শিগগিরই গ্যাস-সংকট কাটছে না

ভোর ৬টা থেকে গ্যাস নেই। বিকল্প ব্যবস্থায় রান্না। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় ঢাকার গেন্ডারিয়ার বাজার রোড এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো
ভোর ৬টা থেকে গ্যাস নেই। বিকল্প ব্যবস্থায় রান্না। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় ঢাকার গেন্ডারিয়ার বাজার রোড এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
>

*কারিগরি ত্রুটির কারণে এলএনজি সরবরাহ বিঘ্নিত
*তিন দিন ধরে বিভিন্ন স্থানে গ্যাস-সংকট বেড়ে চলেছে
*আজ কাজ শুরুর পর জানা যাবে কবে সংকট কাটবে

কারিগরি ত্রুটির কারণে মহেশখালীর ভাসমান টার্মিনাল (এফএসআরইউ) থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার পর তিন দিন কেটে গেছে। এই সময় ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের সর্বত্র এবং সব শ্রেণির গ্রাহক গ্যাসের বাড়তি সংকটে পড়েছেন। আজ বুধবার ত্রুটি চিহ্নিত ও মেরামতের কাজ শুরু করবেন বিশেষজ্ঞরা।

পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এলএনজি প্রকল্পের ঠিকাদার যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জির এমন কোনো বিশেষজ্ঞ বর্তমানে বাংলাদেশে নেই, যাঁরা এই ত্রুটি সারানোর কাজ করতে সক্ষম। তাই এই কাজের জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সামিটের ভাসমান টার্মিনাল স্থাপনের জন্য যাঁরা এখন মহেশখালীতে কাজ করছেন, তাঁদের সহায়তা চাওয়া হয়েছিল। এ ব্যাপারে গতকাল মঙ্গলবার সামিটের অনুমোদন পাওয়া গেছে। আজ কাজ শুরু করার পর তাঁরা বলতে পারবেন ত্রুটি মেরামতে কত দিন লাগবে। তবে শিগগিরই গ্যাস–সংকট কাটছে না।

তিতাস গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানির সূত্র জানায়, এলএনজি সরবরাহ বন্ধ হওয়ার আগে ঢাকায় চাহিদার তুলনায় গ্যাসের সরবরাহ ঘাটতি ছিল প্রায় ৫০ কোটি ঘনফুট। গত তিন দিন এই ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭৫ কোটি ঘনফুটে। ঢাকায় গ্যাসের স্বাভাবিক চাহিদা প্রায় ২১০ কোটি ঘনফুট। সাধারণভাবে এখানে বরাদ্দ থাকে ১৬০ কোটি ঘনফুট। এলএনজির সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তিতাস সিস্টেমে কমপক্ষে আরও ২০ কোটি ঘনফুট গ্যাস কম পাওয়া যাচ্ছে।

তিন দিন ধরে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে গ্যাস–সংকট বেড়েই চলেছে। গতকালও পুরান ঢাকার কোতোয়ালি, সূত্রাপুর ও গেন্ডারিয়া থানার বেশির ভাগ এলাকায় এবং মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, আদাবর, কল্যাণপুর, টোলারবাগ, রামপুরাসহ রাজধানীর অন্যান্য এলাকায় গ্যাসের তীব্র সংকট ছিল। এসব এলাকার আবাসিক গ্রাহকেরা এখন গ্যাস পাচ্ছেন গভীর রাতে। তা–ও সব এলাকায় স্বাভাবিক চাপে নয়। গভীর রাতে গ্যাস এসে আবার সকাল সাতটার মধ্যে চলে যায়। সারা দিন গ্যাস পাওয়া যায় না। এ কারণে নগরবাসীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। বেশি দামে বাইরে থেকে খাবার কিনে খেতে হচ্ছে। কেউ কেউ বিকল্প ব্যবস্থায় রান্না করছেন।

পেট্রোবাংলার এলএনজি সেলের সূত্র জানায়, গত শনিবার সন্ধ্যায় ভাসমান টার্মিনাল ও সমুদ্র তলদেশের পাইপলাইনের মধ্যবর্তী সংযোগস্থলের হাইড্রোলিক ভালভটি অকার্যকর হয়ে পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে জাতীয় গ্রিডে ৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় সংকট বেড়ে যায়। হাইড্রোলিক ভালভটি ৪০ মিটার পানির তলদেশের পাইপলাইনে স্থাপিত।

গত ১৮ আগস্ট থেকে ভাসমান টার্মিনালের মাধ্যমে প্রতিদিন ৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাস চট্টগ্রাম অঞ্চলে সরবরাহ করা হচ্ছিল। ফলে দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে তোলা সম্পূর্ণ গ্যাস (দৈনিক প্রায় ২৭০ কোটি ঘনফুট) চট্টগ্রাম ছাড়া দেশের অন্যান্য অঞ্চলে সরবরাহ করায় চাহিদার তুলনায় গ্যাসের ঘাটতি কমেছিল। এখন এলএনজি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আবার জাতীয় গ্রিড থেকেই চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ করতে হচ্ছে। এ কারণে গ্যাসের ঘাটতি যেটুকু কমেছিল, তা আবার বেড়েছে।

সরকার ২০১০ সাল থেকে এলএনজি আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করে। শেষ পর্যন্ত এ বছরের ২৪ এপ্রিল এলএনজি মজুত ও পুনরায় গ্যাসে রূপান্তর করার ভাসমান টার্মিনাল (এফএসআরইউ) মহেশখালীতে আসে। তবে ওই টার্মিনাল ও সমুদ্র তলদেশের পাইপলাইনের মধ্যকার বিশেষ সংযোগে ত্রুটির কারণে ১৮ আগস্টের আগে গ্যাস সরবরাহ শুরু করা যায়নি। সেই বিলম্বিত শুরুর আড়াই মাসের মধ্যে আবার এলএনজির সরবরাহে বিঘ্ন ঘটল।

পেট্রোবাংলার সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে গ্যাসের চাহিদা দৈনিক প্রায় ৩৫০ কোটি ঘনফুট। এলএনজি সরবরাহ শুরু হওয়ার পর এই চাহিদার বিপরীতে প্রায় ৩০০ কোটি ঘনফুট সরবরাহ হচ্ছিল। এখন তা আবার ২৭০ কোটি ঘনফুটে নেমেছে।