খুলনায় শিশু রাকিব হাওলাদার হত্যা মামলায় দুই আসামি শরীফ মোটরসের মালিক মো. শরীফ ও তাঁর সহযোগী মিন্টুর মৃত্যুদণ্ড পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে আজ বুধবার ৬৯ পৃষ্ঠার রায়টি প্রকাশ করা হয়।
বিচারিক আদালতের রায়ের পর আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আপিলের ওপর শুনানি শেষে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ৪ এপ্রিল রায় ঘোষণা করেন। রায়ে দুই আসামির দণ্ড সংশোধন করে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। জরিমানার অর্থ রাকিবের পরিবারকে দিতে হবে। এতে ব্যর্থ হলে দুই আসামিকে আরও দুই বছর করে কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে বলে রায় বলা হয়। এরপর আজ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পেল।
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে নিয়োজিত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল হক জহির প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। অনুলিপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করার সুযোগ আছে। দুই আসামিকে বিচারিক আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করবে। আপিল দায়ের প্রক্রিয়াধীন আছে।
হাইকোর্টে শরীফের পক্ষের আইনজীবী গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, এখনো রায়ের কপি পাইনি। অনুলিপি হাতে পাওয়ার পর মক্কেলের সঙ্গে আলোচনা করে আপিলের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। মিন্টুর আইনজীবী এ এস এম আবদুল মুবিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘রায়ের কপি হাতে পাইনি। রায় পাওয়ার পর আপিল করা হবে।’
রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্য ও নথিপত্র পর্যালোচনা করে রায়ে বলা হয়, ঘটনার পর আসামিরা পালিয়ে যাননি বরং শিশুটিকে (রাকিব) বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন। ঘটনাস্থল থেকে হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। এ ছাড়া আসামিরা অতীতে কোনো ফৌজদারি অপরাধে সম্পৃক্ত ছিলেন, এমন রেকর্ডও পাওয়া যায়নি। ন্যায়বিচারের স্বার্থে তাঁদের সাজা মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন হওয়া সমীচীন।
২০১৫ সালের ৩ আগস্ট খুলনার টুটপাড়ায় শরীফ মোটরস নামে এক মোটরসাইকেলের গ্যারেজে মলদ্বারে কম্প্রেশার মেশিনের মাধ্যমে বাতাস ঢুকিয়ে রাকিবকে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় পরদিন রাকিবের বাবা বাদী হয়ে গ্যারেজ মালিক শরীফ, শরীফের সহযোগী মিন্টু ও মা বিউটি বেগমের বিরুদ্ধে সদর থানায় হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় ওই বছরের ৮ নভেম্বর খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক রায় দেন। এরপর বিচারিক আদালতের রায়সহ মামলার নথিপত্র হাইকোর্টে আসে ও ডেথ রেফারেন্স হিসেবে নথিভুক্ত হয়। দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে দুই আসামি আপিল করেন। প্রধান বিচারপতির নির্দেশে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ মামলার পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) প্রস্তুতের পর তা শুনানির জন্য ওই বেঞ্চ ওঠে। ১১ কার্যদিবস শুনানি শেষে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল খারিজ করে ৪ এপ্রিল ওই রায় দেন উচ্চ আদালত।