লাল পাহাড়ের মধ্যে শান্তির প্যাগোডা। ঝলমলে আলো এবং নীল আকাশ। চারপাশে রয়েছে নিস্তব্ধতা। প্রকৃতির সঙ্গে যেখানে সৃষ্টি হয় গভীর বন্ধুরতা। এমনিই এক দৃষ্টিনন্দন জায়গা এটি। আড়াই একর জায়গা নিয়ে বিস্তৃত এক মন্দির। যার নাম নব শালবন বিহার। চোখধাঁধানো এই স্থাপনা বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের একটি উপাসনালয়।
গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গিয়েছিলাম কুমিল্লা শালবন বিহারে। এখানে ঢুকতে সবার আগে চোখে পড়বে চমৎকার একটি নির্দেশিকা। নির্দেশিকাটি অনুসরণ করে খুব সহজেই দেখা যায় এই বিহারের চমৎকার স্থাপনাগুলো। দুই পা বাড়ালেই চোখে পড়বে সাদা রঙের মন্দির। মন্দিরটিজুড়ে রয়েছে শৈল্পিক কারুকার্য।
কুমিল্লার কোটবাড়ী বাসস্ট্যান্ড থেকে তিন কিলোমিটার দূরে এই মন্দির। ২০ টাকার টিকিট কেটে প্রবেশ করতে হয় এই বিহারে। প্রবেশপথের বাঁ দিকে রয়েছে সোনালি রঙের ৬ টন ওজনের ৩০ ফুট উচ্চতার বিশাল প্রার্থনারত বুদ্ধর মূর্তি। দিনের বেলায় সূর্যের আলোয় চকচক করে। এই মূর্তি অনেক দূর থেকেই যে কারও নজরে পড়ে। মূর্তির পাশেই রয়েছে রাজকীয় দুটি সিংহ। আরও তিনটি বড় ও একটি ছোট্ট সোনালি মোটক রয়েছে।
মন্দিরে গিয়ে চোখ জুড়িয়ে যায় বিশাল প্রতিমার অনাবিল সৌন্দর্য দেখতে দেখতে। এই বিহারকে ঘিরে দেশ–বিদেশ থেকে পর্যটকদের পদচারণ রয়েছে। মন্দিরের পাশেই রয়েছে মেডিটেশন কেন্দ্র, শালবন বিহার বিদ্যালয়, এতিমখানা, পাঠাগার, জাদুঘর, আলোচনা ও হোস্টেল কক্ষ। বিহারজুড়ে আকাশ গাঢ় নীল হয়ে ছিল। সবুজ ঘাস, বাহারি লতাপাতা আর নাম না–জানা পাখির কলরব—মনজুড়ানো সব উপকরণের দেখা মিলবে জায়গাটিতে। মন্দিরজুড়ে রয়েছে আঁকাবাঁকা সিঁড়িপথ।
যেন বিশাল কুমিল্লার মাঝখানে ছোট্ট আরেকটি কুমিল্লা। খোলা থাকে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। হাতে একটু সময় নিয়ে হলেও ঘুরে যাওয়া উচিত এখান থেকে। লাল পাহাড়ের বৌদ্ধমন্দির অপেক্ষা করছে আপনারই জন্য।
ঘুরতে ঘুরতে দেখা হয় এক পূজারির সঙ্গে। তিনি বলেন, কুমিল্লা জেলায় প্রায় ১৫ হাজার বৌদ্ধধর্মাবলম্বী বসবাস করছেন। কুমিল্লায় মুসলমান ও হিন্দু সম্প্রদায়সহ সব সম্প্রদায়ের মতো বৌদ্ধধর্মীয় লোকজন শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ ভ্রাতৃপ্রতিম পরিবেশে বসবাস করছেন। পূজারির থেকে বিদায় নিয়ে আমরা যাই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (কুবিসাস) মানুষের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে রাতে রওনা দিই গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের পথে।
*লেখক: শিক্ষার্থী, গণ বিশ্ববিদ্যালয়