শ্রদ্ধার ফুলে ভাষাশহীদদের স্মরণ

ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাবনত জাতি
ছবি: প্রথম আলো

শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে কৃতজ্ঞচিত্তে ভাষাশহীদদের স্মরণ করছে জাতি। একুশের প্রথম প্রহরেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শুরু হয়েছে এই শ্রদ্ধা নিবেদন।

রোববার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তাঁদের সামরিক সচিবেরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানান। প্রথমে রাষ্ট্রপতির পক্ষে তাঁর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহউদ্দিন ইসলাম ও এর পরপরই প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তাঁর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমেদ চৌধুরী শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর পক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন সংসদ সচিবালয়ের সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস এম এম নাঈম রহমান।

এরপর আওয়ামী লীগের নেতারা শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীসহ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা। তাঁদের পর ফুল দেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান ও নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ শাহীন ইকবাল।

জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের পক্ষে শহীদ মিনারে ফুল দেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হকসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা।

রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক–সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য ফুল হাতে সমবেত হয়েছেন। একের পর এক দলবদ্ধ হয়ে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন তাঁরা।

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হতে না হতেই বাঙালির ঘাড়ে চেপে বসে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। তারা মায়ের ভাষা বাংলার অধিকার কেড়ে নিতে উদ্ধত হয়। কিন্তু বীর বাঙালি প্রতিবাদী হয়ে বুকের তাজা রক্তে রঞ্জিত করে রাজপথ। পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে মায়ের ভাষা। আজ সেই অমর একুশে ফেব্রুয়ারি।

এ উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মূল বেদিতে আঁকা হয়েছে আলপনা। আশপাশের রাস্তা ও দেয়ালে নতুন রং করা হয়েছে। লেখা হয়েছে ভাষা আন্দোলন ও আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রচিত কবিতার বিশেষ পঙ্‌ক্তি, মনীষী-ভাষাবিদদের বাণী। দেয়ালে দেয়ালে শোভা পাচ্ছে ভাষা আন্দোলনের গ্রাফিতি।

শ্রদ্ধার ফুল হাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মানুষের ঢল

পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকেরা যখন অন্যায়ভাবে উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাঙালির ওপরে চাপিয়ে দিতে উদ্যত হয়েছিল, তখন বাঙালি ফুঁসে উঠেছিল প্রতিবাদে, বিক্ষোভে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিছিল করে এগিয়ে যেতে থাকলে তাঁদের ওপর গুলি চালানো হয়। সালাম, বরকত, রফিক, শফিক, জব্বারসহ অনেকে শহীদ হন। এরপর থেকেই জাতি শহীদদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণে মহান শহীদ দিবস পালন করে আসছে। ১৯৯৯ সালে ইউনেসকো দিবসটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ভাষাশহীদদের প্রতি আওয়ামী লীগ নেতাদের শ্রদ্ধা

রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় অমর একুশের চেতনা আজ অনুপ্রেরণার অবিরাম উৎস। এ চেতনাকে ধারণ করে পৃথিবীর নানা ভাষাভাষী মানুষের সঙ্গে নিবিড় যোগসূত্র স্থাপিত হোক, লুপ্তপ্রায় ভাষাগুলো আপন মহিমায় নিজ নিজ সম্প্রদায়ের মধ্যে উজ্জীবিত হোক, গড়ে উঠুক নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির বর্ণাঢ্য বিশ্ব; মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এ কামনা করি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাঙালির মুক্তি-সংগ্রামের ইতিহাসে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়েই একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠনের ভিত রচিত হয়েছিল।’

ভাষাশহীদের স্মরণে প্রদীপ প্রজ্বালন করে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগর। এতে উপস্থিত ছিলেন প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেন। মিউনিসিপ্যাল স্কুল মাঠ, অস্থায়ী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, চট্টগ্রাম। ২০ ফেব্রুয়ারি

দিবসটি উপলক্ষে সরকার, রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সকাল সাড়ে ছয়টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবনসহ সারা দেশে দলের সব শাখা কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন করবে। সকাল সাতটায় কালো ব্যাজ ধারণ, প্রভাতফেরিসহ আজিমপুর কবরস্থানে ভাষাশহীদদের কবরে ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও শ্রদ্ধা নিবেদন করবে।

বিএনপি সকাল ছয়টায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশে দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন করবে। কালো ব্যাজসহ ভোরে বলাকা সিনেমা হলের সামনে জমায়েত এবং প্রভাতফেরিসহ আজিমপুরে ভাষাশহীদদের কবর জিয়ারত করবেন দলের নেতা-কর্মীরা। এরপর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন তাঁরা।

সংশোধনী: আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অসুস্থ থাকায় একুশের প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে আসতে পারেননি। ভুলবশত ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে তাঁর উপস্থিতির কথা এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল।