১৯.৭%) আরও পরে, তবে ভাইয়ের (১৫%) তুলনায় বেশি।