বাগেরহাট-৩ আসন

শেখ ফরিদুল, নাকি আবদুল ওয়াদুদ

ফরিদুল ইসলাম ও আবদুল ওয়াদুদ
ফরিদুল ইসলাম ও  আবদুল ওয়াদুদ

সর্বশেষ ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে বাগেরহাট-৩ আসনে প্রার্থী দিয়েছিল বিএনপি। এরপর থেকে মোংলা ও রামপাল উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনে আর বিএনপি প্রার্থী দেয়নি। আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আসছিল জামায়াত। কিন্তু এবারের নির্বাচনে বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের জোরালো দাবি ছিল এই আসনে তাঁদের দলীয় প্রার্থী দেওয়ার। অবশেষে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন বাগেরহাট জেলা বিএনপির সহসভাপতি শেখ ফরিদুল ইসলাম।

অন্যদিকে এই আসনে জামায়াতে ইসলামীর আবদুল ওয়াদুদকে ২০-দলীয় জোট থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে দুই দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যেই বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। তবে দুই নেতাই দাবি করছেন, তাঁদের নিজ নিজ মনোনয়নই চূড়ান্ত।

১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত চারটি সংসদ নির্বাচনেই এই আসনে আওয়ামী লীগের বিপক্ষে প্রার্থী দিয়েছিল জামায়াত। সব কটি নির্বাচনেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন জামায়াতের প্রার্থী। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে এই আসন থেকে বিএনপি ও জামায়াত আলাদাভাবে নির্বাচন করেছিল। বিএনপির প্রার্থী সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান পেয়েছিলেন ১৭ হাজার ৮১২ ভোট। জামায়াতের প্রার্থী গাজী আবু বকর সিদ্দিক পেয়েছিলেন ৩২ হাজার ২০৫ ভোট। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনেও বিএনপি ও জামায়াত আলাদা নির্বাচন করেছিল। জামায়াতের প্রার্থী গাজী আবু বকর সিদ্দিক পেয়েছিলেন ৩৪ হাজার ৩২১ ভোট। আর বিএনপির প্রার্থী এ ইউ আহমেদ পান ২১ হাজার ৫৫০ ভোট। ২০০১ সাল থেকে জোটবদ্ধ নির্বাচনে এই আসনটি জামায়াতকে ছেড়ে দেয় বিএনপি। ২০০১ ও ২০০৮ সালের দুটি নির্বাচনেই জামায়াতের প্রার্থী পরাজিত হন।

২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুন নাহার প্রায় ৩১ হাজার ভোটের ব্যবধানে জামায়াত প্রার্থী আইনজীবী মাওলানা আবদুল ওয়াদুদকে পরাজিত করে সাংসদ নির্বাচিত হন। সেই থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা দাবি তুলে আসছিলেন এই আসনে বিএনপির প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হোক। তাহলে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। শেষ পর্যন্ত বিএনপির নেতা-কর্মী-সমর্থকদের সেই আশা পূর্ণ হয়েছে। ১০ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় বাগেরহাট জেলা বিএনপির সহসভাপতি রামপাল সদর উপজেলার বাসিন্দা শেখ ফরিদুল ইসলামকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এই আসনে বিএনপির ১১ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন। কেন্দ্র গত মঙ্গলবার ফরিদুলের হাতে দলীয় মনোনয়নের চিঠি তুলে দেয়।

শেখ ফরিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গত দুটি নির্বাচনে এই আসন থেকে জামায়াতের প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন। মোংলা ও রামপালে ৫০ থেকে ৫৫ হাজার হিন্দু ও খ্রিষ্টানের ভোট রয়েছে। বিগত নির্বাচনগুলোতে জামায়াতের প্রার্থী এই ভোটব্যাংক থেকে কোনো ভোট পাননি। বিএনপির প্রার্থী হিসেবে তিনি এই ভোটারদের একটি বড় অংশের ভোট পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর বাগেরহাট জেলা নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল ওয়াদুদ বলেন, তিনি জোটগতভাবে মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনি বিগত বছরগুলোতে মামলা খেয়েছেন, বেশ কয়েকবার কারাবরণ করেছেন। তারপরও নেতা-কর্মীদের পাশে সব সময় ছিলেন। ভবিষ্যতেও থাকবেন। তিনি আরও বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনে নতুন প্রার্থী ছিলাম। সে কারণে তখনকার হিসাব এখন করলে চলবে না। এবারের নির্বাচন সুষ্ঠু হলে বিজয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী আমি।’

ফরিদুল ইসলাম গতকাল দুপুর ১২টায় রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা তুষার কুমার পালের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এ সময় মোংলা পৌর বিএনপির সহসভাপতি মো. খলিলুর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক মো. আবুল কালাম, রামপাল উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি শেখ শহীদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক খাজা মঈন উদ্দিন আখতার ও হুড়কা ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি মো. বাবুল হাওলাদার উপস্থিত ছিলেন।

বাগেরহাট জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাসের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন জামায়াতের প্রার্থী আবদুল ওয়াদুদ।