শীতে এত ইলিশ

সাগরে এবার শীত মৌসুমেও মিলছে ইলিশ। গতকাল বাগেরহাটের কেবি মৎস্য আড়তে। প্রথম আলো
সাগরে এবার শীত মৌসুমেও মিলছে ইলিশ। গতকাল বাগেরহাটের কেবি মৎস্য আড়তে।  প্রথম আলো

শীতের মৌসুমে সাগর ও উপকূলে সাধারণত ইলিশ মাছ তেমন পাওয়া যায় না, প্রচলিত এই ধারণা দীর্ঘদিনের। তবে এবার যেন তার ব্যতিক্রম ঘটিয়ে বাজারে উল্লেখযোগ্য হারে ইলিশের দেখা পাওয়া যাচ্ছে। 

বাগেরহাটের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র শহরের কেবি বাজারে বিভিন্ন আকৃতির ইলিশে সয়লাব। সরবরাহ থাকায় কেবি পাইকারি বাজার ছাড়াও শহরের স্থানীয় খুচরা বাজারগুলোতেও ইলিশ মিলছে মোটামুটি সহনীয় দামেই।

শহরের কেবি মৎস্য আড়তে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া ট্রলারগুলো ভিড়তে শুরু করে ভোর থেকে। সকাল হওয়ার আগেই শুরু হয় এখানের ব্যস্ততা। মূলত পাইকারি এই মাছের আড়ত বেশি জমজমাট থাকে ইলিশের মৌসুমে। শীতে ইলিশ কম মেলায় অন্য সময়ের তুলনায় এই বাজারের ব্যস্ততা থাকে কম। তবে গতকাল রোববার ভোরে গিয়ে দেখা যায় ভিন্নচিত্র। ভোর থেকেই জমজমাট দড়াটানা নদীতীরের এই বাজার। কেউ ট্রলার থেকে ঝাঁকা ভরে ইলিশ উঠাচ্ছেন, আবার কেই মাথায় করে নিয়ে যাচ্ছেন আড়তে। ব্যবসায়ী, আড়তদাররা হাঁকডাক দিয়ে বিক্রি করছেন মাছ।

ইলিশের আমদানি বেশি হওয়াতে পাইকারি বিক্রেতাদের পাশাপাশি খুচরা ক্রেতারাও বাজারের চেয়ে একটু কম দামে ইলিশ কেনার জন্য ভিড় করেছেন সেখানে। ইলিশ কিছুটা সাধ্যের মধ্যে থাকলেও শীতকালীন মাছ ঢেলা, চেলা, মেদ, কঙ্কন, ফেয়া, বোতল, জাবা, ছুড়ি ও লইট্টার দাম তুলনামূলক বেশি হওয়ায় অনেক ক্রেতার মন খারাপও দেখা গেছে।

সাগর থেকে মাছ নিয়ে আসা ট্রলারের মালিক সুজন সিকদার বলেন, ‘শীতের সময়ে সাধারণত মাছ কম পাওয়া যায়, কিন্তু এবার শীতের মৌসুমে প্রচুর মাছ পাচ্ছি আমরা। গেল ১০ বছরের তুলনায় এ বছর শীতে সব থেকে বেশি মাছ পেয়েছি। সাগরের গভীর পানি থেকে কম পানিতে মাছ চলাচল বেশি হওয়ায় জেলেদের জালে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে।’

মাছ ব্যবসায়ী মুজিবুর রহমান বলেন, শীতের মৌসুমে সাগরের ঢেলা, চেলা, মেদ, কঙ্কনসহ অন্যান্য মাছ অনেক কমে গেছে। ইলিশ মাছ অনেক বেশি পাওয়ায় দামও নাগালের মধ্যে রয়েছে। মাছের আকার ছোট হলেও মাছগুলোর পেটে ডিম রয়েছে। ৪০০ থেকে ৬০০ গ্রামের প্রতি কেজি মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ক্রেতা শহিদুল ইসলাম বলেন, ইলিশের মৌসুমের সময়ের চেয়ে বর্তমানে মাছের দাম অনেক কম। আড়তে মাছও বেশি। একসঙ্গে একটু বেশি কেনায় দামও কম পড়েছে। বাগেরহাট কেবি বাজার মৎস্য আড়তদার সমিতির সভাপতি আবেদ আলী বলেন, এবারের শীতের মৌসুমে তুলনামূলক ইলিশের আমদানি অনেক বেশি। ইলিশ বেশি হওয়ায় জেলে, ব্যবসায়ী ও ক্রেতা সবাই খুশি। বাগেরহাট আড়তে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পাইকাররা এখান থেকে ইলিশ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা খালেদ কনক বলেন, প্রজনন মৌসুমে ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ থাকাসহ সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে সমুদ্রে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে। ফলে জেলেদের জালে বেশি ইলিশ ধরা পড়ছে। সরকারের সচেতনতামূলক কার্যক্রম অব্যাহত থাকলে প্রতিবছর উৎপাদনও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।