একাদশ সংসদ নির্বাচন

শেষ দিনের প্রচারণায়ও সহিংসতা

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ ও সেনবাগ, খাগড়াছড়ির দীঘিনালা ও মানিকছড়ি এবং চট্টগ্রামের পটিয়া ও  বাঁশখালীতে নির্বাচনী প্রচারণাকে ঘিরে সংঘর্ষ, পাল্টাপাল্টি হামলা ও ভাঙচুর হয়েছে। এতে বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা আহত হয়েছেন। এদিনেও প্রার্থীর প্রচারের গাড়িতে হামলা ও প্রচারণা কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। প্রথম আলোর প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন। 

নোয়াখালী

শেষ দিনের নির্বাচনী প্রচারণার মিছিলকে কেন্দ্র করে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের রাজগঞ্জ বাজার এবং সেনবাগ উপজেলার নলুয়া গ্রামে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা ও ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনার জের ধরে বেগমগঞ্জের রাজগঞ্জ এলাকায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের সাতটি বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে।

নোয়াখালী-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী বরকত উল্যাহ বুলু অভিযোগ করেন, গতকাল বিকেলে  বেগমগঞ্জের রাজগঞ্জ বাজারে ধানের শীষের মিছিলে  আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা হামলা চালায়। এ সময় পুলিশও হামলায় যোগ দেয়।  হামলায় কমপক্ষে ৮ জন আহত হন। এরপর সন্ধ্যায় রাজগঞ্জ বাজারের আশপাশে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বাড়িতে হামলা হয়।

বেগমগঞ্জ থানার ওসি মো. ফিরোজ আলম মোল্লা বলেন, রাজগঞ্জ এলাকায় কারও বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুরের কোনো ঘটনা কেউ তাঁকে জানায়নি।

নোয়াখালী-২ আসনের বিএনপির প্রার্থী জয়নুল আবদিন ফারুক অভিযোগ করেন, নলুয়া গ্রামে তাঁর সমর্থকেরা ধানের শীষের মিছিল বের করলে নৌকার সমর্থকেরা অতর্কিতে মিছিলে হামলা করে। এতে তাঁর অনেক নেতা-কর্মী আহত হন।

জানতে চাইলে সেনবাগ থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান বলেন, ধানের শীষ ও নৌকার মিছিল নিয়ে দুই পক্ষে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। 

পটিয়া

চট্টগ্রামের পটিয়ায় গতকাল দুপুরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রাম-১২ আসনের অন্তর্গত পটিয়ার ফকিরা মসজিদ এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণাকে ঘিরে দুই দলের কর্মী–সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এ সময় আওয়ামী লীগ সমর্থকদের দুটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

এদিকে একই দিন বিএনপির প্রার্থী এনামুল হকের কৈয়গ্রামের বাড়িতেও হামলার চেষ্টা হয় বলে বিএনপি অভিযোগ করে। 

বঁাশখালী

হামলা থেকে বাঁচতে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে গতকাল দুপুরে শেষ দিনের প্রচারণায় নেমেছেন চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী। তবে এরপরও তাঁর প্রচারণায় হামলা হয়েছে। এর আগে ২১ ডিসেম্বর মাহমুদুলের প্রচারণায় হামলা চালানো হয়। সেদিনের হামলার পর তিনি প্রচারণা বন্ধ রেখেছিলেন। এর ছয় দিন পর গতকাল প্রচারণায় নেমে আবার হামলার মুখে পড়েন তিনি।

লাঙ্গল প্রতীকের নেতা-কর্মীরা জানান, গতকাল বেলা আড়াইটায় উপজেলার প্রধান সড়কের পৌরসভা কার্যালয়ের সামনে মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীর প্রচারণার গাড়িতে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। হামলায় লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীর গাড়িসহ প্রচারণায় থাকা তিনটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। পাশাপাশি হামলায় জমির উদ্দিন (৩১) এবং ইদ্রিস ফকির (৬০) নামের লাঙ্গলের দুই সমর্থকের মাথা ফেটে গেছে। আহত ব্যক্তিরা বৈলছড়ি ইউনিয়নের কেবি বাজারে চিকিৎসা নিয়েছেন।

হামলার বিষয়ে মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, ‘চাম্বলের সমাবেশে হামলার পর প্রচারণা কিছুদিন বন্ধ ছিল। ফের প্রচারণায় নেমে আবার হামলার শিকার হলাম। শেষ দিনের প্রচারণায় হামলার ভয়ে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে প্রচারণায় নেমেছি। হামলায় আমার দুজন কর্মীর মাথা ফেটে গেছে। মোট ১০ জন আহত হয়েছেন।’

চট্টগ্রাম জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরোজুল হক বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। 

মানিকছড়ি

খাগড়াছড়ির মানিকছড়ির বড়ইতলী এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্প পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গত বুধবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে এই ঘটনা ঘটে। আগুনে পুরো নির্বাচনী ক্যাম্প ভস্মীভূত হয়েছে।

খবর পেয়ে দলীয় লোকজন, পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। কিন্তু ততক্ষণে প্রার্থীর পোস্টার, ব্যানার, চেয়ারসহ নির্বাচনী পোস্টার পুড়ে যায়। এ ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগ বিএনপিকে দায়ী করেছে। মানিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ রশীদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে গিয়েছি। নির্বাচনকে ঘিরে উপজেলায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।’ 

দীঘিনালা

খাগড়াছড়ির দীঘিনালার দুর্গম রেংক্যার্যা এলাকায় গত বুধবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ-বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে আওয়ামী লীগের পাঁচজন ও বিএনপির তিনজন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ কর্মী মো. আবুল খায়ের বাদী হয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতিসহ ৩২ জনের নামে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মামলা দায়ের করেছেন।

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, বুধবার সন্ধ্যা সাতটায় রেংক্যার্যা এলাকায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা আওয়ামী লীগের কর্মীদের ওপর অতর্কিতে হামলা চালান। এ সময় আওয়ামী লীগের পাঁচ কর্মী আহত হন।

বিএনপির অভিযোগ, রেংক্যার্যা এলাকায় আওয়ামী লীগই তাঁদের ওপর হামলা করেছে। হামলায় বিএনপির কর্মী মো. হালিম (৩০), মো. নূরুল ইসলাম (৪৫) ও মো. রবিউল ইসলাম (২৮) আহত হন। তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।