কক্সবাজার সফরে তিন কূটনীতিক

রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য সহায়তা অব্যাহত থাকবে

৩ ও ৪ মার্চ সফরকালে প্রতিনিধিরা একটি দুর্যোগপ্রস্তুতি প্রকল্প, খাদ্যসহায়তা কার্যক্রম, একটি শিক্ষাকেন্দ্র ও একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিদর্শন করেন
ছবি: সংগৃহীত

অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার এবং জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতদের সমন্বয়ে গঠিত একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের শরণার্থী সেবা কার্যক্রমে ধারাবাহিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। বাংলাদেশ সরকার এবং কক্সবাজারে আশ্রয়দানকারী জনগোষ্ঠী ও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তাদানকারী আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে দলটি আলোচনা করে এ আশ্বাস দেয়।

ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস আজ শনিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ৩ ও ৪ মার্চ সফরকালে প্রতিনিধিরা একটি দুর্যোগপ্রস্তুতি প্রকল্প, খাদ্যসহায়তা কার্যক্রম, একটি শিক্ষাকেন্দ্র ও একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিদর্শন করেন এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প ও আশ্রয়দানকারী জনগোষ্ঠীর মধ্যে কোভিড-১৯ মোকাবিলা কার্যক্রমে তাঁদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন।

২০২০ সালের অক্টোবরে রোহিঙ্গা কার্যক্রমের দাতা সম্মেলনের পর এটিই প্রথম সফর। উক্ত সম্মেলনে আশ্রয়দানকারী জনগোষ্ঠী ও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য অতিরিক্ত প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ডলারের ত্রাণ তহবিলের সংস্থান হয়েছিল।

২০১৭ সালে মিয়ানমারে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে এই সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সহযোগিতা দিয়ে আসছে। সেই সময়ে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ও আশ্রয়দানকারী জনগোষ্ঠীর জন্য মানবিক সহায়তা হিসেবে অস্ট্রেলিয়া ২৪০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থসহায়তা দিয়েছে, জাপান দিয়েছে ১৪০ মিলিয়ন ডলার এবং বাংলাদেশের আশ্রয়দানকারী জনগোষ্ঠীসহ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য যুক্তরাষ্ট্র এক দশমিক দুই বিলিয়ন ডলারের সহায়তা নিয়ে সাড়া দিয়েছে।

কূটনীতিক প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশ সরকার এবং ইন্টার সেক্টর কো–অর্ডিনেশন গ্রুপ (আইএসসিজি), বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি, জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর), আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম), জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ), বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের (আরআরআরসি) দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও দেখা করেছেন। আন্তর্জাতিক এই মিশনের নেতারা তাঁদের পৃথক মন্তব্যে আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থাগুলোর মধ্যে শক্তিশালী সহযোগিতা এবং এই সংকট নিরসনে তাদের চলমান প্রতিশ্রুতির বিষয়গুলো তুলে ধরেন।

২০১৭ সালে মিয়ানমারে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে এই সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সহযোগিতা দিয়ে আসছে

অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনার জেরোমি ব্রুয়ার বলেন, ‘বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানের জন্য বাংলাদেশের প্রতি আমাদের জোরালো সহায়তার কথা পুনর্ব্যক্ত করতে চাই।’

জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আমাদের সহায়তা আরও ত্বরান্বিত করা এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার করার উদ্দেশ্যে আমরা এই যৌথ মিশনে যুক্ত হয়েছি।

ক্সবাজারে মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি রাখাইন রাজ্য থেকে বিতাড়িত জনগোষ্ঠীকে অতি সত্বর ফিরিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে জাপান কাজ করে যাবে। কেননা, এই সংকটের স্থায়ী সমাধান বের করা একটি অবারিত ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক গঠনের লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় শরণার্থী বা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তা ও আশ্রয় দানকারী জনগোষ্ঠীর কথা ভুলে যায়নি। শরণার্থীদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদে, মর্যাদার সঙ্গে ও স্থায়ীভাবে ফিরিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য মিয়ানমারকে উৎসাহিত করতে আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে অব্যাহতভাবে কাজ করব।’