শত বছরের জীর্ণ দীঘিনালা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

ভেঙে পড়ছে পুরোনো দেয়াল। জীর্ণ এ ভবন সংস্কার না হওয়ায় দুর্ভোগে পড়ছেন রোগীরা। সম্প্রতি দীঘিনালা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ছবি: প্রথম আলো
ভেঙে পড়ছে পুরোনো দেয়াল। জীর্ণ এ ভবন সংস্কার না হওয়ায় দুর্ভোগে পড়ছেন রোগীরা। সম্প্রতি দীঘিনালা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।  ছবি: প্রথম আলো

জীর্ণ ঘরের দেয়াল ভেঙে বেরিয়ে পড়েছে নলখাগড়ার বেড়া। কালের সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকলেও ব্যবহারের অযোগ্য এটি। খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এমন বেহাল দশা। অবস্থা এমন যে, এটির সংস্কারের আশাই ছেড়ে দিয়েছে উপজেলার বাসিন্দারা।

জানা গেছে, এলাকার মানুষের চিকিৎসার সুবিধার্থে ১৯২৪ সালে একটি নলখাগড়া আর সিমেন্ট দিয়ে তৈরি ভবনে চালু করা হয় ডিসপেনসারি। ওই ডিসপেনসারি ভবনেই ১৯৮০ সালে চালু হয় ১০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। জরাজীর্ণ এই ঘরেই বর্তমানে চলছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কার্যক্রম। নানা সময়ে জনপ্রতিনিধিরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিলেও ভবনটি থেকে গেছে আজও।

সম্প্রতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, নলখাগড়ার তৈরি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবনের ছোট ছোট ছয়টি কক্ষে চলছে হাসপাতালের কার্যক্রম। হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগের চিকিৎসকেরা বিভিন্ন কক্ষে গাদাগাদি করে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছিলেন। ঘরটির টিনের চালায় মরিচা ধরেছে। খুঁটিগুলো নড়বড়ে। ঘরের দেয়াল থেকে সিমেন্ট খসে গিয়ে নলখাগড়া বের হয়ে পড়েছে। ছোট্ট বারান্দায় রোগীরা চিকিৎসকের কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠার পর গত ৩৯ বছরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ১০ শয্যার থেকে গেছে। জীর্ণ ভবনটিতে বৃষ্টি হলে জরুরি বিভাগ, ড্রেসিং কক্ষ, ডায়রিয়া ওয়ার্ড ও পুরুষ ওয়ার্ডে পানি পড়ে। ২০১১ সালে ৩১ শয্যায় উন্নীত করার লক্ষ্যে জমি অধিগ্রহণের জন্য ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও বর্তমানে সে উদ্যোগ বাতিল হয়। এরপর ৫১ শয্যা হাসপাতাল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে কবে নাগাদ হাসপাতালটির নির্মাণকাজ শুরু হবে, তা নিশ্চিত নয়।

হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া বিবেক গোমস্তা (৩৪) বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি খুবই জরাজীর্ণ। প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডে পানি পড়ে। এক্স-রে যন্ত্র না চলায় তাঁদের জেলা শহরে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়।

চিকিৎসা কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন ও নূরুল আনোয়ার বলেন, ‘সমস্যার কথা বলতেও লজ্জা লাগে। আমরা যে ঘরটিতে থাকি, সেটি ভাঙাচোরা। বৃষ্টি হলে পানি পড়ে। নলখাগড়া বের হয়ে এসেছে।’

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ কাশেম জরাজীর্ণ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কথা স্বীকার করে বলেন, হাসপাতালটি সংস্কারে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে বারবার আবেদন করা হয়েছে। তারাও আশ্বাস দিচ্ছে ৫১ শয্যা হাসপাতাল ও ভবন নির্মাণ করা হবে।

খাগড়াছড়ি জেলা সিভিল সার্জন মো. ইদ্রিস মিঞা বলেন, জমি অধিগ্রহণ আর করা হবে না। দীঘিনালা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৫ একর জায়গা রয়েছে, সেখানেই হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে। শিগগিরই দরপত্র আহ্বান করা হবে।