করোনা সংক্রমণ রোধে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করার নির্দেশনা থাকলেও মানছেন না লঞ্চমালিকেরা। বরং প্রতিদিনই অধিক যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে লঞ্চগুলো। ফলে কোনো যাত্রীর পক্ষে দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না। করোনায় সংক্রমিত হওয়ার সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে তাঁরা যাতায়াত করছেন। লঞ্চ চলাচলের প্রথম দিন থেকে আজ শুক্রবার পর্যন্ত সদরঘাটে সরেজমিন দেখা যায়, লঞ্চগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রী পরিবহন করছে না।
বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক (ট্রাফিক) রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রী পরিবহন করার জন্য লঞ্চগুলোকে ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল গত ৯ মে। লঞ্চ মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিআইডব্লিউটিএর নির্দেশনা মানা হচ্ছে কম। উল্টো লঞ্চের যাত্রীভাড়া বাড়ানোর জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছেন লঞ্চমালিকেরা।
এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনার সংক্রমণ রোধে ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচলের নির্দেশনা আমরা আগেই দিয়েছিলাম। কিন্তু বাস্তবতা হলো, অনেক ক্ষেত্রে সেসব নিয়ম মানা হচ্ছে না। যে কারণে আগামী রোববার আলোচনা সাপেক্ষে প্রতিটা লঞ্চ কত যাত্রী নিতে পারবে, তা আমরা নির্ধারণ করে দেব। অর্থাৎ একটা লঞ্চ কতজন যাত্রী নিতে পারবে, তা আমরা সুনির্দিষ্ট করে দেব।’
স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চগুলো চলাচল করছে দাবি করে লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মাহবুব উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটি জাহাজে (লঞ্চে) যে পরিমাণ জায়গা থাকে, সেই স্পেসে ক্যাপাসিটি অনুযায়ী যদি যাত্রী তোলা হয়, তাহলেও স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব। আমরা সেটাই করছি। জাহাজের ভেতর অনেক স্পেস। জাহাজের ক্যাপাসিটি অনুযায়ী ফিজিক্যাল ডিসট্যান্স (শারীরিক দূরত্ব) বজায় থাকবে। কিন্তু যাত্রীরা যদি দূরত্ব না মেনে চলেন, সে ক্ষেত্রে আমাদের কী করার আছে। আর যদি সীমিতসংখ্যক যাত্রী নিয়ে চলতে হয়, তাহলে লঞ্চের ভাড়া বাড়াতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। আমরা তো সাত দিন কম যাত্রী নিয়ে চললাম। আমাদের অনেক লস হয়েছে। আমরা যদি জাাহজে তেল কিনে দিতে না পারি, তাহলে জাহাজ অটোমেটিক্যালি বন্ধ হয়ে যাবে।’
বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান জানান, লঞ্চের ভাড়া বাড়ানোর ব্যাপারে লঞ্চ মালিক সমিতির পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ভাড়া বাড়ানোর ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএর টেকনিক্যাল কমিটি কাজ করছে। ওই কমিটির প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিআইডব্লিউটিএর সদরঘাট অফিস থেকে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে লঞ্চগুলোকে চলাচলের জন্য মাইকিং করা হয়। সদরঘাট বিআইডব্লিউটিএ অফিসের সারেং এস এম মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচলের জন বারবারই মাইকিং করা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের নির্দেশনা মানা হচ্ছে কম।’
লঞ্চ চলাচলের প্রথম দুই দিন লঞ্চে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার কম থাকলেও বর্তমানে তা বেড়েছে। মাস্ক ছাড়া লঞ্চঘাটে প্রবেশ করানোর ক্ষেত্রে কড়াকড়ি রয়েছে। তবে লঞ্চগুলো তাদের ইচ্ছেমতো যাত্রী তুলছে। বরিশালগামী একটি লঞ্চের সহকারী নজরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘লঞ্চের ধারণক্ষমতা অনুযায়ী যাত্রী পরিবহন করছি আমরা। আমাদের লঞ্চের ধারণক্ষমতা আছে ৫০৭ জন যাত্রী নিয়ে চলাচল করার। আমরা বারবার বলা সত্ত্বেও যাত্রীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে না।’