রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় ছাত্রলীগের তিনজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
ফাইল ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এক আবাসিক শিক্ষার্থীকে গভীর রাত মারধর করে বের করে দেওয়ার অভিযোগে তিন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে হল প্রশাসন। অভিযুক্ত তিনজনের মধ্যে একজনকে হল থেকে সাময়িক বহিষ্কার, অন্য দুজনকে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব আব্দুল লতিফ হলে হল প্রশাসনের জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

হল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে ছাত্রলীগ কর্মী তাসকীফ আল তৌহিদকে। হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শামীম হোসেন ও সহসভাপতি পারভেজ হাসান ওরফে জয়কে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

হল প্রাধ্যক্ষ স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে তাসকীফ আল তৌহিদকে হল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হলো। শামীম হোসেনের শিক্ষাজীবন শেষ হওয়ায় ও পারভেজ হাসান জয় বঙ্গবন্ধু হলের নিবন্ধিত ছাত্র হওয়ায় তাঁদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির কারণে তাঁদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া একই চিঠিতে এ ঘটনা তদন্তে আবাসিক শিক্ষক মো. হামিদুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। অন্য সদস্যরা হলেন আবাসিক শিক্ষক অনিল কৃঞ্চ কর্মকার ও মো. আবদুল কাদের।

হল প্রাধ্যক্ষ এ এইচ এম মাহবুবুর রহমান বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁরা হল প্রশাসন জরুরি সভা করেন। সেখানে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

রাজশাহী জেলার মানচিত্র

গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে আবাসিক শিক্ষার্থী মো. মুন্না ইসলামকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও মারধর করে কক্ষ থেকে বের করে দেন ছাত্রলীগের ওই নেতা-কর্মীরা। তিনি ওই হলের ২৪৮ নম্বর কক্ষের শিক্ষার্থী।

নির্যাতনের শিকার মুন্না হল প্রশাসনে দেওয়া লিখিত অভিযোগে বলেছেন, গত বৃহস্পতিবার রাত দুইটার দিকে ছাত্রলীগের হল শাখা সাধারণ সম্পাদক শামীম হোসেন, সহসভাপতি পারভেজ, কর্মী তৌহিদসহ ১০-১৫ জন এসে বলেন, ‘তুই এই রুমে উঠছিস কেন? তুই বের হয়ে যা।’ একপর্যায়ে তাঁকে গালিগালাজ করা হয়। তাঁর বিছানাপত্র কক্ষের বাইরে বারান্দায় ফেলে দেওয়া হয়। ছাত্রলীগের একজন তাঁর ঘাড় ধরে বাইরে বের করে দেন। এ সময় তাঁর পিঠে ঘুষি মারা হয়। পরে তিনি শেষ রাতে অন্য একটি হলের গেস্টরুমে ছিলেন।

ছাত্র নির্যাতনের খবর পেয়ে গতকাল শুক্রবার ওই হলে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও রসায়ন বিভাগের শিক্ষক মো. কুদরত-ই-জাহান, একই বিভাগের আরেক শিক্ষক মো. আলী আশরাফ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ্ হাসান, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান, আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসুদ প্রমুখ।

করোনার পর গত বছরের ১৭ অক্টোবর হল খোলার পর ছাত্রলীগ শুরুতে আসন দখল করতে আবাসিক হলে তালা মারতে শুরু করে। এরপর বৈধভাবে হলে ওঠা শিক্ষার্থীদের নানা কায়দায় হলছাড়া করে। গত ২৩ অক্টোবর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের ১৫৬ ও ৪৭৬ নম্বর কক্ষ থেকে দুজনকে বের করে দেয় ছাত্রলীগ। ৮ ডিসেম্বর রাতে এক শিক্ষার্থীকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়। চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি মাদার বখ্শ হলের ১৫৩ নম্বর কক্ষ থেকে এক শিক্ষার্থীকে, ১২ এপ্রিল শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক হল থেকে একজনকে, ১৭ মে শহীদ হবিবুর রহমান হল থেকে একজনকে, একই হল থেকে গত ২৮ মে এক শিক্ষার্থী, ২ জুন রাতে শহীদ ড. শামসুজ্জোহা হল থেকে একজনকে, ১৪ জুন রাতে নবাব আব্দুল লতিফ হল থেকে একজনকে এবং সবশেষ একই হল থেকে গত বৃহস্পতিবার রাত দুইটায় মুন্না ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগ হল ত্যাগে বাধ্য করে। এ ছাড়া ১৬ জুন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে ছাত্রলীগ নেতা সিট দখলকে কেন্দ্র করে হলের গেটে তালা মারেন, ১৮ জুন মাদার বখ্শ হলে কক্ষ দখল নিতে তালা ঝুলিয়ে দেন এক ছাত্রলীগ নেতা। এসব ঘটনায় প্রাধ্যক্ষেরা বিভিন্ন সময়ে লাঞ্ছিত হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।