‘ভোটের দিন ভোটকেন্দ্র পাহারা দিয়ে যারা নৌকায় ভোট দিবে, তারাই কেবল ভোটকেন্দ্রে যাবে, অন্য কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। এই কাজই করে ফেলতে হবে।’ রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম গতকাল শনিবার বিকেলে উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের ইশ্বরীপুরে যুবলীগ আয়োজিত এক নির্বাচনী জনসভায় নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত গোদাগাড়ী পৌরসভা নির্বাচনের উদাহরণ টেনে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘গোদাগাড়ী নির্বাচনী এলাকা রাজাকারের মতো এলাকা। আমার বাড়িও ওখানে, কিছু মনে কইরেন না।’
এসব কথা শুনে নেতা–কর্মীরা অট্টহাসিতে ফেটে পড়েন। তিনি বলেন, ‘সেখানেই যদি সব সেন্টার দখল করে নিয়ে নৌকার প্রার্থী জিততে পারে, আপনারা পারবেন না? দেওপাড়া তো আমাদের নৌকার ঘাঁটি, আপনারা পারবেন না, যুবলীগের নেতা–কর্মীরা, আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা পারবেন না, মহিলা লীগের নেতা–কর্মীরা পারবেন না! আমাদের অবশ্যই ১১ তারিখে দেখায়ে দিতে হবে, আমরা অবশ্যই ন্যায়ের পথে আছি, আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আছি, আমরা আলহাজ ওমর ফারুক চৌধুরীর সঙ্গে আছি, আমরা বেলাল উদ্দিন সোহেলের (দেওপাড়া ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী) পক্ষে আছি।’
যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আপনারা আজকে থেকেই প্রস্তুত থাকুন। নৌকার সঙ্গে যারা বেইমানি করবে, তাদের হাত-পা ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে হবে। আমরা সম্মান দিতে দিতে আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে একটি কথাই বলতে চাই, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
গোদাগাড়ীর এই ইউনিয়নগুলোর বরাদ্দ উপজেলার মাধ্যমেই দেন। আমি আপনাদের মাধ্যমেই নৌকার ভোটে নির্বাচিত হয়েছি। আমি কথা দিচ্ছি, এই দেওপাড়া ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করলে আমি এই ইউনিয়নে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেব।’ এ ঘোষণা শুনে উপস্থিত নেতা–কর্মীরা জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে সভাস্থল মুখর করে তোলেন।
ইউপি সদস্য পদে যেসব যুবলীগ নেতা নির্বাচন করছেন, তাঁদের উদ্দেশে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আপনারা ভোট করেন, তাতে আমার আপত্তি নাই। তবে আপনাদের প্রথমেই নৌকার জন্য ভোট চাইতে হবে। বলতে হবে, নৌকা না জিতলে কোনো উন্নয়ন হবে না। নৌকা জিতলেই আপনার দাম আছে। অনেকেই ভাবে, সব দলের ভোট আছে। এই চিন্তা করলে হবে না। ডিজিটাল যুগে আপনাদের চেঞ্জ হতে হবে। আপনি নৌকার সঙ্গে থাকবেন। নৌকার মাধ্যমে নেতা হবেন। আর ভোটের সময় অন্য গীত গাইবেন, এটা সহ্য করা হবে না।’
কেন্দ্র পাহারা দেওয়ার ব্যাপারে বক্তব্য জানতে চাইলে মুঠোফোনে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, তিনি শুধু যুবলীগের নেতা–কর্মীদের উজ্জীবিত করার জন্য গোদাগাড়ী পৌরসভার নির্বাচনের উদাহরণ টেনে বলেন, সেখানেই যদি তাঁরা নৌকার প্রার্থীকে জয়ী করতে পারেন, তাহলে এখানে কেন পারবেন না। তিনি বলেন, ‘আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। গোদাগাড়ীতে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
দ্বিতীয় ধাপে আগামী ১১ নভেম্বর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ সময় গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের নির্বাচন হবে। এর প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা যাবে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত। পরদিন ২৭ অক্টোবর প্রতীক বরাদ্দ।
এই ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক আখতারুজ্জামানের ভাতিজা মাসুদ ইকবাল। আখতারুজ্জামান এই ইউনিয়নের তিন মেয়াদের চেয়ারম্যান। এ ছাড়া থানা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীনের মনোনয়ন বাছাইয়ে বাতিল করা হয়েছে। তিনি আপিল করেছেন। তিনি বলছেন, তিনি ঋণখেলাপি নন। আপিলে তাঁর প্রার্থিতা বহাল হবে বলে তাঁর বিশ্বাস।