নারায়ণগঞ্জ–১

শেষমুহূর্তে বাড়ি বাড়ি পুলিশি অভিযান

কাজী মনিরুজ্জামান
কাজী মনিরুজ্জামান

মামলা হওয়ার আগের রাতেই বিএনপির ১২ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে ধানের শীষের প্রার্থী কাজী মনিরুজ্জামানের নেতা-কর্মী। নির্বাচনে তাঁদের পোলিং এজেন্ট হিসেবে ও ভোটকেন্দ্রের বাইরে কাজ করার কথা ছিল। তাঁদের বিরুদ্ধে গতকাল বুধবার দায়ের করা মামলায় চাঁদার দাবিতে দোকান পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।

এই আসনে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকার প্রার্থী বর্তমান সাংসদ গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দায়ের করা মামলাতেও তাঁর নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ মনিরুজ্জামানের। প্রচারণা তো দূরের কথা, মামলা-হামলা ঠেকাতেই অস্থির তিনি। নেতা-কর্মীরা এলাকাছাড়া। রূপগঞ্জে ধানের শীষের পোস্টারও বিরল।

সর্বশেষ গত মঙ্গলবার রাতে গ্রেপ্তার ১২ নেতা-কর্মীর মধ্যে রয়েছেন ভুলতা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্বাস উদ্দিন, গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন যুবদলের নেতা নয়ন মিয়া, শহীদুল্লাহ্, আশরাফুল ইসলাম, মো. দিলা, নবী হোসেন, তারাব পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর সোহেল মিয়া, দাউদপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের নেতা মো. শাহীন প্রমুখ।

মামলার বাদী বাগলা এলাকার মুদি দোকানদার আবদুল মোতালেব। মামলায় ৭৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। তাঁরা সবাই বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মী। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, মোতালেবের মুদি দোকানে হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ভাঙচুর ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আসামিরা পালিয়ে গেছে।

তবে মোতালেব প্রথম আলোকে বলেন, ২২ ডিসেম্বর রাতে বিএনপির একটি মিছিল থেকে তাঁর দোকানে হাঙ্গামা করা হয়। এরপর ওই রাতেই তাঁর দোকানটি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিএনপির স্থানীয় কিছু নেতা-কর্মী এর আগে তাঁর কাছে চাঁদা চেয়ে বলেছিলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে দোকান করতে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হবে। সে কারণে তিনি বিএনপির লোকজনকেই সন্দেহ করেন। তবে থানায় গিয়ে তিনি একটি কাগজে স্বাক্ষর করেছেন, কারও নাম উল্লেখ করেননি। যাঁদের নাম এখানে বলা হয়েছে, তাঁদের বেশির ভাগকেই তিনি চেনেন না বলে জানান।

এই ব্যবসায়ী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মরি আমার দুঃখে, ভাই। আমার দোকানটার একটা সুতাও বাঁচে নাই। এই দোকান দিয়া পুরা সংসারটা চলে আমার। এহন আমি কী করতাম। ২০০১ সালের পরে বিএনপির লোকজন আমার দোকান ভাঙছিল। এরপর আমারে সপ্তাহে তিন দিন নারায়ণগঞ্জ গিয়া হাজিরা দিতে হইছে।...আমি নিরীহ লোক ভাই, রাজনীতি বুঝি না।’

তবে বিএনপির প্রার্থী কাজী মনিরুজ্জামান বলেছেন, যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁরা এই নির্বাচনে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রের পোলিং এজেন্ট হতেন এবং কেন্দ্রের বাইরে নির্বাচনী কাজে মুখ্য ভূমিকা পালন করতেন। তাঁরা যাতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও দায়িত্ব পালন করতে না পারেন, সে জন্য ভোট গ্রহণের মাত্র তিন দিন আগে সাজানো মিথ্যা মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর চারটি মামলায় ১৯৭ জন নেতা-কর্মীকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।

স্থানীয় লোকজন জানান, রূপগঞ্জের বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। কেউই বাড়িতে থাকছেন না। গ্রেপ্তার আব্বাস উদ্দিনের ছেলে রোমান জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাত নয়টায় ডিবি-পুলিশ তাঁর বাবাকে ধরে নিয়ে গতকাল নতুন একটি মামলায় আদালতে সোপর্দ করেছে। তাঁকে ধরে নেওয়ার সময় প্রচণ্ড মারধর করা হয় বলে অভিযোগ রোমানের।

যুবদলের নেতা নয়ন মিয়ার ভাই গোলাম মোস্তফা বলেন, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টায় হোরগাও এলাকার বাড়ি থেকে তাঁর ছোট ভাই নয়নকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। নয়নকে মারতে মারতে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় তারা। বাড়ির লোকনের সঙ্গেও খারাপ আচরণ করে।

জানতে চাইলে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ হক বলেন, জনৈক মোতালেব নামের এক ব্যক্তি তাঁর দোকানে আগুন, ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ এনে মামলা করেছেন। ওই মামলায় ডিবি-পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করেছে। মামলায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের আসামি করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাদী তো বিএনপির কারও পদ-পদবি মামলায় উল্লেখ করেননি। হয়তো মামলাটি ডিবি-পুলিশে হস্তান্তর হবে, এ কারণে তারা তাঁদের গ্রেপ্তার করেছে।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ আতাউর রহমান বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর নতুন মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার করার কথা না। অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। তবে বিএনপির প্রার্থী মনিরুজ্জামান বলেন, তাঁর শতাধিক নেতা-কর্মীর বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর করা হয়েছে। তারপরও তাঁরা ৩০ ডিসেম্বর ভোটকেন্দ্রে যাবেন বলে তিনি আশাবাদী।