পাবনা–১ ও ২ আসন

শীতার্ত চরবাসী পায়নি ভোটের তাপ

আবু সাইয়িদ, শামসুল হক টুকু
আবু সাইয়িদ,  শামসুল হক টুকু

রাত পোহালেই ভোট। অথচ পাবনার বেড়া উপজেলার চরাঞ্চলে তেমন কোনো নির্বাচনী আমেজই নেই। অন্যবার সংসদ নির্বাচনে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকায় চর এলাকায়ও মিছিল, মিটিংয়ে ছড়িয়ে পড়ে ভোটের উত্তাপ। কিন্তু এবার তা নেই বললেই চলে। প্রচার-প্রচারণা যা হয়েছে তাও অনেকটা একতরফা। ফলে ভোট নয়, কয়েক দিন ধরে শৈত্যপ্রবাহের কবল থেকে রক্ষাই এসব চর এলাকার মানুষের এখন প্রধান ভাবনার বিষয়।

পাবনার বেড়া উপজেলার একটি বড় অংশ যমুনা ও পদ্মা নদীর চর নিয়ে গঠিত। দুই নদীর প্রায় ২৫টি চরে বাস করে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। বেড়ার চরগুলো দুটি সংসদীয় আসনে বিভক্ত: পাবনা-১ (সাঁথিয়া ও বেড়ার একাংশ) ও পাবনা-২ (সুজানগর ও বেড়ার অপরাংশ)। পাবনা-১ আসনে হাটুরিয়া-নাকালিয়া ও নতুনভারেঙ্গা ইউনিয়নে প্রায় ১০টি চর রয়েছে। অন্যদিকে পাবনা-২ আসনে পুরানভারেঙ্গা, জাতসাখিনী, রূপপুর, মাসুন্দিয়া ও ঢালারচর ইউনিয়নে অন্তত ১৫টি চর রয়েছে।

এদিকে চরবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এমনিতেই মূল এলাকার তুলনায় চরে শীত পড়ে বেশি। এর মধ্যে আবার কয়েক দিন ধরে শৈত্যপ্রবাহ বইতে থাকায় চরের মানুষ প্রচণ্ড শীতে কাঁপছে। এর মধ্যে নির্বাচনে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ অবস্থা তৈরি না হওয়ায় ভোটের উত্তাপও চরে পৌঁছেনি।

চরের ভোটাররা জানান, পাবনা-১ আসনে আটজন প্রার্থীর মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে নৌকা প্রতীকের আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামসুল হক টুকু ও ধানের শীষ প্রতীকের গণফোরামের প্রার্থী আবু সাইয়িদের মধ্যে। অন্যদিকে পাবনা-২ আসনে চারজন প্রার্থীর মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে নৌকা প্রতীকের আওয়ামী লীগ প্রার্থী আহমেদ ফিরোজ কবির ও ধানের শীষ প্রতীকের বিএনপির প্রার্থী সেলিম রেজা হাবিবের মধ্যে। দুটি আসনেই ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে মিছিল, সমাবেশসহ প্রচারণা ছিল না বললেই চলে। অথচ নৌকার পক্ষে ছিল জমজমাট প্রচারণা।
তবে এই জমজমাট প্রচারণায় উপজেলার মূল এলাকা মুখর হলেও নদী পেরিয়ে চরগুলোতে প্রচারণার ঢেউ এসে পৌঁছেনি। চরগুলোতে ছিল মূল এলাকার একেবারে উল্টো অবস্থা। নৌকার দুই প্রার্থী চরে খুব কমই গিয়েছেন। আর ধানের শীষের প্রার্থী বলতে গেলে গণসংযোগের জন্য যানইনি।

নগরবাড়ী নৌঘাটে বসে কথা হয় চরকল্যাণপুরের বাসিন্দা মো. আসাদুল সঙ্গে। দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালান তিনি। আক্ষেপ করে আসাদুল বলেন, ‘এবার ভোট হতেছে এক পাইল্যা (একতরফা)। তাই আমাগরে কুনু দাম নাই। শীতের একখান কাপড় দেওয়ার জন্নেও কারও দেখা নাই। অথচ এর আগের নির্বাচনে কতজন কত কী নিয়্যা আইস্যা খোঁজ নিছে।’

যমুনার আরেক চর চরনাকালিয়া গ্রামে বাস করেন ওয়ার্কার্স পার্টির পাবনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘একদিকে তীব্র শীত, অন্যদিকে একতরফা প্রচারণা। তাই চর এলাকায় ভোট নিয়ে কোনো মাতামাতি নেই।’

তবে বেড়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘চর এলাকার ভোটাররাও আমাদের কাছে সমান সম্মানের। চরবাসীর কাছে আমরা বারবার গিয়েছি, তাঁদের সুখ-দুঃখের কথা শুনেছি।’

বেড়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. রইজউদ্দিন বলেন, ‘দুটি আসনেই (পাবনা-১ ও ২) আমাদের প্রচারণায় বাধা দেওয়া হয়েছে, মামলা-হামলা হয়েছে। এর ফলে চর এলাকায় আমরা স্বাভাবিক প্রচারণা চালাতে পারিনি। তবু চরবাসী আমাদের ভোট দেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন।’