ঢাকার রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ভবনের পাশেই গাছগাছালিতে ঘেরা তিন গম্বুজবিশিষ্ট একটি পুরোনো মসজিদ। মোগল আমলে এই মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল। ঢাকার কয়েক শ বছরের পুরোনো ছবি নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর থেকে প্রকাশিত ‘আলোকচিত্রে সেকালের ঢাকা’ অ্যালবামে এই মসজিদের ১৮৯০ সালের একটি ছবি পাওয়া গেল। তাতে বলা হয়েছে, এটি হযরত শাহ জালাল দাখিনির মসজিদ।
জাতীয় জ্ঞানকোষ বাংলাপিডিয়ায় বলা হয়েছে, শাহ জালাল দাখিনী (রহ.) পনেরো শতকের দরবেশ। তিনি সুলতান ইউসুফ শাহের (১৪৭৪-৮১) শাসনকালে গুজরাট থেকে কয়েকজন শিষ্যসহ পূর্ববঙ্গে আসেন। দাক্ষিণাত্য থেকে আগমন করায় সম্ভবত লোকে তাঁকে দাখিনী বলে অভিহিত করতেন। দাখিনী ঢাকার মতিঝিলে খানকাহ প্রতিষ্ঠা করে সেখান থেকে ধর্ম প্রচার শুরু করেন। সৎ ও স্পষ্টভাষী হিসেবে তিনি খ্যাতিমান ছিলেন। এ কারণে তিনি একজন সুলতানের মতো জনগণের ওপর প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। ৮৮১ হিজরিতে (১৪৭৬ খ্রিষ্টাব্দ) তিনি ও তাঁর কয়েকজন সহচরকে হত্যা করা হয়েছিল।
ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুনের ঢাকা: স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী গ্রন্থে বলা হয়েছে, বর্তমান বঙ্গভবনের স্থানে পঞ্চদশ শতকে ছিল ঝিল আর জঙ্গল। মাঝে মাঝে ছিল উঁচু ভূমি। সে সময় ঢাকায় এসে বর্তমানের বঙ্গভবন এলাকাতেই বসবাস শুরু করেন শাহ জালাল। নানা কারণেই সেই সময়ের বাংলার সুলতান শামসুদ্দিন ইউসুফ শাহর সঙ্গে শাহ জালাল দাখিনীর বিরোধ বাধে। সুলতানের নির্দেশে ১৪৭৬ সালে দাখিনি ও তাঁর কয়েকজন অনুসারীকে হত্যা করা হয়। দাখিনীকে বঙ্গভবনের প্রধান ফটকের পাশে দাফন করা হয়। আর মোগল আমলেই বর্তমান রাজউক ভবনের পাশে শাহ জালাল দাখিনী মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। ঢাকায় যখন নবাব পরিবারের শাসন ছিল, তখন তাঁরা দাখিনির সমাধির ওপর একটি সৌধ গড়ে দেন। রাজউকের সীমানাসংলগ্ন মসজিদটি তখন থেকে শাহ জালাল দাখিনির মসজিদ হিসেবে খ্যাত ছিল। নবাব আহসানউল্লাহ এই মসজিদ সংস্কারের জন্য অনেক অর্থ দেন। মসজিদের আঙিনায় শাহ নিয়ামতউল্লাহর মাজার ছাড়াও নওয়াব পরিবারের কন্যা মেহের বানু, শওকত আরা বানু, জেনারেল খাজা ওয়াসিউদ্দীনসহ অনেকের কবর রয়েছে।
কেউ যদি রাজউকের পাশের এই মসজিদটি এখন দেখতে যান, তিনি অবাক হবেন। কারণ শাহ জালাল দাখিনির মসজিদের নাম বদলে এখন রাখা হয়েছে দিলকুশা জামে মসজিদ (নওয়াববাড়ি) ঢাকা। মসজিদটি বেশ সংস্কার করা হয়েছে। তবে মসজিদের আঙিনায় শাহ নিয়ামতউল্লাহর মাজার ছাড়াও নবাব পরিবারের কবরগুলো এখনো রয়ে গেছে।
মোগল আমলে তৈরি এই মসজিদে ফারসি ভাষায় লেখা একটি শিলালিপি ছিল। মসজিদের মুয়াজ্জিন আবুল বাশারকে শিলালিপির কথা জিজ্ঞেস করতেই তিনি মসজিদের ভেতরে খুলে রাখা অবস্থায় শিলালিপিটি দেখালেন। তিনি বললেন, নওয়াব পরিবারের উত্তরাধিকাররাই মসজিদটির ব্যবস্থাপনা কমিটিতে রয়েছেন। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর থেকে পুরোনো মসজিদটি আর সংস্কার না করতে বলা হয়েছে। ঢাকার ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে ঐতিহাসিক এই মসজিদ।
লেখা: শরিফুলহাসান। বর্তমান ছবি: হাসানরাজা