তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রও চোরাগোপ্তা হামলা ঠেকাতে অক্ষম। হামলাকারীকে ধরা যায়, কিন্তু হামলা ঠেকানো যায় না। তাঁর মতে, প্যারিসের ঘটনার পর বাংলাদেশের দিকে তাকালে অনেকেই আর হতাশ হবেন না।
‘ডিআরইউ বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড-২০১৫’ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করতে গিয়ে ইনু এ কথা বলেন। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার এক্সপেরিমেন্টাল হলে আয়োজিত এই বার্ষিক পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক, অনলাইন ও রেডিওর ২৭ জন প্রতিবেদকের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের পায়ে কাঁটা ফুটেছে। সেই কাঁটা বের করার চেষ্টা করায় রক্তক্ষরণ হচ্ছে। সেই বেদনা আমাদের সইতে হবে।’ তিনি দেশের গণমাধ্যমগুলো জীবন্ত, সক্রিয়, সমালোচনামুখর ও কর্মমুখর দাবি করে বলেন, সাংবাদিকেরা এখন সব খবর সংগ্রহ ও প্রকাশ করতে পারছেন।
ফেসবুক, ভাইবার ও টুইটার বন্ধ করা প্রসঙ্গে ইনু বলেন, এগুলো নাশকতার কাজে ব্যবহার হচ্ছে বলে সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে।
জামায়াতের ডাকা হরতাল জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, জঙ্গি দমনে সরকার ন্যূনতম ছাড় না দেওয়ার নীতি (জিরো টলারেন্স) অনুসরণ করছে। গণতন্ত্রের স্বার্থে ও জঙ্গি দানবকে দমন করতে গণমাধ্যম প্রশাসনের পাশে থাকবে বলে তথ্যমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ক্ষমতার জন্য ভুল করতে পারি, বহু কিছু করতে পারি। কিন্তু গণমাধ্যম ভুল করতে পারে না।’
এ বছর মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় স্পিকার, তথ্য, আইন, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, ওয়ালটন, ডিসিসিআই ও ইস্পাহানি এগ্রো বিজনেস লিমিটেডের সহযোগিতায় এ পুরস্কার প্রদান করা হয়। পুরস্কৃত প্রত্যেকে ৫০ হাজার টাকার চেক, ক্রেস্ট ও সনদ পেয়েছেন।
সংবাদপত্র ক্যাটাগরিতে ১৫০টি প্রতিবেদন জমা পড়ে, পুরস্কার পেয়েছেন ১৩ জন। এঁরা হলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে দৈনিক সমকালের নিজস্ব প্রতিবেদক আবু সালেহ রনি, রাজনীতি-বিষয়ক প্রতিবেদনের জন্য প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি শরিফুজ্জামান, সংসদ ও নির্বাচন কমিশন বিষয়ে নিউ এইজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মো. মনিরুজ্জামান, শিক্ষা বিষয়ে নয়াদিগন্তের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেদী হাসান ও অর্থনীতি বিষয়ে ঢাকা ট্রিবিউনের নিজস্ব প্রতিবেদক জেবুন্নেছা আলো।
ডেইলি স্টার থেকে সর্বোচ্চসংখ্যক চারজন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ডিআরইউ পুরস্কার পেয়েছেন। এঁরা হলেন কৃষি বিষযে সোহেল পারভেজ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিষয়ে পিনাকী রায়, কূটনৈতিক বিষয়ে পরিমল পালমা এবং নগরীর সমস্যা ও সম্ভাবনা বিষয়ে হেলিমুল আলম বিপ্লব।
অপরাধ ও আইন শৃঙ্খলা বিষয়ে ডেইলি অবজারভারের পুলক ঘটক, তথ্য প্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ বিষয়ে দ্য ইন্ডিপেনডেন্টের তারেক মোরতাজা, ক্রীড়া বিষয়ে দৈনিক ইনকিলাবের শামীম চৌধুরী ও স্বাস্থ্য বিষয়ে নিউ এইজের খাদেমুল ইসলাম পুরস্কার পান।
টেলিভিশন রিপোর্টিংয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে পুরস্কার পেয়েছেন চ্যানেল আইয়ের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জান্নাতুল বাকেয়া কেকা। পুরস্কারপ্রাপ্ত অন্যরা হলেন কূটনৈতিক বিষয়ে যমুনা টিভির মাহফুজুর রহমান মিশু, অর্থনৈতিক বিষয়ে চ্যানেল ২৪ এর আবদুল কাইউম তুহিন, নগরীর সমস্যা ও উন্নয়ন বিষয়ে এনটিভির মাহমুদুল হাসান, অপরাধ ও আইন শৃঙ্খলা বিষয়ে মাছরাঙা টিভির বদরুদ্দোজা বাবু, তথ্য প্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ বিষয়ে ইন্ডিপেনডেন্ট টিভির শাহেদ সিদ্দিকী, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিষয়ে আরটিভির আল আমিন খান ও স্বাস্থ্য বিষয়ক রিপোর্টে এনটিভির রোকন উদ্দিন।
অনলাইন রিপোর্টিংয়ে বাংলা মেইল ২৪ ডটকমের দীপন নন্দী ও জাগো নিউজ ২৪ ডটকমের মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল, বাংলানিউজ ২৪ ডটকমের রহমান মাসুদ ও রফিকুল ইসলাম মন্টু পুরস্কার পেয়েছেন। রেডিও রিপোর্টিংয়ে যৌথভাবে এবিসি রেডিওর স্টাফ রিপোর্টার তৌহিদুল ইসলাম ও বিবিসি বাংলার আহারার হোসেন পুরস্কার পান।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও ডিআরইউর সাবেক সভাপতি শাহজাহান সরদার, ডিআরইউ সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস হোসেন, সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজ চৌধুরী।
ডিআরইউ বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড নির্বাচনের জন্য ১৩ সদস্যের জুরি বোর্ড গঠন করা হয়েছিল। এর সদস্য ছিলেন সম্পাদকদের মধ্যে রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, এইচএম মোয়াজ্জেম হোসেন, মতিউর রহমান চৌধুরী ও নূরুল কবির। এ ছাড়া প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক শাহ আলমগীর, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহ-উপাচার্য গোলাম রহমান, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মনোয়ার হোসেন, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, এটিএন বাংলার প্রধান সম্পাদক মনজুরুল আহসান বুলবুল, যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম, এশিয়ান এইজের কনসালটেন্ট এডিটর মোস্তফা কামাল মজুমদার ও এসএ টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক সায়ফুল হুদা ওই বোর্ডের সদস্য ছিলেন।