ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে আবাসিক ছাত্র ৫৩৯ জন। দ্বৈতাবাসিক ছাত্র ৭২৩ জন। কাগজপত্রে এই দুই ধরনের শিক্ষার্থী হলে থাকেন। যদিও বাস্তবে সংখ্যাটি আরও বেশি। আর অনাবাসিক ছাত্র ১ হাজার ৩২৪ জন। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, টিকা দেওয়ার জন্য হলের আবাসিক শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মচারীদের তালিকা চেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের দপ্তর। নির্ধারিত ছকে এক দিনের মধ্যে এই তালিকা দিতে বলা হয়েছে।
গতকাল রোববার হলে গেলে একাধিক প্রশাসনিক কর্মকর্তা জানালেন, গতকালই তাঁরা রেজিস্ট্রারের দপ্তরের এই চিঠি পেয়েছেন। কিন্তু যেসব তথ্য চাওয়া হয়েছে, তা এক দিনে দেওয়া তো সম্ভবই নয় বরং শিক্ষার্থীদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নম্বর পাওয়া আরও কষ্টসাধ্য বিষয়। প্রথমত, হল কর্তৃপক্ষের কাছে শিক্ষার্থীদের এনআইডি নম্বর নেই। দ্বিতীয়ত, শিক্ষার্থীরা এখন হলের বাইরে নিজেদের বাড়িতে বা যাঁর যাঁর সুবিধামতো জায়গায় থাকছেন। তাই তাঁদের কাছ থেকে এই তথ্য সংগ্রহ করাও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আবার অনেক শিক্ষার্থী এখনো জাতীয় পরিচয়পত্রও করেননি। শিক্ষার্থীদের বয়সও ৪০ বছরের নিচে। ফলে এনআইডি দিয়ে নিবন্ধন করে শিক্ষার্থীদের টিকা নেওয়া বেশ জটিল হবে। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া শিক্ষার্থীদের আইডি ব্যবহার করে বা অন্য কোনো বিশেষ ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া নিয়ে এনআইডির সমস্যাটি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। তবে কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এই কাজে এগিয়ে আছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনও (ইউজিসি) বলছে শিক্ষার্থীদের এনআইডি পাওয়াই বড় সমস্যা। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা অ্যাপ চালু করার
জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে মৌখিকভাবে অনুরোধ করেছে ইউজিসি।
সরকার ঘোষণা দিয়েছে, ৩০ মার্চ থেকে স্কুল ও কলেজ খুলে দেওয়া হবে। আর পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর ২৪ মে থেকে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হবে। তার আগে ১৭ মে আবাসিক হলগুলো খুলবে। হল খোলার আগে আবাসিক শিক্ষার্থীদের টিকা নিতে হবে। তবে কারও যদি স্বাস্থ্যগত কারণে টিকা না নেওয়ার মতো অবস্থা থাকে, তাহলেও তাঁরা হলে উঠতে পারবেন। আবাসিক হল খোলার আগে আবাসিক ছাত্রছাত্রী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
দেশে ৪৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে। অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে ১০৭টি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় মোট ২২০টি আবাসিক হল আছে। আবাসিক শিক্ষার্থী আছেন ১ লাখ ২৯ হাজার ৪৩৩ জন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক আছেন ১৫ হাজার ৫২৪ জন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. এনামউজ্জামান প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, সব হলে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এখন পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন হলের প্রভোস্টরা।
গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্য সেন হল এবং হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে গিয়ে জানা যায়, রেজিস্ট্রারের দপ্তরের চিঠিতে আবাসিক শিক্ষার্থী, হলসংশ্লিষ্ট শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পাঁচ ধরনের তথ্য চাওয়া হয়েছে। এগুলো হলো শিক্ষার্থীদের জেলা ও উপজেলা বা থানার নাম, বিভাগ ও রোল নম্বর, এনআইডি, জন্ম তারিখ এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও হলের নাম।
হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, এত অল্প সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের এনআইডির নম্বর পাওয়া কঠিন হবে। তাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের তথ্যভান্ডার করে টিকা নিবন্ধনের ওয়েবসাইটে বা অ্যাপে কোনো ব্যবস্থা করতে পারলে কাজটি সহজ হবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য আমির হোসেন বলেছেন, তাঁরা এখনো করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেননি। তবে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে। বুয়েটের পরিচালক (ছাত্রকল্যাণ) মিজানুর রহমান গতকাল জানিয়েছেন, তাঁরা বেশির ভাগ আবাসিক শিক্ষার্থীর এনআইডি নম্বর সংগ্রহ করে তা ইউজিসির কাছে পাঠিয়েছেন। প্রায় সাড়ে চার হাজার শিক্ষার্থীর তথ্য দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ৪০ বছরের নিচের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তালিকাও দেওয়া হয়েছে।
ইউজিসির সদস্য (পাবলিক) অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা সব শিক্ষার্থীকে টিকা দিতে চান। কিন্তু শিক্ষার্থীদের এনআইডি নম্বর পাওয়া একটু সমস্যা। কারণ, ভর্তির সময় এনআইডি নম্বর চাওয়া হয় না। এ জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে মৌখিকভাবে অনুরোধ করা হয়েছে যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য বিশেষ অ্যাপ চালু করে। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি নম্বর দিয়ে যেন নিবন্ধন করে টিকা নিতে পারেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাঁদের জানিয়েছে তারা চেষ্টা করছে। তবে এ জন্য সরকারের উচ্চপর্যায়ের অনুমতির প্রয়োজন।