শিশু ওয়ার্ড নয়, আগুন ছড়ায় নিচতলায় শিক্ষকের ঘর থেকে

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি ভবনে আগুন লাগে । ঢাকা, ১৪ ফেব্রুয়ারি। ছবি: খালেদ সরকার
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি ভবনে আগুন লাগে । ঢাকা, ১৪ ফেব্রুয়ারি। ছবি: খালেদ সরকার
>
  • সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে আগুন
  • বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত
  • দুর্ঘটনার সময় হাসপাতাল থেকে ১২টি কম্পিউটার চুরি

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ভবনের তিনতলার শিশু ওয়ার্ড থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়—প্রথমে এমনটাই দাবি করেছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে গঠিত একটি তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে, শিশু ওয়ার্ড থেকে নয়, আগুন প্রথমে লেগেছিল ভবনের নিচতলায় কলেজের একজন শিক্ষকের কক্ষে। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট (গোলযোগ) থেকে ওই আগুনের সূত্রপাত হয়, যা পরে দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় ছড়িয়ে পড়ে।

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আগুন লাগে রাজধানীর এই সরকারি হাসপাতালে। ওই দিনই স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বাবলু কুমার সাহাকে প্রধান করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে মন্ত্রণালয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও ৯ সদস্যের পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে। এ ছাড়া ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতাল ভবনের নিচতলায় মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক এ এইচ এম ফিরোজ, কলেজের উপাধ্যক্ষ শাহাদত হোসেনসহ কয়েকজন শিক্ষকের কক্ষ রয়েছে। এসব কক্ষের পাশেই স্টোররুম। গত বৃহস্পতিবার কলেজ ছুটির পর শিক্ষকেরা কক্ষে তালা মেরে চলে যান। সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে অধ্যাপক ফিরোজ অথবা অধ্যাপক শাহাদত হোসেনের কক্ষে শর্টসার্কিটের ঘটনা ঘটে। এরপর আগুন অন্য শিক্ষকদের কক্ষে ও পাশের স্টোররুমে ছড়ায়।

আজ রোববার তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হবে বলে জানান ওই সদস্য। তবে তিনি নাম প্রকাশ করতে চাননি।

এদিকে কলেজের উপাধ্যক্ষ শাহাদত হোসেন জানান, অধ্যাপক ফিরোজ ও কয়েকজন শিক্ষকের কক্ষসহ তাঁর নিজের কক্ষটি ওই দিন আগুনে পুড়ে যায়।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এলাকার সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল দেশের অন্যতম বৃহৎ হাসপাতাল। ৮৫০ শয্যার এই হাসপাতালে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকে ১ হাজার ২০০-এর মতো। এ ছাড়া বহির্বিভাগে প্রতিদিন ৪ হাজারের বেশি রোগী সেবা নেন।

অগ্নিকাণ্ডের পর ধীরে ধীরে হাসপাতালের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। একমাত্র শিশু ওয়ার্ড ছাড়া হাসপাতালের অন্য সব ওয়ার্ড চালু হয়েছে। গতকাল বিভিন্ন ওয়ার্ডে ৮৬৫ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। বহির্বিভাগে বিকেল পর্যন্ত সেবা নিয়েছেন ১ হাজার ৭৮১ জন ও জরুরি বিভাগে ২৯৪ জন। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ছিলেন ৭ জন। তাঁদের ৬ জন আগুনের ঘটনার আগে থেকেই ছিলেন।

হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে শয্যা রয়েছে ৬০টি। অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে এই ওয়ার্ডে উৎকট গন্ধ। দেয়াল ও ছাদে পোড়া দাগ। পুরো ওয়ার্ড রং করার পর খুব শিগগির শিশুদের জন্য তা খোলা হবে বলে জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আগুন লাগার সময় ওয়ার্ডে ভর্তি ছিল ৭২ শিশু। তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

এদিকে দুর্ঘটনার সময় হাসপাতালের বিভিন্ন কক্ষ থেকে ১২টি কম্পিউটার চুরি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নিরূপণ করার সময় গতকাল বিষয়টি ধরা পড়ে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, আগুন লাগার পর কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না। ওই সময় রোগী ও স্বজনদের সহায়তায় বাইরে থেকে শত শত মানুষ হাসপাতালে ঢুকেছিল। তাদের মধ্যে দুষ্কৃতকারীরাও থাকতে পারে, যারা ওই ঘটনা ঘটিয়েছে।

হাসপাতালের পরিচালক উত্তম কুমার বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, আগুনে ১৫-২০টি শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র, ২০০টি বৈদ্যুতিক পাখা, ৫-৬টি কম্পিউটার, গজ-ব্যান্ডেজ, ওষুধ, সিরিঞ্জ, কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিসের কাজে ব্যবহৃত তরল পুড়ে গেছে। এ ছাড়া আগুন লাগার ওই সময়টায় কম্পিউটারের পাশাপাশি কয়েকটি ফ্যান চুরি হয়েছে।