নরসুন্দা নদীর তীরে প্রতিদিন শতাধিক মানুষ শরীরচর্চা করেন
নরসুন্দা নদীর তীরে প্রতিদিন শতাধিক মানুষ শরীরচর্চা করেন

শরীরচর্চায় সকাল শুরু

সকাল ছয়টা। কুয়াশার কারণে অন্ধকারের ঘোর তখনো কাটেনি। চারদিক বেশ শান্ত আর নির্জন। কিন্তু এরই মধ্যে দূর থেকে ভেসে আসছে মানুষের কলরব। কিশোরগঞ্জের নরসুন্দা নদীর তীর ঘেঁষে গুরুদয়াল কলেজের পাশে সমবেত হয়েছেন শতাধিক নারী-পুরুষ।

নদীর তীর ঘেঁষে কেউ কেউ হাঁটছেন। কেউ আবার দল বেঁধে শরীরচর্চা করছেন। একেক দলের সদস্যদের গায়ে একেক রকম পোশাক। এর মধ্যে দুটি দল হলো ‘মুক্তমঞ্চ শরীরচর্চা কেন্দ্র কিশোরগঞ্জ’ ও ‘আমরা সবুজ শরীরচর্চা কেন্দ্র কিশোরগঞ্জ’।

প্রায় এক যুগ ধরে প্রতিদিন ঘুম ভাঙার পর এ দুই সংগঠনের সদস্যরা নরসুন্দা নদীর তীরে চলে আসেন। নারীরা হাঁটেন আর পুরুষেরা প্রশিক্ষকের মাধ্যমে ব্যায়াম করেন।

আমরা সবুজ শরীরচর্চা কেন্দ্রের সভাপতি মো. আইয়ুব আলী খান বলেন, শুরুতে অল্প কয়েকজনকে নিয়ে শরীরচর্চার জন্য এ সংগঠন চালু করা হয়। তবে দিনে দিনে সদস্যসংখ্যা বেড়ে চলেছে। মাঝবয়সী নারী-পুরুষের পাশাপাশি বর্তমানে তরুণেরাও আগ্রহ নিয়ে শরীরচর্চায় যোগ দিচ্ছেন।

এখানে নিয়মিত শরীরচর্চা করতে আসা মো. খলিলুর রহমান, মোহাম্মদ মুকসুদ আলীসহ কয়েকজন জানান, ডায়াবেটিসসহ নানা রোগব্যাধি তাঁদের শরীরে বাসা বেঁধেছে। চিকিৎসা আর ওষুধ সেবনের পাশাপাশি নিয়মিত শরীরচর্চা করার পর তাঁরা এখন বেশ সুস্থ।

খলিলুর রহমান বলেন, ‘শরীরচর্চার পরও আমরা এখানে কিছুক্ষণ সময় কাটাই, পরস্পর কুশল বিনিময় করি। এতে একধরনের ভালো লাগা কাজ করে।’

মুক্তমঞ্চ শরীরচর্চা কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ও ব্যায়াম প্রশিক্ষক মো. মোশারফ হোসেন জানান, তাঁরা প্রতিদিন সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে ব্যায়াম শুরু করেন। এরপর ঘণ্টাব্যাপী ব্যায়াম চলে। প্রায় তিন বছর ধরে তিনি বিনা মূল্যে এ প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছেন। সংগঠনের সদস্য ছাড়াও যে কেউ তাঁদের সঙ্গে শরীরচর্চায় অংশ নিতে পারেন। তিনি বলেন, শরীরচর্চার মাধ্যমে দৈহিক উন্নতির পাশাপাশি মানসিক ও আত্মিক উন্নতিও সম্ভব।

মুক্তমঞ্চ শরীরচর্চা কেন্দ্র কিশোরগঞ্জের সভাপতি মো. আবু হাসান বলেন, শুধু শরীরচর্চা নয়, তাঁদের প্রত্যেক সদস্য ও মানুষের সার্বিক কল্যাণের কথা চিন্তা করে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এখনো সেই চিন্তাধারা অটুট রয়েছে।

দুটি সংগঠনের দেখাদেখি বর্তমানে বিভিন্ন বয়সী মানুষ স্বাস্থ্যসচেতন হয়ে উঠছেন। শরীরচর্চার পাশাপাশি দুই সংগঠনের পক্ষ থেকেই নিয়মিত সামাজিক উৎসব ও বিভিন্ন জাতীয় দিবস পালন করা হয়। এ ছাড়া মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি, অসুস্থ ব্যক্তিদের চিকিৎসার ব্যবস্থা, বিয়েশাদিসহ নানা সামাজিক কাজেও তাঁরা অংশ নেন।

কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের কনসালট্যান্ট সুবীর নন্দী বলেন, নিয়মিত শরীরচর্চা মানুষের শরীর ও মন—উভয়ের সুস্থতা নিশ্চিত করে। এর মাধ্যমে দেহ ও মনের মধ্যে নিবিড় মেলবন্ধন গড়ে ওঠে। নিয়মিত শরীরচর্চা করলে শরীর ও মন প্রফুল্ল থাকে এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। চলমান করোনা মহামারির সময় শরীরচর্চা খুবই কার্যকর। তাই এখন শরীরচর্চার প্রতি চিকিৎসকেরাও বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন।