শিক্ষকদের পদোন্নতিতে বঞ্চনা

৫ অক্টোবর বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব শিক্ষক দিবস। দিবসটি সরকারি উদ্যোগে পালিত হয় না।

৫ অক্টোবর বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব শিক্ষক দিবস

যশোর সদরের পুরাতন কসবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক জিন্নাত আলী ১৯৯০ সালে সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। দীর্ঘ ২৮ বছর পর ২০১৮ সালের মে মাসে প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব পেলেও পূর্ণাঙ্গ প্রধান শিক্ষক হতে পারেননি। অবসরে গেছেন গত মে মাসে।

এম কম পাস জিন্নাত আলী প্রথম আলোকে বললেন, তাঁর ব্যাচেলর অব এডুকেশন (বিএড) ডিগ্রিও আছে। প্রাথমিকের প্রশিক্ষণ (পিটিআই) তো আছেই। কিন্তু পুরোপুরি পদোন্নতি ছাড়াই তাঁকে চাকরি থেকে অবসরে যেতে হয়েছে। তিনি চান আগের মতো একজন সহকারী শিক্ষক যেন নিয়মিত পদোন্নতি পেয়ে প্রধান শিক্ষকসহ আরও ওপরের পদগুলোতে যেতে পারেন।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের স্বাভাবিক পদোন্নতি বন্ধ আছে ১৯৯৪ সাল থেকে। তাঁরাও চান নিয়মিত পদোন্নতি। যদিও বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে নির্ধারিত কোটায় শিক্ষকদের মধ্য থেকে সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু তাতেও অন্য প্রার্থীদের সঙ্গে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিয়ে যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। প্রাথমিকের শিক্ষকেরা দীর্ঘদিন ধরে ওপরের পদগুলোতে পদোন্নতির দাবি জানিয়ে আসছেন। তাঁরা বলছেন, একসময় এ সুযোগ থাকলেও পরে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

সারা দেশে ৬৫ হাজার ৬২৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় সাড়ে তিন লাখ শিক্ষক রয়েছেন। অবশ্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষকদের ওপরের পদে নিয়মিত পদোন্নতির সুযোগ করে দিতে নতুন করে নিয়োগ বিধি করতে যাচ্ছেন।

পদোন্নতির জটিলতা কেবল প্রাথমিক শিক্ষকদের নয়, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারসহ মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ে পদোন্নতিতেও নানা সমস্যা আছে। ঢাকার একটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বললেন, তিনি প্রায় দুই যুগ ধরে একই পদে আছেন। ২০১৫ সালে ৩২ জন প্রধান শিক্ষক চতুর্থ গ্রেড পেলেও পদোন্নতি হয় না। উপরন্তু মাধ্যমিকের চারটি উপপরিচালকের পদ শূন্য। ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন কয়েকটি পদে। পদোন্নতি না হওয়ায় তাঁরা হতাশায় আছেন।

আর বেসরকারি শিক্ষকেরা বলছেন, শিক্ষাব্যবস্থাকে জাতীয়করণ ছাড়া শিক্ষক ও শিক্ষার সমস্যা সমাধান হবে না।

এমন পরিস্থিতিতে আজ ৫ অক্টোবর বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব শিক্ষক দিবস। দিবসটি সরকারি উদ্যোগে পালিত হয় না। শিক্ষক সংগঠন দিবসটি পালন করে।

স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের উদ্যোগে আজ সোমবার বেলা দেড়টায় ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস: বাংলাদেশে শিক্ষকদের মর্যাদা’ শীর্ষক এক ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদ ও কলেজ শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে বিকেলে মিরপুরে সংগঠনের কার্যালয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আলোচনা সভা হবে। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ লিয়াজোঁ ফোরামের উদ্যোগে মুজিব বর্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের ঘোষণা দেওয়ার দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করবে।