জাল দলিল তৈরি করে শহীদ পরিবারের অনুকূলে সরকারের বরাদ্দ দেওয়া বাড়ি আত্মসাতের অভিযোগে করা মামলার আসামি শেখ মো. জাবেদ উদ্দিনকে তিন দিনের রিমান্ডে এনেছে দুদক। আজ রোববার দুপুরে তাঁকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন সংস্থাটির উপপরিচালক মো. সালাউদ্দিন।
দুদক সূত্র প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সূত্র জানায়, আজ দুপুর সাড়ে ১২টায় তাঁকে কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে আনা হয়। দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাতে তাঁকে রমনা থানা হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। কাল সোমবার আবারও তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদকে আনা হবে।
এ ঘটনায় গত ২২ ডিসেম্বর দুজনকে আসামি করে মামলা করে দুদক। মামলায় আসামি করা হয় রাজধানীর বংশালের শেখ মো. জাবেদ উদ্দিন ও মিরাজ মো. জাকির উদ্দিনকে।
৩ জানুয়ারি আরেকটি মামলায় জাবেদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাঁকে দুদকের মামলায়ও গ্রেপ্তার দেখানো হয়। মামলার নানা তথ্য জানতে তাঁকে সাত দিনের রিমান্ডে আনার আবেদন করে দুদক। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কে এম ইমরুল কায়েশ তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা পরস্পরের যোগসাজশে জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে জাল দলিল তৈরি করেন। সেগুলোর ব্যবহার করে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে জমা দিয়ে শহীদ পরিবারকে বরাদ্দ দেওয়া জমি দখল করে নেন। রাজধানীর ২২১ নবাবপুর এলাকায় অবস্থিত ওই জমির ওপর থাকা তিনতলা ভবন ভেঙে নতুন বহুতল ভবনের বেসমেন্ট তৈরির মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন। বর্তমান মৌজামূল্য অনুসারে ওই জমির দাম দুই কোটি টাকারও বেশি।
এজাহারে আরও বলা হয়, ঢাকার নবাবপুর রোডের ওই জমি সরকারি অর্পিত সম্পত্তি। ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে জমিটি শহীদ পরিবারের সদস্য এ কে এম শামসুল হক খানের মা মাসুদা খানমকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই সম্পত্তি বর্তমানে শহীদ পরিবারের সর্বশেষ সদস্য আজহারুল হক খানের নামে আছে। ওই সম্পত্তি ভোগদখলে থাকা অবস্থায় শেখ মো. জাবেদ উদ্দিন ও তাঁর সহযোগীরা জালিয়াতির মাধ্যমে জয়দেবপুর সাবরেজিস্ট্রি অফিসে একটি দলিল তৈরি করেন। ওই ভুয়া দলিলের গ্রহীতা ননী গোপাল বসাকের মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে তপন কুমার বসাক সম্পত্তির মালিক হন মর্মে দাবি করা হয়। ওই দলিল ঠিক আছে কি না, তা যাচাই করতে গিয়ে দুদক দেখেছে, দলিলটি জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা।
এজাহারে বলা হয়, আসামি শেখ মো. জাবেদ উদ্দিন একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক ও সরকারি ভূমি দখলকারী চক্রের মূল হোতা। তিনি জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে জাল দলিল বানিয়ে মিরাজ মোহাম্মদ জাকির উদ্দিনের সহযোগিতায় আত্মসাৎ করেন।
শহীদ পরিবারের নামে বরাদ্দ দেওয়া ওই বাড়ি অবৈধভাবে দখলে সহযোগিতার অভিযোগ উঠেছিল পুলিশের ডিএমপির লালবাগ বিভাগের তৎকালীন উপকমিশনার (ডিসি) ও বংশাল থানার ওসির বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে গত বছরের ২৫ আগস্ট ওই ডিসিকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়। ওই ডিসির বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী বিধিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়। মামলায় ডিসিকে আসামি না করার বিষয়ে দুদক সূত্র জানিয়েছে, সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার আইনের অন্য একটি অভিযোগ দুদকে অনুসন্ধান চলছে। এ মামলায় তিনিসহ পুলিশের অন্য সদস্যদের সংশ্লিষ্টতার বিষয় যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। পর্যাপ্ত প্রমাণ সাপেক্ষে তাঁদের আসামি করা হবে।