নার্সারি করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের শৌখিন বৃক্ষপ্রেমিক আবদুর রাজ্জাক। চুনারুঘাট উপজেলা শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে পড়াঝার স্কুলসংলগ্ন হরিহরপুর গ্রামে ৫ বিঘা জমিতে তিনি গড়ে তুলেছেন ৩০০ দেশি–বিদেশি গাছের বিশাল ভান্ডার। তবে থেমে নেই জাতসংগ্রহ। সংগ্রহে নেই এমন কোনো গাছের নাম শুনলেই তিনি ছুটে যান, সংগ্রহ করে আনেন চারা।
আবদুর রাজ্জাক একসময় সরকারি চাকরি করতেন। ১৯৮৫ সালে চাকরিতে থাকাকালীন বাড়ির আশপাশে অল্প পরিসরে গাছের চারা সংগ্রহ করে ছোট পরিসরে নার্সারি শুরু করেন তিনি। ২০১৬ সালে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর নার্সারির আকার বড় করেন। নাম দেন ভাই ভাই নার্সারি। এখন বাণিজ্যিকভাবে সফলতাও পাচ্ছেন তিনি।
আবদুর রাজ্জাক জানান, গত কয়েক বছরের ব্যবধানে পুরো হবিগঞ্জ জেলায় তিনি ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন। বিভিন্ন কৃষি ও প্রযুক্তি মেলায় তিনি নিয়মিতই স্টল নিয়ে হাজির হন। মেলার প্রদর্শনীগুলোতে অংশ নিয়ে সেরা হওয়ার পুরস্কারও জিতে নিয়েছেন কয়েকবার। বর্তমানে তাঁর নার্সারিতে পাঁচজন শ্রমিক কাজ করেন। পাশাপাশি তাঁর দুই ছেলে ও এক ভাতিজা তাঁকে সহযোগিতা করেন।
আবদুর রাজ্জাকের নার্সারিতে আম বারি-৪, সূর্যডিম, কাটিমন, সুবর্ণরেখা,আম্রপালিসহ প্রায় ৫০ জাতের দেশি-বিদেশি আমের চারা রয়েছে। এ ছাড়া চায়না-৩ লিচু, বেদানা লিচু, মুম্বাই লিচু, জাম, ভিয়েতনামি কাঁঠাল, পেয়ারা, রাম্বুটান, সাতকরা, থাই পেয়ারা, লটকন, আমলকি, কদবেল, পেঁপে, সফেদা, ভিয়েতনামি নারিকেল, জামরুল, থাই মিষ্টি তেঁতুল, বেদেনা, ডালিম, আপেল, সাদা আপেল, কমলা, নাশপাতি, বেল, চালতা, আমড়া, ড্রাগন ফল, আক্সগুর, মিষ্টি জলপাই, করমচা, বুবি, চায়না কমলা, কাশ্মীরি কুল, বাউকুলসহ প্রায় শতাধিক দেশি–বিদেশি ফলের চারা রয়েছে।
অপর দিকে শোভাবর্ধনকারী গোলাপ, মুসেন্দা, রঙ্গন, বেলি, চার ধরনের জবা, জুঁই, গন্ধরাজ, হাসনাহেনা, বাগানবিলাস, সাদা জিনিয়া, কসমস, সূর্যমুখী, পাতাবাহার, কৃষ্ণচূড়া, মাধবীলতা, ক্রিসমাস ট্রি, ফিজিয়াম, ডালিয়া, নয়নতারাসহ প্রায় ১০০ দেশি–বিদেশি ফুলের চারা পাওয়া যায়।
এ ছাড়া বারোমাসী শজনে, এলাচি, দারুচিনি, লবঙ্গ, তেজপাতা, গোলমরিচ, লোভেরা, শতমূলী, তুলসীসহ বিভিন্ন মসলা, ঔষধি গাছ, কাঠের গাছ, সবজির চারা পাওয়া যায়।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃক্ষগবেষক কৃষিবিদ ফয়সাল আহমদ সোহান জানান, তিনি কয়েকবার আবদুর রাজ্জাকের নার্সারিতে ঘুরতে গেছেন। অজপাড়াগাঁয়ে একটি নার্সারিতে এভাবে ফুল, ফলদ, সবজি, ঔষধি চারার ব্যাপক সংগ্রহ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় উদ্যোগ। তিনি বলেন, ‘গাছ লাগানোটা হতে পারে আমাদের সামাজিক বন্ধন ও সুস্থ বিনোদনের উৎস। তা ছাড়া পরিবর্তিত জলবায়ুর বিরূপ প্রতিক্রিয়া থেকে বাঁচতে বৃক্ষ রোপণের বিকল্প নেই।’ তাঁর পরামর্শ দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তায় বাড়ির ছাদে, টবে অথবা বাড়ির আশপাশের পতিত জমি ফেলে না রেখে সবজি, ফলদ ও ঔষধি গাছ লাগানোর।
চুনারুঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জালাল সরকার বলেন, আবদুর রাজ্জাক একজন বৃক্ষপ্রেমী মানুষ। তিনি দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা সংগ্রহ করেন। প্রতিবছর তিনি জেলা ও উপজেলায় বিভিন্ন কৃষি ও প্রযুক্তি মেলায় অংশগ্রহণ করেন এবং পুরস্কার জেতেন। নার্সারিকে আরও সমৃদ্ধ করতে তাঁকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
*শিক্ষার্থী, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। স্থায়ী ঠিকানা: চুনারুঘাট, হবিগঞ্জ