মো. মামুন
বয়স ১৭, ঢাকা
আমাদের মাথাপিছু আয় বাড়ছে। কিন্তু কতটা মৌলিক ও বাস্তব পরিবর্তন হয়েছে সেসব খাতে, যা শিশুদের উন্নয়নকে প্রভাবিত করে? প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা কী ভূমিকা রাখতে পারছে আমাদের শিশুদের যোগ্য, দক্ষ, প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন ও যুক্তিনির্ভর করে গড়ে তুলতে?
হতাশার বিষয় হলো, আমাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য কিংবা প্রযুক্তি খাতে শিশুদের জন্য বর্তমান বিনিয়োগ দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় কম। তাই প্রতিযোগিতায় টিকতে আমাদের করণীয় একটাই—দক্ষতা উন্নয়নে বৃহত্তর বিনিয়োগ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন।
স্বাধীনতার পাঁচ দশকে বাংলাদেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে।
এ রকম একটি সময়ে আমাদের জনমিতিতে যে পরিবর্তন হচ্ছে, তার সুফল ভোগ করতে হলে আমাদের বর্তমান শিশু ও তরুণদের জন্য বিনিয়োগ বাড়াতেই হবে। কারণ, ২০২৯ সালে ৭ শতাংশ মানুষ বয়োবৃদ্ধ বা প্রবীণ হয়ে যাবে। ২০৪৭ সালে এই হার দাঁড়াবে মোট জনসংখ্যার ১৪ শতাংশে। জনমিতিতে এমন পরিবর্তনের কারণে সে সময়ের সামাজিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে আজকের প্রজন্মকে বর্তমানের তুলনায় তিন থেকে চার গুণ বেশি দক্ষ হতে হবে।
তরুণদের দক্ষতা বাড়াতে সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন, পুষ্টি, সামাজিক নিরাপত্তা ও প্রযুক্তি খাতে। এ ছাড়াও লক্ষ রাখতে হবে শহর, গ্রাম কিংবা প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশুরা যেন এই বিনিয়োগের সমান অংশীদার হওয়ার সুযোগ পায়।
আমাদের এটাও মনে রাখা প্রয়োজন যে শ্রমবাজারে নারীদের অংশগ্রহণ মাত্র ৩৬ শতাংশ, যা গতিশীল সামাজিক ও আর্থিক সমতা বিধানের ক্ষেত্রে বড় বাধা। তাই নারীদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা ও কর্মক্ষেত্রে তাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির জন্য বর্তমানে নারী তথা মেয়েশিশুসহ সবার জন্য পর্যাপ্ত বিনিয়োগ আবশ্যক।
এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আমরা আমাদের শিশুদের জন্য কী করব। কতটা দক্ষ করে তাদের আগামীর জন্য গড়ে তুলব। এ ছাড়া নৈতিকতা ও সফট্ স্কিল বাড়াতেও কাজ করতে হবে এখনই। শিশু অধিকার সনদ ও মৌলিক অধিকারের যে প্রতিশ্রুতি সরকার দিয়েছে, তার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে অতি অল্প সময়ে।
শিশুদের জন্য বিনিয়োগ কোনো দয়া বা দাক্ষিণ্য নয়, বরং এটি আমাদের সুরক্ষিত আগামীর জন্য একটি বাস্তব পদক্ষেপ।