কক্সবাজারের টেকনাফের মেয়ে লাকিং মে প্রেমের কারণে বেরিয়ে যাননি, তাঁকে অপহরণ করার পর হত্যা করা হয়েছে। সাত সদস্যের একটি নাগরিক দল কক্সবাজার ও টেকনাফ এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন শেষে আজ এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা তুলে ধরেন।
‘লাকিং মে চাকমার ঘটনাপ্রবাহ’ শীর্ষক সরেজমিন প্রতিবেদনটি রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ সম্মেলনকক্ষে তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত ২৭ ও ২৮ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে সাত সদস্যের একটি নাগরিক দল কক্সবাজার ও টেকনাফ এলাকায় যান। তাঁরা লাকিং মের বাড়ি পরিদর্শন, স্বজনদের বক্তব্য, স্থানীয় প্রশাসনের বক্তব্য, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বাড়ি পরিদর্শন শেষে প্রতিবেদনটি তৈরি করেন।
গত ৯ ডিসেম্বর আতাউল্লাহর ঘরে মারা যায় লাকিং মে। এর দুই দিন আগে সে জন্ম দেয় একটি কন্যাসন্তানের। গত ৯ ডিসেম্বর থেকে লাকিং মের লাশ কক্সবাজার সদর হাসপাতালের হিমঘরে পড়ে ছিল। গতকাল সোমবার তার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। নিরাপত্তার কারণে গতকাল লাকিং মেকে টেকনাফের চাকমা পল্লির পরিবর্তে কক্সবাজারের রামুর কেন্দ্রীয় বৌদ্ধমন্দিরে সমাহিত করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদন তুলে ধরেন কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফারাহ তানজিম। তিনি বলেন, লাকিং মের স্বজন, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁকে অপহরণ করা হয়েছিল। অপহরণের পর জোরপূর্বক ধর্মান্তর, বিয়ে হয়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের এখনই জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই ঘটনায় পাঁচটি অপরাধ হয়েছে। এগুলো হলো লাকিং মে চাকমাকে অপহরণ, ধর্মান্তরকরণে বাধ্য করা, অপ্রাপ্তবয়স্ক বিয়ে করা, ধর্ষণ ও আত্মহত্যায় প্ররোচিত করা।
সংবাদ সম্মেলনে মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বলেন, ‘লাকিং মের সঙ্গে যা হয়েছে, দেশে এ ধরনের ঘটনা অসংখ্য ঘটছে। এটিও তেমন একটি ঘটনা। লাকিং মে চাকমার ঘটনায় অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাদেকা হালিম বলেন, ‘বহু জাতিসত্তার মানুষের বসবাস এই দেশে। অথচ সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার দিকটি ভঙ্গুর। এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি কাম্য নয়।’
অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এলারডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, ‘এমন ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে পুলিশ মামলা নেয় না। মামলা নিলেও তদন্ত ঠিকমতো হয় না। সংখ্যালঘু হলে অবহেলার মাত্রা আরও বেশি হয়। লাকিং মের ক্ষেত্রেও এটি হয়েছে। তাঁকে অপহরণের পর হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের অপরাধ শনাক্ত করে দ্রুত শাস্তি ও জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।’
লাকিং মে চাকমার বাড়ি টেকনাফ উপজেলার সমুদ্র উপকূলীয় বাহারছড়া ইউনিয়নে। তাঁর বাবার নাম লাল অং চাকমা। লাকিং মে স্থানীয় শাপলাপুর উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণিতে পড়ত। পরিবারের অভিযোগ, এক বছর আগে গত বছরের ৫ জানুয়ারি স্থানীয় যুবক আতাউল্লাহর নেতৃত্বে কয়েকজন অপহরণ করেন তাকে। পরে কুমিল্লায় নিয়ে জোরপূর্বক ধর্মান্তর ও বিয়ে করেন আতাউল্লাহ।
অভিযোগ উঠেছে, এ ঘটনায় প্রথমে মামলা নেয়নি পুলিশ। পরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হলেও সে মামলার তদন্তে গাফিলতি ছিল পিবিআইর। এরপর গত বছরের ৯ ডিসেম্বর লাকিং মের দেহ পাওয়া যায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে।
সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের প্রতিনিধি শাহনাজ সুমি। আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক দীপায়ন খীসা, এলআরডির রফিক আহমেদ সিরাজী, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ঢাকা মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদক দীপায়ন খীসা প্রমুখ।