শেষ পর্যন্ত কাজটা গ্রামবাসীই করছেন

সামাদুল ইসলাম পানের চাষ করছেন দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে। মূল সড়ক থেকে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে অনেকের ফসলি জমি পেরিয়ে তাঁকে যেতে হয় নিজের জমিতে। যখন মাঠভরা ফসল থাকে, তখন যাওয়ার পথ থাকে না। ওই সময় নিজের জমির ফসল তুলে আনতে অনেক বেগ পেতে হয় তাঁকে। তাঁর মতো আরও অনেককে রাস্তার জন্য দুর্ভোগ পোহাতে হয়। জনপ্রতিনিধি ও সরকারি দপ্তরের কাছে বারবার ধরণা দিয়েছেন গ্রামবাসী। সবাই ‘হবে হবে’ বলে আশ্বাসও দিয়েছেন। কিন্তু কাজ হয়নি। শেষে নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে বানাচ্ছেন রাস্তা। গল্পটি মেহেরপুরের মহজনপুর ইউনিয়নের যতারপুর গ্রামের বাসিন্দাদের। স্বেচ্ছাশ্রমে নিজেদের জমিতে সাড়ে তিন কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করছেন তাঁরা।

গতকাল ২৮ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে রাস্তা বানানোর কাজ। কয়েক সপ্তাহ লাগবে রাস্তাটি বানাতে। গ্রামবাসীর উদ্যোগ দেখে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন মহজনপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আমাম হোসেন মিলু।

মহাজনপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জয়নাল আবেদিন বলেন, গ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল গাড়াগাড়ি মাঠে যাওয়ার জন্য একটি সড়কের। দেড় হাজার বিঘা ফসলি জমি রয়েছে মাঠটিতে। প্রায় দুই হাজার কৃষক সরাসরি সম্পৃক্ত ওই মাঠের কৃষিকাজে।

গ্রামবাসী বলছেন, যতারপুর গ্রামের পশ্চিমপাড়া পাকা রাস্তার পাশ থেকে গাড়াগাড়ি মাঠ প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার। দুই হাজার কৃষকের জীবিকার অন্যতম মাধ্যম কৃষিজমি। কিন্তু গ্রামের প্রধান সড়ক থেকে ওই সব জমিতে যাওয়ার কোনো রাস্তা নেই। তাই জমির ফসল বাড়িতে আনতে কৃষকদের কষ্ট হয়। নিয়ে যাওয়ার অসুবিধার কারণে খেতে বসেই অনেকে ফসল বিক্রি করে দেন। এতে প্রতিবছর তাঁদের লোকসান গুনতে হয়। অনেকে এ কারণে চাষাবাদ বন্ধ করে দিয়েছিলেন।

রাস্তা নির্মাণকাজের নেতৃত্বে আছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, কয়েকজন সমাজসেবক, তারা মিয়া, আতাহার ও বাবলু মিয়া। তাঁরা বলেন, এত দিন সড়ক না থাকায় জমির ফসল জমিতেই কম দামে বিক্রি করতে হতো। এ কারণে তাঁরা স্থানীয় লোকজনকে সংগঠিত করে রাস্তা তৈরির কাজ শুরু করেন। জমির কয়েকজন মালিক প্রথম দফায় রাস্তা নির্মাণের বিরোধিতা করলেও তাঁরা পরে একমত হন। রাস্তা নির্মাণে তেমন কোনো টাকা খরচ হচ্ছে না। কারণ, নিজেরাই শ্রম দিচ্ছেন।

গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তা নির্মাণের কাজ করছেন দুই শতাধিক মানুষ। কারও হাতে কোদাল, কারও হাতে টুকরি-খারাং। সবাই ব্যস্ত। ছেলে-বুড়ো সবাই আছেন এই দলে। চার থেকে পাঁচ ফুট উঁচু করে তৈরি কর হচ্ছে রাস্তাটি।

স্বেচ্ছাশ্রমে অংশ নেওয়া যতারপুর গ্রামের কলেজের ছাত্র আজমাইল শেখ বলেন, ওই মাঠের ফসল তুলে আনতে তাঁর বাবাসহ অনেককে দীর্ঘদিন ধরে কষ্ট পেতে হচ্ছে। এবার রাস্তাটি নির্মাণে গ্রামের অনেকে স্বেচ্ছায় আনন্দের সঙ্গে কাজে অংশ নিয়েছেন। রাস্তার কাজ শেষ হলে তাঁর বাবার মতো অনেক কৃষক বাজারে ফসল বিক্রি করে ন্যায্যমূল্য পাবেন। তাই এই কাজে অংশ নিতে পেরে তাঁর খুব ভালো লাগছে।

ইউপি চেয়ারম্যান আমাম হোসেন মিলু বলেন, দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধানে গ্রামবাসীকে নিয়ে সভা করা হয়। সবার মতামত নিয়ে রাস্তা নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে ভুক্তভোগী চাষিরা জমি দিয়েছেন। অন্যরা দিয়েছেন শ্রম। কাজটি শুরু করতে তাঁর নিজের জমিও দিতে হয়েছে। এরপরও অনেক ভালো কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পেরে আনন্দিত।