শারীরিক কসরতই তাঁদের জীবিকার অবলম্বন

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শারীরিক প্রতিবন্ধী দম্পতি ইসলাম উদ্দীন ও রোজিনা আক্তার। প্রথম আলো
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শারীরিক প্রতিবন্ধী দম্পতি ইসলাম উদ্দীন ও রোজিনা আক্তার।  প্রথম আলো

জীবন যে থেমে থাকে না, তার উদাহরণ হতে পারেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের ইসলাম উদ্দীন (৩২) ও রোজিনা আক্তার (৩০)। দুজনেরই প্রথম দেখা হয়েছিল গ্রামের মেলায় বসা সার্কাসে। এরপর প্রণয়, শেষে ঘর বাঁধার স্বপ্ন। দুজনই শারীরিক প্রতিবন্ধী। ঘর বাঁধতে এই প্রতিবন্ধকতাকেই বানিয়েছেন জীবিকার অবলম্বন।

ইসলাম ও রোজিনা জুটি কাজ করেন সার্কাসের দলে। বিভিন্ন জেলার গ্রামে বসা মেলায় গিয়ে শারীরিক কসরত দেখান তাঁরা। আর মেলা না থাকলে গ্রামের হাটে ও রাস্তায় শারীরিক কসরত দেখিয়ে বিক্রি করেন ব্যথানাশক ওষুধ। ইসলাম উদ্দীনের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার পিরোজপুর গ্রামে। আর স্ত্রী রোজিনা আক্তারের বাড়ি সাতক্ষীরা জেলার পাটকেলঘাটায়।

সম্প্রতি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বরেন্দ্র অঞ্চলের গোবরাতলা ইউপির নাধাইকৃষ্ণপুরে বসা এক মেলায় কথা হয় এই দম্পতির সঙ্গে। শামিয়ানার নিচে চারদিকে রঙিন কাপড় দিয়ে ঘেরা ছোট প্যান্ডেল। ইসলাম আর রোজিনা মঞ্চে আসার আগে মাইকে ঘোষণা করা হলো, ‘শরীর ভাঙচুর খেলা দেখুন। ইসলাম-রোজিনার শরীর ভাঙচুরের খেলা।’ প্যান্ডেলের ভেতরে গিয়ে ইসলাম উদ্দীনের খেলা দেখে সত্যিই মুগ্ধ হতে হয়। বাজনার তালে শরীরকে নানা আকৃতি দিয়ে খেলা দেখান ইসলাম উদ্দীন। আর রোজিনা দেখান লাঠি ঘোরানোর খেলা।

রোজিনাকে ভালোবেসে গুডগুডি বলে ডাকেন ইসলাম উদ্দীন। আলাপচারিতার সময় বলছিলেন, এই গুডগুডির প্রেমে পড়েই বিয়ে করেছেন। চার বছর আগে কুষ্টিয়ার পাঙ্গসায় কমলা সার্কাসে একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে প্রেম। এক মাসের মাথায় বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। ইসলামের ভাষায়, ‘চার বছর ধরে গুডগুডিকে লিয়্যা মহা সুখেই ঘর করছি। আর পথে পথে দুঝনা মিল্যা মানুষকে আনন্দ দিয়া বেড়াছি।’

জন্মগতভাবেই ইসলামের এক পা অকেজো আর রোজিনা খর্বকায়। শারীরিক কসরত শিখলেন কীভাবে? ইসলাম বলছিলেন, ‘অন্যের দেখে শিখেছি। ১০ বছর আগে শিবগঞ্জের কানসাট মেলায় আসে বগুড়ার বুলবুল সার্কাস। সেখানে এক শিল্পীর খেলা দেখে, নিজে দুই বছর চর্চা করে খেলা শিখেছি।’ পাশে বসা রোজিনা তখন বলছিলেন, ‘সার্কাস দলগুলোর এখন মন্দা যাচ্ছে। ঠিকমতো বেতন দিতে পারে না। গ্রামীণ মেলাগুলো কমে গেছে। তাই স্বামী-স্ত্রী মিলে সার্কাসের দল ছেড়ে গ্রামের মেলায় খেলা দেখাই। যা আয় হয়, তাতে দুজনের দিন চলে যায়। কারও কাছে হাত পাততে হয় না। এটাই অনেক সম্মানের।’