জানুয়ারি মাসের ২৫ তারিখ ঘরোয়াভাবে বিয়ে। একটু গুছিয়ে নিয়ে সবাইকে বিয়ের কথা ঘটা করে জানানো হবে। তাই বিয়ে হলেও কেয়ার বউ সেজে শ্বশুর বাড়ি যাওয়া হয়নি।
স্বামী পারভেজ খান একটি চাকরি পেলেই স্বপ্নগুলো ডানা মেলবে। তবে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার আগেই জানা গেল, কেয়ার শরীরে বাসা বেঁধেছে ব্লাড ক্যানসার (এএমএল)। কেয়াকে যেতে হয়েছে ঢাকা মেডিকেলে।
বিয়ের পাঁচ মাস যেতে না যেতেই এ খবরে দুই পরিবারে আশঙ্কার কালো মেঘ নেমে এসেছে। হানিমুনে যাওয়া, একটি ভালো চাকরি—এসব চিন্তা বাদ দিয়ে তরুণ পারভেজ দৌড়াচ্ছেন হাসপাতালে। আসছেন পারভেজের পরিবারের সদস্যরাও।
গত ৮ জুন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগে ভর্তি হয়ে কেয়া এখন আছেন হাসপাতাল (২) এর ১১১ নম্বর কেবিনে। চিকিৎসকেরা জানিয়ে দিয়েছেন, কেয়ার ভালো হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সে জন্য নিতে হবে ভারতে। ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা খরচ হতে পারে। আর কেয়ার সেল (কোষ) যদি ভাই বা বোনদের সেলের সঙ্গে না মেলে তাহলে ডোনার লাগবে। তখন খরচ আরও বাড়বে।
পারভেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ, এমবিএ (অ্যাকাউন্টিং) করে বের হয়েছে গত নভেম্বরে। ২২ বছর বয়সী কেয়া খাতুন রাজবাড়ী সরকারি কলেজে ম্যানেজমেন্ট বিভাগ থেকে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা দিয়েছেন। পছন্দের বিয়ে।
জানা গেল, কেয়ার মাঝে মাঝে জ্বর হতো। প্যারাসিটামল বা অন্য কোনো ওষুধে আবার ভালো হয়ে যেত। এবার আর তা হয়নি। ফরিদপুরে রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষার পর ৬ জুন পারভেজ জানতে পারেন স্ত্রীর ব্লাড ক্যানসারের কথা।
পারভেজ বললেন, ‘কথাটি শুনে বিশ্বাস হয়নি। ভেবেছিলাম ঢাকা এনে পরীক্ষা করালে তা পাল্টে যাবে। কিন্তু ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় করানো পরীক্ষায় একই ফল পাওয়া যায়। আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য এখানে থাকা ভারতের এজেন্টদের মাধ্যমে কেয়ার রক্ত পরীক্ষার জন্য ভারতে পাঠানো হলেও ফল এলো একই।’
পারভেজের বাবা বাসের চালক। তিন ভাইয়ের মধ্যে পারভেজ বড়। এখন তাঁর সংসারের হাল ধরার কথা। সবাই সে আশাতেই ছিলেন। অন্যদিকে কেয়ার বাবা রেলওয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। চার বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে কেয়া সবার ছোট। এই দুই পরিবারের পক্ষে কেয়ার চিকিৎসা খরচ চালানো অসম্ভব।
কেয়ার কেমোথেরাপির প্রথম সাইকেল শেষ হয়েছে। শুধু এ খাতেই খরচ হয়ে গেছে ৬০ হাজার টাকা। সেল ম্যাচ করানোর জন্য কেয়ার ভাইয়ের সঙ্গে যে পরীক্ষা করানো হয়েছে তাতে খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। দিনে হাসপাতালের কেবিন ভাড়া ১ হাজার ১২৫ টাকা। চিকিৎসকদের পরামর্শেই বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এ কেবিন নিতে হয়েছে। পারভেজের বন্ধু ও স্বজনদের সহায়তায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে সাহায্যের আবেদন জানানো হয়েছে। দেশ ও দেশের বাইরে থেকে অনেকেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। পারভেজের মুঠোফোনে অনেকেই সাহায্য করার জন্য ফোন দিচ্ছেন। এ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ লাখ টাকার মতো সহযোগিতা পাওয়া গেছে। কিন্তু সামনে তো অনেক পথ বাকি।
কেয়া জানেন না তাঁর ব্লাড ক্যানসার হয়েছে। তাঁকে জানানো হয়নি। সবার উদ্বেগ উৎকণ্ঠা দেখে তিনি কিছু একটা বুঝে নেন। কেমোথেরাপি শুরুর সময় শুধু জানতে চেয়েছিলেন-তাঁর ক্যানসার হয়েছে কি না। কেমো শুরুর পর অন্যান্য শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি মাথার চুল পড়তে শুরু হয়েছে। ঘুম হচ্ছে না। পেটে প্রায়ই ব্যথা হচ্ছে। চাপা স্বভাবের কেয়া নিজের কষ্টটাকে অন্যদের বুঝতে দিতে চান না। কিন্তু তাঁর চোখের আকুতি ও কষ্ট দেখে সবাই বুঝতে পারেন কতটা কষ্ট সহ্য করছেন তিনি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হেমাটোলজি অ্যান্ড বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট ইউনিটের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক এম এ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেয়া কম বয়সী একটি মেয়ে। আমরা সবচেয়ে ভালো চিকিৎসাটাই দিতে চাচ্ছি। ওর বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টের জন্য ডোনার খোঁজা হচ্ছে। ভাই বোনদের মধ্য থেকে ডোনার পাওয়া গেলে সবচেয়ে ভালো। তারপর রোগীকে ভারতে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে এতে প্রায় ৩০ লাখ থেকে ৪০ লাখ টাকা খরচ পড়বে।’
এম এ খান বলেন, ‘রোগীর স্বজনদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। রোগীকে খরচের কারণে ভারতে নেওয়া সম্ভব না হলে বেশ কয়েকটি কেমোথেরাপি দিয়ে চিকিৎসা চালানো হবে। এতে ৫০ থেকে ৬০ ভাগ চান্স থাকে ভালো হওয়ার। আর বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট করা সম্ভব হলে ১০ শতাংশ মৃত্যুঝুঁকি থাকে।’
পারভেজ বলেন, ‘আমি অন্যের প্রয়োজনে সব সময় রক্ত দিই। গত বছর বন্ধুর ভাই অসুস্থ হলে রাস্তায় তার জন্য প্রচার চালাই। কখনো ভাবিনি নিজের স্ত্রীর জন্য এভাবে অন্যের সহযোগিতা চেয়ে হাত বাড়াতে হবে।’
পারভেজ ও কেয়ার স্বপ্ন পূরণে আপনি বাড়িয়ে দিতে পারেন সাহায্যের হাত।
>সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা: বিকাশ নম্বর-০১৭৩৫২৪৫৪৯৪ অথবা ০১৯৮০৩৬৩০৪১ নম্বরে (নিজস্ব)। ডাচ বাংলা মোবাইল ব্যাংকিং ০১৭৩৫২৪৫৪৯৪০ অথবা ডাচ বাংলা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট (এলিফ্যান্ট রোড শাখা) ১২৬১০১২২১২০০ তেও সাহায্য পাঠানো যাবে। এ ছাড়া সুইফট কোড -DBBL-BDDH-126 সাহায্য করা যাবে।