শুধু লেখাপড়ার জন্য চাপ না দিয়ে খেলাধুলা ও বিনোদনের মাধ্যমে শিশুর জীবনকে রঙিন করে তুলতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধনামন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে আজ বুধবার আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনকের সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি করোনার কারণে এখন স্কুল বন্ধ। শিশুরা স্কুলে যেতে পারছে না। এটা অত্যন্ত কষ্টের। তারপরও আমি বলব, তোমরা ছোট্ট সোনামণিরা, তোমরা ঘরে বসে লেখাপড়া করো এবং সেই সঙ্গে খেলাধুলাও করবে। খেলাধুলা, সংস্কৃতিচর্চা—এগুলো একান্তভাবে অপরিহার্য।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সারাক্ষণ পড়ো, পড়ো বললে কারোরই ভালো লাগে না। কাজেই লেখাপড়ার সঙ্গে খেলাধুলা ও বিনোদনের প্রয়োজন রয়েছে। আজকের প্রতিপাদ্য “বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন শিশুর জীবন কর রঙ্গিন”, সেই প্রতিপাদ্যের আলোকেই শিশুর জীবনকে আমরা আরও রঙিন ও সার্থক করে গড়ে তুলতে চাই।’
শিশুরা যাতে খেলাধুলার সুযোগ পায়, সে জন্য প্রতিটি উপজেলায় একটি করে মিনি স্টেডিয়াম করার কথা উল্লখ করেন প্রধানমন্ত্রী। ‘কাজ শুরু হয়ে গেছে এবং স্কুল-কলেজে ছেলেমেয়েরা সেখানে যেন খেলাধুলা করতে পারে, সে ব্যবস্থাও আমরা করে দিচ্ছি’, বলেন তিনি।
শিশুদের ওপর কোনো ধরনের অত্যাচার বা প্রতিহিংসামূলক কর্মকাণ্ড যাতে না ঘটে, সে জন্য সচেতনতা তৈরিতে কাজ করার জন্য অভিভাবক, শিক্ষক ও বিশিষ্টজনদের প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদকের হাত থেকে শিশুদের মুক্ত রাখতে হবে। যাঁরা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে আছেন এবং জনগণের প্রতিনিধি, তাঁদের সবাইকেই এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকের শিশু আমাদের আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। আজকের শিশুরাই আগামীতে প্রধানমন্ত্রী হবে, মন্ত্রী হবে বা বড় বৈজ্ঞানিক হবে বা দেশ পরিচালনার দায়িত্বে আসবে।’
‘আজকে যা কিছু আমরা করছি, তা আগামীর শিশুদের জন্যই করে যাচ্ছি।’
শিশুদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ছোট্ট সোনামণিদের আমি বলব, তোমরা পড়াশোনা করো, তোমরা অভিভাবকের কথা শোনো, ভালো থাকো এবং তোমাদের জন্য যতটুকু যা করার, সেটা আমরা করে যাব। জাতির পিতা দেশ স্বাধীন করে গেছেন, কাজেই এই স্বাধীন দেশের প্রতিটি মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচবে, উন্নত জীবন পাবে এবং ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে—সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
চলমান করোনার প্রাদুর্ভাব কেটে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাব কেটে গেলেই সবাই স্কুলে যেতে পারবে। লেখাপড়া করতে পারবে।
শিশু-কিশোরদের সব সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হওয়ার পরামর্শ দেন শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে তাদের ন্যায় ও সত্যের পথে চলারও পরামর্শ দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সব সময় যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে, সেই সঙ্গে ন্যায় ও সত্যের পথে চলবে। তাহলেই জীবনে বড় হতে পারবে। জীবনটাকে উন্নত করতে পারবে। মা–বাবার মুখও উজ্জ্বল হবে।’
লেখাপড়া ও নৈতিক চর্চার মাধ্যমে নিজেদের যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ছোট্ট সোনামণিরা, আমি তোমাদের কাছে এটাই চাই, তোমরা তোমাদের জীবনটাকে সুন্দর করো, লেখাপড়া শেখো।’
জাতির জনকের করে যাওয়া শিশু অধিকার আইন, তাঁর সরকারের করে দেওয়া প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন, প্রতিবন্ধী সুরক্ষা আইনসহ শিশুদের বিকাশে গৃহীত পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা জাতীয় শিশুশ্রম নীতিও প্রবর্তন করেছি, যাতে শিশুরা এমন কোনো কাজ না করে যাতে পরবর্তী জীবনে তাদের ক্ষতি হতে পারে।’
পারিবারিক সহিংসতা থেকে শিশুদের রক্ষা এবং নিরাপদ শিশুখাদ্য নিশ্চিত করতে আইন করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, জাতির জনক এই স্বপ্নই দেখেছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার এমনভাবে দেশ পরিচালনা করছে, যাতে তিনি বা তাঁর সরকার ক্ষমতায় না থাকলেও ভবিষ্যতে যাঁরা ক্ষমতায় আসবেন; তাঁরা যেন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন।
অনুষ্ঠানে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র স্বপ্নীল বিশ্বাস বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ পরিবেশন করে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করে আরেক শিশু ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী আনুসুয়া। দেশের শিশুদের পক্ষে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সাফওয়ান এবং চতুর্থ শ্রেণির রুবাবা জামান বক্তব্য দেয়।
পরে শিশুদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।