অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন–পরবর্তী রাজনৈতিক সহিংসতায় নাটোরের লালপুরে ছাত্রলীগ নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে খান্নাস (২৪) হত্যা মামলায় চারজনকে মৃত্যুদণ্ড ও একজনকে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নাটোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ সাইফুর রহমান সিদ্দিক এই দণ্ডাদেশ দেন।
ঘটনার ১৭ বছর পর বিচারপ্রার্থীরা এই মামলার রায় পেলেন। রায়ে ১৩ আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।
আজ দুপুর ১২টায় বিচারক রায় পড়া শুরু করেন। ৬৫ মিনিট ধরে তিনি রায় পড়ে শোনান। খুনের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় নাটোরের লালপুর উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের শামীম (৩৮), সুজন (৩৫), আবদুল মতিন (৪৫) ও আ. শুকুরকে (৩৭) মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আদালত। তাঁদের সবাইকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যু কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
একই অভিযোগে আদালত একই গ্রামের সান্টুকে (২৭) আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার ১ টাকা অর্থদণ্ডাদেশ দেন। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে শামীম ও আ. শুকুর আদালতে হাজির ছিলেন। তাঁদের রায়ের পর নাটোর কারাগারে পাঠানো হয়। পলাতক দণ্ডপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মামলার বাকি ১৩ আসামিকে আদালত বেকসুর খালাস দেন।
মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ও সাক্ষীদের সাক্ষ্য থেকে জানা যায়, অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নাটোর-১ আসনের তৎকালীন বিএনপি দলীয় সাংসদ ফজলুর রহমান পটল ও আওয়ামী লীগের নেতা মমতাজ উদ্দিনের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। আসামিরা ছিলেন বিএনপির সমর্থক। তাঁরা সংঘবদ্ধ হয়ে ২০০২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে লালপুর উপজেলার হাবিবপুর গ্রামে হামলা চালান। তাঁরা বিভিন্ন বাড়িতে ভাঙচুর ও আওয়ামী লীগ–সমর্থিত লোকজনকে মারপিট করতে থাকেন। এ সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মী মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে খান্নাস, তাঁর বাবা, মা ও বোনকে নিয়ে নিজ গ্রাম হাবিবপুরের বাড়িতে আসছিলেন। তাঁকে দেখামাত্র আসামিরা তাঁকে রাস্তার ওপর কোপান এবং গুলি করেন। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে ভর্তির আগেই তাঁর মৃত্যু হয়। পরের দিন বিকেলে নিহত ব্যক্তির বাবা মো. আ. শুকুর মৃধা বাদী হয়ে লালপুর থানায় ২৩ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
তদন্তকারী কর্মকর্তা লালপুর থানার উপপরিদর্শক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন ওই বছরের ৩০ এপ্রিল আদালতে এজাহারভুক্ত সব আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরে আসামিরা আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনে মুক্ত হন। তবে আসামি শামীম আওয়ামী লীগ নেতা মমতাজ উদ্দিন হত্যা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে ছয় বছর ধরে কারাগারে আছেন।
১০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ২০১৬ সাল থেকে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ ছিল। রায়ের পর নিহত ব্যক্তির মামা আদালত প্রাঙ্গণে প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁরা রায়ে সন্তুষ্ট হয়েছেন। ন্যায়বিচার পেয়েছেন।’
আসামিপক্ষের আইনজীবী আতিকুল্লাহ বিশ্বাস ও আবদুল খালেক বলেন, তাঁরা রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।
রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী কৌঁসুলি মাসুদ হাসান বলেন, ‘এটা একটি চাঞ্চল্যকর ও স্পর্শকাতর হত্যাকাণ্ড। দীর্ঘদিন পরে হলেও আদালতের রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’