শীতের ফুলে রঙিন নার্সারি

নার্সারিতে ফুটে আছে বাহারি রঙের ফুল। রোববার আগারগাঁওয়ের একটি নার্সারি থেকে তোলা ছবি। প্রথম আলো
নার্সারিতে ফুটে আছে বাহারি রঙের ফুল। রোববার আগারগাঁওয়ের একটি নার্সারি থেকে তোলা ছবি।  প্রথম আলো

পথের ধারের নার্সারিতে ফুটে আছে লাল, হলুদ, বেগুনি, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, গাঁদা, কসমসসহ বাহারি রঙের ফুল। এর পাশের ফল ও সবজির গাছগুলোতে ধরে আছে সবুজ পেয়ারা, লেবু, কমলা। শীত এখনো জাঁকিয়ে না বসলেও শীতের ফুলে রঙিন হয়ে উঠেছে পথের ধারের নার্সারিগুলো। চলতি পথে সেদিকে তাকালে মনও প্রফুল্ল হয়ে ওঠে।

আগারগাঁওয়ের একটি নার্সারিতে গতকাল সোমবার ফুলের চারা কিনতে এসেছিলেন গৃহিণী তানিয়া ইসলাম। নার্সারি ঘুরে তিনি পছন্দ করলেন ডালিয়া, জিনিয়া ও ডায়ানথাসের চারা। সঙ্গে নিলেন একটি টমেটোর চারা।  বলছিলেন, ‘টবে করে এই চারাগুলো রাখা হবে বাসার বারান্দায়। প্রতি শীত মৌসুমের শুরুতেই ফুলের গাছ কিনে রাখি। বাসার ভেতর বিভিন্ন রঙের ফুল দেখতে বেশ ভালো লাগে।’

শীতের শুরুতে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গার নার্সারিগুলো ভরে উঠছে সবুজ আর বাহারি রঙে। বাসা কিংবা অফিসের সৌন্দর্য বাড়াতে অনেকেই আসছেন এই নার্সারিগুলোয়। চলছে বিকিকিনি। চারা তৈরিসহ পরিচর্যার ব্যস্ততা বেড়েছে বিক্রেতাদের।

আগারগাঁওয়ের জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতাল) সামনে পাশাপাশি গড়ে উঠেছে ৯টি নার্সারি। গতকাল সেখানে দেখা যায়, পলিব্যাগে ও টবে সাজিয়ে রাখা ফুল, ফল ও শীতের সবজির চারায় পানি ছিটিয়ে দিচ্ছেন নার্সারির কর্মীরা। কোনো টবে চলছে নতুন মাটি ভরানোর কাজ। ক্রেতারা এলেই ঘুরে দেখানো হচ্ছে হরেক রকমের গাছের চারা।

>বাসাবাড়ির বারান্দা আর ছাদ সাজাতে রাজধানীর নার্সারিগুলো থেকে ফুল–ফলের চারা কিনছেন বৃক্ষপ্রেমীরা।

বিক্রেতারা জানালেন, ফুলের মধ্যে ডায়ানথাস, পিটুনিয়া, ডালিয়া, সালভিয়ার চাহিদা বেশি। আর সবজি ও ফলের মধ্যে আমড়া, লেবু, টমেটো, কমলা ও পেয়ারার চারা বেশি বিক্রি হয়। ফুলের ছোট চারাগুলো ৮ থেকে ১০ টাকা আর বড়গুলো বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩৫ টাকায়। সবজি চারা ৮ থেকে ২০ টাকা ও ফলের চারা ১০০ থেকে শুরু। চারাগুলো নার্সারিতেই তৈরি করা হয়। আর চাহিদা বেশি থাকলে চারা আনা হয় সাভার, কেরানীগঞ্জ, যশোর ও বগুড়া থেকে।

রাজধানীর শ্যামলী থেকে আসা রাশিদুল ইসলামের সঙ্গে কথা হচ্ছিল অরণ্যক নার্সারির সামনে। বলছিলেন, ‘কেনার সময় চারার বয়স আর গোড়া দেখে কিনছি। বেশি বয়সী চারার নিচের দিকের পাতাগুলো মরা থাকে। আর গোড়ার মাটি শক্ত থাকলে সেই চারা মজবুত হয়। বহন করার সময় নষ্ট হয় না।’

বিক্রেতাদের দেখা গেল, চারা বিক্রির সঙ্গে সঙ্গে এর পরিচর্যার বিষয়গুলোও জানাচ্ছেন ক্রেতাদের। ‘পরিবেশ সহায়ক নার্সারি’র সামনে কলাবাগান থেকে আসা এক ক্রেতার কাছে চারা বিক্রি করছিলেন এর স্বত্বাধিকারী ফোরকান আলম। ক্রেতাকে বলছিলেন, রোদ আসে এমন জায়গায় চারা রাখতে হবে। ব্যবহার করতে হবে জৈব অথবা রাসায়নিক সার।

প্রথম আলোকে ফোরকান বলছিলেন, পোকামাকড় দমনের জন্য কীটনাশকের বিকল্প হিসেবে এখন ফেরোমেন ফাঁদ পদ্ধতি ব্যবহার করেন অনেকে। আগারগাঁও ছাড়াও রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর, শাহবাগে ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় দোয়েল চত্বর, ঢাকা কলেজের সামনে, এলিফ্যান্ট রোড, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী সড়কের পাশের ফুটপাতেও অনেক নার্সারি গড়ে উঠেছে। এসব নার্সারিতেও মৌসুমি ফুলের চারার সন্ধানে আসছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা।