করোনাভাইরাস মোকাবিলায় চিকিৎসা খাতে সেবা বাড়াতে দ্রুত সময়ের মধ্যে স্বাস্থ্য ক্যাডার হিসেবে ২ হাজার চিকিৎসক ও ৫ হাজার নার্স নিয়োগের কার্যক্রম শুরু করেছে সরকার।
সরকারের এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে গতকাল মঙ্গলবার নিয়োগের চাহিদাপত্র স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনে (পিএসসি) আসে। ওই চাহিদাপত্রে দ্রুত নিয়োগ নিষ্পত্তি করার তাগিদ দেওয়া হয়।
পরে এ নিয়ে গতকালই বিশেষ সভা ডাকে পিএসসি। নিয়োগগুলো কীভাবে দেওয়া হবে, তা নিয়ে আলোচনা হয় ওই সভায়।
পিএসসি সূত্র জানায়, প্রথমে ৩৯তম বিসিএসে অপেক্ষমাণ তালিকার চিকিৎসকদের ননক্যাডার হিসেবে নিয়োগ করার কথা থাকলেও এই ২ হাজার চিকিৎসককে ক্যাডার হিসেবেই নেওয়া হচ্ছে। তাঁরা প্রথম শ্রেণির ক্যাডার কর্মকর্তা হিসেবে বিবেচিত হবেন।
পিএসসি সূত্র জানায়, ৩৯তম বিশেষ বিসিএসে পিএসসি থেকে ৪ হাজার ৭৯২ জন চিকিৎসক নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। এরপরই ৩৯তম বিসিএসে পাস করা উত্তীর্ণ ননক্যাডার ৮ হাজার ৩৬০ জনের নাম ঘোষণা করা হয়।
গত ফেব্রুয়ারিতে এই তালিকা থেকে মেধার ভিত্তিতে পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে ৫৬৪ জনকে মেডিকেল অফিসার হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ করে পিএসসি। কিন্তু সরকার জরুরি ভিত্তিতে নতুন ২ হাজার চিকিৎসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিলে বেকায়দায় পড়ে যান ওই ৫৬৪ চিকিৎসক। তাঁরা মেধাতালিকায় আছেন বলে তাঁদের তালিকা থেকেই ২ হাজার চিকিৎসক নিয়োগের দাবি ওঠে। পরে গতকালের সভায় ওই ৫৬৪ জন চিকিৎসকের আগের নিয়োগের সুপারিশ বাতিল করে পিএসসি। এই চিকিৎসকেরা এখন মেধার ভিত্তিতে ২ হাজার চিকিৎসকের তালিকায় থাকবেন।
পিএসসি সূত্র জানায়, অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে মেধার ভিত্তিতে কীভাবে দ্রুত চিকিৎসক নিয়োগ করা যায়, তা নিয়ে কাজ দ্রুতগতিতে করছেন তাঁরা। মেধার ভিত্তিতেই ২ হাজার চিকৎসক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
সরকার নার্স নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রেও পিএসসিকে দায়িত্ব দিয়েছে। সভায় পিএসসি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আগের একটি নিয়োগ কার্যক্রম থেকে এই নার্সদের নিয়োগ দেওয়া হবে। ২০১৭ সালের ওই নিয়োগ পরীক্ষার পর ৫ হাজার ১২৭ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। সেখানে অপেক্ষমাণ আছেন ৫ হাজার ৫৪ জন। সরকার যে ৬ হাজার নার্স নিয়োগ চাইছে, সে অনুসারে এখান থেকে প্রায় সবাইকে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে বলে মনে করে পিএসসি।
এ ব্যাপারে পিএসসি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বিশেষ পরিস্থিতিতেও পূর্ণাঙ্গ সভা করেছি। নতুনভাবে চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগ দিতে গেলে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, কয়েক দফা পরীক্ষার আয়োজন করতে হবে, যা সময়সাপেক্ষ। সেই অবস্থাও এখন নেই।’
মোহাম্মদ সাদিক বলেন, ‘দেশে এখন চিকিৎসক ও নার্সের সংকট। এই বিশেষ সংকটের সময় জাতীয় স্বার্থের কথা বিবেচনা করে ৩৯তম বিশেষ বিসিএসের অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে মেধার ভিত্তিতে ২ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে এবং ২০১৮ সালের অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে নার্স নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। তাঁরা সবাই পরীক্ষিত। সবাই পাস করেছেন। পদ কম থাকার কারণে আমরা তাদের নিয়োগের সুপারিশ করতে পারিনি, তাই অপেক্ষমাণ তালিকায় রাখেছি।’
মোহাম্মদ সাদিক আরও বলেন, ‘সরকার এখন ২ হাজার চিকিৎসক ও ৬ হাজার নার্স নিয়োগ করতে চাইছে, যা আমরা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছি। আমাদের সেই প্রস্তুতি আছে। এ বিষয়ে দ্রুত সময়ে কাজ করছি। এতে আমাদের বাড়তি অফিস করতে হচ্ছে, দেশের স্বার্থ বিবেচনা করে সেটিও করতে প্রস্তুত আছে পিএসসি।’
সম্প্রতি প্রধাণমন্ত্রী শেখ হাসিনা করনাভাইরাস মোকাবিলায় ২ হাজার চিকিৎসক ও ৬ হাজার নার্স নিয়োগ দেওয়ার কথা বলেন। তাঁর এ ঘোষণার পরপরই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও পিএসসি।